দোঁহা

কুহেলি করের কবিতা


 


থেকে যাও আবারও যাওয়ার আগে

১)

এখন দক্ষিণ ভারতে জীবনের অভাব। দিন শুরুই হয়, "জলপাই কোথা" দিয়ে। বঙ্গীয় রমণীদের যে কেন এতো চোখের জল, তা আমি আজও বুঝি না। সে যাক গে। কাজে তো লেগে যায় রঙ মুছতে, দাগ আড়াল করতে। যেমন দিন শুধুই যায়না। দিন ও রাত্রি বারবার ফিরেফিরে আসে। এ জন্মে এখনও জলের অভাব বোধ করিনি৷ পলাশে, শিমুলে,এই কংক্রিটের শহরে পাঁজরে দ্বার ভাঙে। পলাশের মালা পরিয়ে, সেদিন 'বিচ্ছেদ' বলেছিলে।

২)

তৎক্ষণাৎ বুঝে ওঠা হয়নি, তুমি আর কী কী বলতে অথবা বোঝাতে চাইছিলে। আসলে মনেই ছিল না এক বসন্তে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, তুমি সিঁদুর মিশিয়েছিলে লাল আবিরে আমার ললাটের উদ্দেশ্যে।  তাছাড়া মনেই থাকেনা; দাগ, রঙ খারাপ না কি ভালো। তবে জানি ও মানি, প্রতিটি বসন্তের অপর নাম হেমন্তগত।

৩)

জানতে না? নিশ্চয়ই জানতে। বসন্তের সব রঙেই কিন্তু তোমার, আমার, সবার থেকেও বেশি, হৈমন্তীর চলাচল। বায়নাবিলাসী। পীতাম্বরী। আমাকে লেখা প্রথম চিঠির রঙ যেন। সে জন তোমার প্রাক্তন, ছেড়ে এসেছ সদ্য। তিনি তো সর্বদাই বর্তমান। ফাগুনবউ দিয়ে মালা গেঁথে দিচ্ছেন শীত আর গ্রীষ্মের ক্ষতিপূরণে। আমি একথা বুঝে গিয়েছি। গায়ে মেখেছি অলক্ষ্য রঙ, মর্মে জেগেছে বিচ্ছেদ। কিন্তু সেই বর্তমানকে মনে রেখেই, আগলেছি। নির্দ্বিধায়। নিঃসন্দেহের যাপনে‌। সে'বারে মনে হল সিঁথি কেটে দিলে। এমন অধিকার আমি তো শালুককেও দিইনি। কিন্তু তখন যে আমার মায়ের মেয়ের মাধ্যমিক।

৪)

ফলাফল? জানা যায়নি। ফলত মেয়ের সকল বন্ধুর গালে সবুজ আবির এবং তাঁদের মায়েদের গালেও। আমার মাতৃত্ব যেন স্থির হয়ে হোঁচট খেল। আঁচ পেলাম, চাক্ষুষ। ওদের আর সিঁথি কাটা হয়নি। উন্নয়ন হচ্ছিলো বোধহয় তড়তড়িয়ে। চিরসবুজের লোভে। আমার প্রিয় রঙ হল রক্তের, তাই কি লাল আবির এনেছিলে? মতলববাজি যতই অন্য হোক। টিনেজারদের গরমি আলাদা থাকে। কোকিলের কীর্তন, আমাদের দু'জনেরই প্রিয় ছিল। ঘুমভাঙানিয়া। নিষ্পাপ সুর। তেমনই তুমি, আমি, আমরা। দুঃখজাগানিয়া। বিচ্ছেদ হয়েছে, তাল কেটে মননে রঙীন ঘোর লেগেছে। বাকবিতণ্ডার থেকে আমি বরাবরই অনেক দূরে।

৫)

আরেক দিকে বাংলা পক্ষ এখন পুরুলিয়াকেও ছাড়ছে না, কোথায় পাই বলো তো তোমার জন্য রেঁধে আনা বিপ্লব‌; শিমুল, পলাশ? বিনিসুতোর মালা ভুলে, পলাশে পেয়ে‌ছে। ক্লান্ত হয়ে যাই, ক্রোধ নয়। এই ভেবে যে কতো ভুল বসন্ত হয় কিন্তু বসন্ত তো কখনও ভুল নয়। লুকোনো হেমন্তের প্রেমে এখনও বুঁদ। আজও। মাতাল সমীরণে। যেই দোলা লাগলো  তখনই দুঃখদিনের রক্তকমল ছাড়িয়ে তুমি পৌঁছালে রঙের ছড়া নিয়ে। এতো ছন্দপতনের মাঝে, তোমার জন্য আমার আজও সঙ্গতিশীল কবিতা লেখা হয়নি। আমাদের সেতুর নাম বসন্ত। শীত-গ্রীষ্মের মিলনস্থল। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সেতুও ঋতুচক্রের সান্নিধ্যে ক্ষণস্থায়ী।
কিন্তু সর্বোপরি, মিলন হয়েও কখনও কখনও সেই কাঙ্খিত প্রেম আর হয়না। যেমন কাক-কোকিলের ভালোবাসা, অপ্রেম। আদপে বসন্ত ভুলই হয়, শুধুই জুলুম।

৬)

তবুও মনে করি, আবির ছড়াতে ছড়াতে, বসন্ত আসে। সমস্ত রঙই অনুঘটকের কাজ করে। খেলবো হোলি, রঙ দেব না। হয়না। এই মোহ নিয়েই আজীবন অশান্তি ভোগ করে, মরতে চাই। দ্বার খোলো। থেকে যাও।


যে মেয়েটার সকাল সকাল সাঁঝদুপুর, তাকে...

১)

কুহকিনীর জালের অন্তরালে
অবগুন্ঠিত মৃতপ্রায় জীবসত্তা থেকে-
প্রস্ফুটিত সদস্য বসন্তের যুবতী।

২)

কপোল বেয়ে এসছে প্রাচ্যের অন্ধকার।
ছোট্ট ছোট্ট সদ্য জন্মানো শিশির কুঞ্জ;
চিবুক পাশ্চাত্যের সূর্যরশ্মী দ্বারা নির্দিষ্ট।
সে আজ কলম ধরেছে।

৩)

আসলে হ্যাঁ, এই ভালো থাকাটা খুব নিজের নিজের ব্যপার-
সকলে বোঝেনা।

৪)

এই তিরতিরে সভ্যতার রেলিং এ দাঁড়িয়ে,
বলতে পারো তুমি জানতে?
রক্তকরবী এখানেই থাকে।
তুমি জানতে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন