দোঁহা

তৈমুর খানের কবিতা




দেশভাগ 

খুব আনন্দে দেশ ভাগ হয়ে গেল
আমরা তখনও ছিলাম
মিছিলেও হেঁটেছিলাম, স্লোগানেও…
তবু হাওয়া বয়ে গেল
হাওয়ায় উড়ল দুটি পতাকা
পতাকায় লেখা হল দুটি ভিন্ন নাম

ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত আমাদের খেতে দিল
দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষ মাখা ভাত
পানির বদলে এনে দিলে ধর্মের মদ
নেশাগ্রস্ত আমরা বেহুঁশ সবাই

এখনও অর্ধমৃত, প্রতিরাতে কাতর সন্দিহান
বেঁচে উঠব নাকি অথবা মরে যাব
ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে আসে নীলহৃদয়
একাকিত্বের দাহ থেকে জন্ম নেয় দীর্ঘশ্বাস
এতবার ডাকতে থাকি প্রতিবেশীদের
এতবার ঘোষণা করি: আমি তোমাদেরই লোক
তবুও শোনে না কেউ; অস্ত্র শান দেয়
মঞ্চে উঠে বলে যায় : বিশ্বাসঘাতক!


কাঁটাতার

এখনো রক্ত বয়ে যায়
এখনো হৃদয় ভেসে ওঠে পদ্মের মতো
এখনো ভাষার পাখি ডাকে
আমাদের দিনান্ত প্রাত্যহিকে
চেয়ে চেয়ে দেখি অদ্ভুত জানালাগুলি খুলে
মৃত আত্মারা হাত নাড়ে

কত দূর কে কোথায় গেছি?
আমরা মানুষ নেই তবে?
ধর্মে ও জাতে আত্মবিনাশী সবাই?
খণ্ড ভূখণ্ডে শুধু বিপন্ন আঁধারে
আমরা সবাই তবে আঁধার বিলাসী?
রাস্তা হারিয়ে গেছে সহিংস রাস্তায়...

মানচিত্রের দিকে হেঁটে গেলে শুধু কাঁটাতার
এপার চেঁচায়, ওপার চেঁচায়, প্রতিধ্বনি ওঠে
এপারে ওপারে ঝরে পড়ে সীমাহীন কাতরানি
ভাঙা ইতিহাস, খণ্ড খণ্ড দেহ
দেহের নামও বাংলা, আত্মাও বাংলার
বাংলা জুড়েই নামে ফেব্রুয়ারি জ্বর...


অস্বীকার

অস্বীকার লিখে আসি রোজ
অস্বীকার লিখতে লিখতে
এক জীবন হয়ে যায় পার

হৃদয় কি ভাগ করা যায়?
আবেগের নদী প্রেমের তরণী ভাসায়
উঠে পড়ো যাত্রী সব যুগান্তের দিকে

দুকূল প্লাবিত উচ্ছ্বাসে আমাদের গান ভিজে যায়
লালনকে পাশে নিয়ে দেখি সারারাত
আমাদের গৌরব আজ লাঞ্ছিত ক্রীতদাস

ফিরিয়ে দাও কল্যাণের বীণা
সম্পর্ক ফিরুক তবে মানবিক উৎসবে
দূরত্ব নিকটে আসুক, মুছে যাক সমস্ত ছলনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন