দোঁহা

জনি সোকো অ্যান্ড হিস ফ্লাইং রোবট




সুকন্যা সাহা
 
একমনে ট্যাবের ক্যালেন্ডার অ্যাপসের ওপর স্ক্রল বার ঘোরাচ্ছিল গোগল। ঘুরতে ঘুরতে নিজের জন্ম সালের ওপর এসে  থামল কার্সার। গোগলের বয়স এখন দশ বছর। এটা ২০৪০ সালের নভেম্বর মাস। তার মানে আজ থেকে ঠিক ৬০ বছর আগে লেখা ওই ডায়রিটা...

এমন সময় বেজে ওঠে দরজার  কলিংবেল; বিন্দু মাত্র চাঞ্চল্য দেখা যায় না গোগলের মধ্যে...ও জানে দরজার আই হোলের সঙ্গে লাগানো ওয়েব ক্যামে ফুটে উঠবে আগত আগন্তুকের মুখ। সেই ওয়েব ক্যাম আবার সরাসরি তার ট্যাবের সঙ্গে কানেক্টেড। সে আগন্তুককে চিনতে পারলে প্রেস করবে  রোবোর বাটনে; রোবো গিয়ে দরজা খুলে দেবে। রোবো হল হিউম্যানয়েড রোবট। রোবোই এ বাড়ির সব বলা যায়; মেইড সার্ভেন্ট টু ফ্রেন্ড ফিলসফার অ্যান্ড গাইড অফ গোগল। সিঙ্গাপুরের এই চৌত্রিশ তলার ওপরের ফ্ল্যাটে গোগল সারাদিন প্রায় একাই থাকে। সঙ্গী বলতে শুধু রোবো; রোবো যে শুধু কাজকর্মেই অত্যন্ত দক্ষ তাই নয়; অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী রোবোর চিন্তাশক্তিও রয়েছে, মানুষের মতোই...এটাই বাঁচোয়া; গোগলের বাবা থাকেন দুবাই চাকরীর সূত্রে, মার অফিস  অবশ্য সিঙ্গাপুরেই; তবুও তার  ফিরতে ফিরতে প্রায় প্রতিদিনই রাত নটা বেজে যায়। এই যুগে  স্কুল শব্দটাই বিলুপ্ত হয়ে  গেছে...এখন স্কুলিং ফ্রম হোম বেশ  জনপ্রিয়। কম্পিউটারে অনলাইন কোর্সের ডাটা ফিড করা থাকে; সুবিধা মত কম্পিউটারের সামনে  বসে পড়লেই হল...অনলাইন টেস্ট দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে...কোনো বাঁধা ধরা স্কুল আওয়ার্স নেই...বেশ মজা! বাচ্চাদের   এখন আর 'আই কিউ' মাপা হয় না; 'ই কিউ' মাপা হয়, ইমোশনাল কোশেন্ট। জোজো এসেছে, গোগলের নির্দেশ অনুযায়ী দরজা খুলে দিয়েছে রোবো। জোজোকে সেই ডেকেছিল মোবাইলে। জোজো তার বুজুম ফ্রেন্ড। উদ্দেশ্য মরক্কো চামড়ায় বাঁধানো হলুদ হয়ে যাওয়া ডায়রিটার  মর্মার্থ উদ্ধার করা। মায়ের কাছে শুনেছে দাদু  নাকি সেই সময়কার একজন প্রখ্যাত সায়েনটিস্ট ছিলেন। সেই ১৯৮০ সালেই তিনি রোবোট তৈরির  ওপর গবেষণা করেন। এই ডায়রিটা মায়ের আলমারিতে   অনেক যত্নে তোলা ছিল। কালই আলমারি হাঁটকাতে  গিয়ে এটাকে  আবিষ্কার করে গোগল। তবে সবচেয়ে  মুশকিল হল ডায়রিটা আদ্যন্ত  বাংলায় লেখা...বাংলা খানিকটা  বলতে পারলেও পড়তে বা লিখতে একেবারেই পারে না গোগল। তাই  জোজোর শরণাপন্ন হওয়া। পাতায় পাতায় শুধু ডেটটা ছাড়া  আর সব কিছু বাংলায় লেখা; সেই ডেট টা দেখেই গোগল বুঝতে পেরেছে ডায়রিটা ১৯৮০ সালে লেখা। জোজোকে দেখায় গোগল ডায়রিটা...জোজো বাংলায় মোটামুটি সড়গড়। ডায়রিটা একটা গল্পের আকারে লেখা...জাপানের একটি ছোট্ট ছেলে জনি সোকো এই গল্পের  নায়ক; সে একটা রোবোট বানায়, রোবোটটা ঠিক রোবোর মত। তার ফ্রেন্ড ফিলসফার অ্যান্ড গাইড। উড়তে পারত রোবোটটা...আর তার কন্ট্রোল রুম ছিল জনি সোকোর হাতের  ঘড়ির মধ্যে...ডায়রিটার হলুদ হয়ে যাওয়া প্রতিটা পাতায় লেগে আছে ১৯৮০ সালের গন্ধ...দু বন্ধু একমনে উপুড় হয়ে গল্পটা  পড়ছিল। কখন যে ঘরে রোবো এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি; ধাতবস্বরে সে বলতে শুরু করে, "তোমরা এতক্ষন যে ফ্লাইং রোবোটের গল্প পড়ছিলে, তিনি আমার দাদু, হি ওয়াজ দি ফার্স্ট রোবোট অফ দি ওয়ার্ল্ড..."


মায়ের ধাক্কায় হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে  যায় গোগলের..."এই গোগল ওঠ ওঠ, কি বিড়বিড় করছিস ঘুমের  ঘোরে? জনি সোকো অ্যান্ড হিস  ফ্লাইং রোবোট? স্কুল আছে না? শিগগিরি ওঠ...আজ  থেকে ওসব সায়েন্স ফিকশানের গপ্পো পড়া একদম বন্ধ।" চোখ কচলে বিছানায় উঠে বসে গোগল... দেখে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে  সকালের রোদ...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন