রোহন রায়
-বাড়িতে ডেকে এনে এসব কী নাটক শুরু করলেন বলুন তো?
-আরে সোজা কথাটা বুঝতে পারছ না? পলিটিকাল ঝামেলায় মরলে বাড়ির লোক তো চাকরি পাবে, নাকি!
-আপনার মাথাফাথা খারাপ হয়ে গেছে! বাড়ির লোকজন কোথায় সব? বউদি কোথায়?
-বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
-আপনি…! আপনি কী বলছেন বুঝতে পারছেন? একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন।
-আমার আর কোনও উপায় নেই ভাই বিশু। পিঠের নিচটায় এখানটায় শক্ত গুটলিমতো হয়ে গেছে। কী ব্যথা! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর গার্ডের কাজ করতে পারব না। আর কিছুই করতে পারব না আমি। ছেলেটার একটা কিছু না হলেই নয়। কথাটা বুঝতে পারছ না কেন? চিরকাল কি কেউ থাকে? একটু আগে আগে মরলে যদি চাকরিটা হয়ে যায়, মন্দ কী! তবে একদম পলিটিকাল মার্ডারের মতো দেখাতে হবে। সেইজন্যই বুকের ওপর লিখে দিতে বলছি। বুঝতে পারছ?
-শুনুন শুনুন, এইসবের দরকার নেই। আমি নানুদাকে বলব, আপনার ছেলের একটা কিছু হয়ে যাবে ঠিক।
-হবে না। হবার হলে এতদিনে হয়ে যেত। পুরনো লোকজনকে পার্টি আর পোঁছে না। অচল পয়সা হয়ে গেছি। এতদিন পার্টি করে এই পেলাম। ধর্মপথে চাকরি পেতে গেলেও দেড় লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে। ছেলেটা লেখা-পরীক্ষা পাশ করে বসে আছে। টাকা না দিলে চাকরি হবে না। এত টাকা কোত্থেকে দেব বলো তুমি?
-আপনি চলুন আমার সঙ্গে। এখনই চলুন নানুদার অফিসে। আমি কথা বলব। নানুদা আমার কথা শোনে।
-না ভাই। একবার কথা বলতে গিয়ে যে ব্যাভার পেয়েছি…। বিরাট বড় বড় নেতা হয়ে গেছ তোমরা। সেসব দিন তো দ্যাখোনি। সমীর মাইতির সময় এমন দিন যেত না যেদিন আমাদের পার্টির কারও না কারও স্যাটা ভাঙেনি। সেখান থেকে আমি, নিতাইদা আর সনাতন-তিনজন মিলে কীভাবে পার্টির বেস তৈরি করেছি, জানো কিছু? তোমাদের তখনও দুধের দাঁত পড়েনি। এই যে হাতে কাটা দাগটা দেখছ, এটা কীসের দাগ জানো? রবীন পাড়ুই ছুরি চালিয়েছিল। তোমরা এখন সব বড় বড় নেতা হয়ে গেছ, আমাদের আর ডাকো না। বিরাট বড় বড় নেতা হয়ে গেছ সব!
-আপনি একটু শান্ত হোন। শান্ত হয়ে বসুন তো একটু। বসুন। আপনাকে কিচ্ছু বলতে হবে না বলছি তো। যা বলার আমি বলব। আমার দায়িত্ব। আপনি শুধু চলুন।
-আর নয়। অনেক হয়েছে। শরীরের অবস্থা তো দেখছ। ব্যথায় উঠতে বসতে পারি না। ঘুম হয় না ঠিকঠাক। এইভাবে আর কদিন চলবে বলো? কবে ভ্যাট করে মরে যাব! তার চেয়ে এটা ভালো না?
-তপনদা, কেন এর’ম করছেন মাইরি?
-তুমি এত কথা বলছ কেন? টাকা নেবে কাজ করবে। তোমার এত কথায় কী কাজ! আরও টাকা চাই? ঠিক আছে আমি তোমায় আরও দু হাজার দেব। পুরো এগারো। আর পারব না, বিশ্বাস করো। আর নেই। থাকলে দিতাম।
-আমার চাই না টাকা। আমায় মাপ করুন। আরে আরে, কী করছেন? উঠুন উঠুন। কী করছেনটা কী?
-আমার এই উপকারটা করে দাও বিশু, তোমার পায়ে ধরছি। আমার আর কোন উপায় নেই বিশ্বাস করো। পলিটিকাল ঝামেলায় মরলে নেতারা আসবে, মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। ছেলেটা চাকরি পাবেই।
-তপনদা, প্লিজ দাদা, আমি তো বলছি কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেব ঠিক। একটু ভরসা করুন। টাকাটা রেখে দিন। একটু শান্ত হয়ে বসুন তো। বৌদির বা ছেলের মোবাইল নম্বরটা দিন দেখি।
-একদম না! খবরদার! আমি আজকে মরবই। কোনও শালা আমায় আটকাতে পারবে না।
-তাহলে আমায় ডাকলেন কেন? শালা নিজে ঝুলে পড়লেই তো পারতেন। আমি কেন?
-নিজে নিজে মরে গেলে যদি কাজ হত, তোমায় বলতাম? আমি কে? আমার কোনও অওকাদ আছে? তুমি জানো না? কেউ পোঁছে আমায়? আমার মতো চুনোপুঁটিকে মেরে অপোনেন্ট কেন শুধুমুধু হাত গন্ধ করবে? লোকজনকে খাওয়ানো যাবে গপ্পটা? সেইজন্যই বলছি, বুকে লিখে দিতে হবে। নাহলে গপ্পটা খাবে না কেউ, বুঝছ না?
-আমি পারব না তপনদা। আমায় ছেড়ে দিন। প্লিজ। আমি পারব না।
-কেন? তুমি টাকা নিয়ে খুন করো না? তাহলে আটকাচ্ছে কীসে? আমি তো দিচ্ছি টাকা। ছেলেটার চাকরি হয়ে যাবে, একটু বোঝো। আমার এইটুকু উপকার করো। কী বললাম মনে আছে তো? সিধে গলায় চালিয়ে দেবে, তারপর জামাটা খুলে নিয়ে বুকে ‘জয় শ্রীরাম’ লিখে দেবে। ব্যাপারটা পলিটিকাল মার্ডারের মতো দেখাতে হবে, বুঝলে না? পারবে তো ছুরি দিয়ে লিখতে? গোটা গোটা করে লিখবে। দেখে যেন বোঝা যায়। তোমায় দু হাজার টাকা এক্সট্রা দেব বিশু। তোমার পায়ে ধরছি। ছেলেটার চাকরি হয়ে যাবে, একটু বোঝো।