দোঁহা

তাপসী লাহার কবিতা


 
 
বিভ্রান্তি 
 
তাই গেছো ফিরে তোমার দেশে, 

শয়ে শয়ে লোকের মিছিলের মাঝে অস্পষ্ট  মুখ, শূন্যতার হিম নিয়ে ফিরে গেছো 

যেখানে তোমার জন্মই হয়নি!

পাখি ডাকা কোন সকালে
 জেগে ওঠনি মন ভালো করা আলোর বিভায়,
 
উনান জ্বেলে মা রাঁধেনি দুপুরের ভাত-

উনুনের ধোঁয়া আর ভোরের কুয়াশায়  আঁচলভেজার রুপকথা

আদুল গায়ে ঠাকুমার ডাক, 
'অ খুকি, দে তো পিঠখান  চুলকে
নস্যির কৌটাখান দে বউ'

দৌড়ে এসে বাবার হাতে গুজে দেওয়া আপিসের পান

কান্না পাচ্ছে 
কোথায় যাচ্ছো তুমি জানো না
সত্যি বলছি মা, আমিও জানি না, শুধু জানি চিরদিনের মত এসব বিদায় নিল আমাদের আটপৌরে জীবন থেকে
একটা দেশ মুছে গেল, একটা দেশ, একটা বাসা, স্মৃতিগুলো, লাল বিদায় নিল সীমন্তিনীর সিঁথি থেকে।

চুপ, চুপ, কাঁদবে না

ভুলে যাও সব, যেতে দাও ওদের। 

না পারলে বড়জোর  নিপাট ভাঁজে তোরঙ্গে  রেখে মাটি চাপা দেবো'খন।
 
 
যাত্রা 

একটার পর একটা পোটলা বোঝাই মাথাটা ঢুকে গেছে ভেতরে

আলাদাভাবে দেখা যাচ্ছে না

দুদিকের দুটো হাত সামলাচ্ছে  সংসার বোঝাই পুটলিগুলোকে

হাতগুলো বেসামাল 

বুকের ভেতর গুপীযন্ত্রটিও
দুপারের  দুটি নদী ভিজে অস্পষ্ট করেছে সামনের পথ। 
পা দুটোই জীবন্ত
বাঁচার মানে খুঁজতে এগিয়ে চলে  আস্ত লাশের ভার নিয়ে
এ যাত্রা  আজকের  নতুন কোন পথ না
মৃত্যু থেকে মৃতবধি কোন অজ্ঞাত লক্ষ্যে, দলে দলে চলা জারী থাকে
রাস্তার দুধারে  মৃত মানুষের মুখ, গবাদি পশু, কোলের শিশুর  কঙ্কাল 
নতুন নয়
মৃত্যু থেকে মৃতবধি এক  অনন্ত বিষাদের ঘোরে আচ্ছন্ন  
আত্মার জেগে ওঠা সমাধি।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন