দোঁহা

অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের কবিতা



আবহ

এই যে এতো অবহেলা,
শোকের অপেক্ষা করো, ব্যথাকে উদযাপন করো

তবুও তো রয়ে গেছি যেন আবহসঙ্গীত

তোমার মাথার পাশে রেখেছি সরোদ, ভোরবেলা

কী সেই পরিচয়? কী নাম ধরে ডাকো বিগ্রহ!

নাকি এক ঢেলা মাটি খড়ের গা থেকে খুলে খুলে আসি,

কীভাবে রয়ে গেছি! আশ্চর্য লাগে

এ লেখা প্রার্থনা—

সপাং চাবুক মারো, পারো যদি খানখান করো



নিঃস্ব

প্রতিটি কাব্যগ্রন্থেই একটা নিঃস্ব কবিতা থাকে—

ভালবাসা না পাওয়া, স্যাঁতসেঁতে একটা কবিতা,

পাঠকের জানলা থেকে সে উড়ে যায়,

বসে কোনো লেজঝোলা পাখির ঠোঁটে,

প্রতিটি ঘরেই একটা একলা মানুষ থাকে—

বিকেল বাগানে সেই পাখি তার কাছে আসে।




উন্মাদ

ইচ্ছে করে তুচ্ছ হই, ছাই ছাই আলো

ভ্রম, তারই সম্মুখে—কতটুকু পেয়েছি দুঃখের মতো শুদ্ধ

কোনো জল?

হাওয়ায় উড়ছে খই, কারা যেন কীর্তন সাজে—

সে জলে স্নান করি, পুণ্যস্নান,

কাঁপি, আরও জল, আরও জল,
জলে ডুবে মরি শেষে

আমার যা-কিছু পাপ, সে তোমারই দোষে

2 মন্তব্যসমূহ

  1. অর্ণব মুখোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক বাংলা কবিতায় চেঙ্গিজ খানের মত ধুন্ধুমার বাঁধিয়ে দেওয়া এই কবির 'আবহ' কবিতাটি পাঠ করে অবশতনু হয়ে পড়তে হয়। কত যত্নে প্রতিটি শব্দকে মায়াসুতোয় গেঁথে তৈরী করা হল...এক আশ্চর্য আলোর আলোয়ান, যে চিনিয়ে দিয়ে গেল কবোষ্ণতা। একটি কবিতা পাঠ করে যদি প্ল্যাটফর্মের অন্ধ ভিখিরির বাজানো বাঁশির সহজ সুরের আশ্রয়ে না ক্ষরণের কারণ হয়ে উঠতে পারা গেল, তবে সে কবিতার কোন সাঁকো নেই, কোন সাযুজ্য নেই (অবশ্য পাঠকভেদে এই উপলব্ধির ব্যাতিক্রম থাকতেই পারে)।
    এই যে প্রত্যেকটি পংক্তি উৎকীর্ণ হয়ে রয়েছে পরবর্তীটির জন্য, এই যে উচ্চারণের সানুতলে দাঁড়িয়ে আন্দাজ করা যাচ্ছেনা শীর্ষের অভিমুখ, অথচ শেষ করার পর অবরোহ বেয়ে গড়িয়ে আসা একটি বিভাব গোলক গড়িয়ে চলে যাচ্ছে, আর যেতে যেতে ছেড়ে রেখে যাচ্ছে একটা অনপনেয় দাগ, তার কাছে বাধিত রইল আমার সব কৌশল ও শৈলী, প্রকরণ ও প্রবৃত্তি, অলীজ ও অমায়িক সকল কথারা...আমি উজাড় হওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম, কবিতার জাদুকর যে বাসনাকুসুম থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিল, তার দ্যোতক হওয়ার জন্য এটুকু খেসারত তো দিতেই হয়...

    উত্তরমুছুন
  2. আপনার এই মতামত ও আলোচনার কাছে আমি অবশতনু হয়ে আছি। জানি না এই লেখা এই প্রশংসার যোগ্য কি-না । আমার শ্রদ্ধা ও প্রণাম নেবেন।

    উত্তরমুছুন
নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন