দোঁহা

দেশভাগ সাম্প্রদায়িকতা ও সাহিত্য



ঋভু চট্টোপাধ্যায়

 ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। একটি রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার মধ্যে দিয়ে জন্ম হয় দুটি আলাদা দেশ। একটি তথ্য অনুযায়ী প্রায় দশ লাখ মানুষ মারা যায় ও প্রায় কয়েক কোটি মানুষ নিজের বাস্তুচ্যূত হয়। আলাদা দেশভাগ নিয়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দুইপ্রদেশ পাঞ্জাব ও বাংলা। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাঞ্জাবে সাদাত হোসেন মান্টো, খুশবন্ত সিংহ, কর্তার সিং দুগাল, খাজা আহমদ আব্বাস, ইসমত চুগতাই বা মুলকরাজ আনন্দের হাতে যেভাবে দেশভাগ ও একটি দেশকে ভেঙে তিনটুকরো করবার যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে সেভাবে হয়ত বাংলাতে উঠে আসেনি, বলে অনেকে মনে করেন। যদিও বাংলায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, হাজান আজিজুল হক, রাজিয়া খান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের হাতে দেশভাগের কষ্ট উঠে এসেছে। দেশভাগ নিয়ে লেখা সাহিত্যকে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি। একভাগে সাহিত্যের মধ্যে উঠে আসে দেশভাগের কারণ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও দ্বিতীয়ভাগে উঠে এসেছে দেশভাগের পরবর্তীকালে উদ্বাস্তু সমস্যা। বাঙালি হিন্দুদের অবশ্য আরেকটি সমস্যা উঠে আসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেদেশে এক শ্রেণির মুসলিমরা পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সাথে সমান্তরালভাবে নিরীর হিন্দুদের উপর আক্রমণ করে। অনেকে সেই সময়েও উদ্বাস্তু হয়ে এই দেশে উঠে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল আমাদের এই বাঙলার তৎকালীন সাহিত্যিকরা এই ব্যাপার নিয়ে প্রায় নীরব থাকেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সেই সময় যেভাবে লেখা হয়েছে সেভাবে হিন্দু উদ্বাস্তুদের যন্ত্রণার কথা উঠে আসেনি। আসলে এই দেশ ভাগের প্রত্যক্ষ প্রভাব ভারতের দুইপ্রান্তে অর্থাৎ বাংলা ও পাঞ্জাবে বেশি হয়েছিল। মানুষ ছিন্নমূল হয়ে শরণার্থী শিবিরে চোখের জল ফেলতে ফেলতে স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করেছিল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার বিভিন্ন সরকারি ইতিহাসের নথিতে এই দেশভাগের রক্তস্নানের কথা সেরকম ভাবে উঠে আসেনি। বিনা অপরাধে হিন্দু মুসলিম শিখ নির্বিশেষে সবার বাড়ির উঠোনে আছড়ে পড়েছে ক্ষোভ, ঘৃণা বিদ্বেষ। ১৯৪৬ এর অগাস্টে কলকাতার হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় নোয়াখালি ও ত্রিপুরায় দাঙ্গা হয়। কিছু মানুষ নিজেদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে রাখলেও বেশির ভাগ আশ্রয়হীন মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় স্বধর্মীদের কাছে। সদ্য বিদেশ হয়ে যাওয়া এক রক্তাত্ব ভূখণ্ডে। এই আশ্রয় অবশ্য স্বধর্মীরা খুব একটা খুশি মনে মেনে নিতে পারেন নি। নির্ভেজাল সরস ইয়ার্কির মধ্যেই প্রকাশিত হয় রক্ষণশীল শ্রেণীর সাথে রিফিউজিদের ঠাণ্ডা ও গরম লড়াই। সমর সেনের লেখাতে এই বৈষম্যমূলক আচরণের কথা ফুটে ওঠে। যদিও এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে এই উদ্বাস্তুদের জন্যে বাংলার অর্থনীতি ও জনসংখ্যাতে বিপুল চাপ পড়ে এবং এই চাপ সামলানোর জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার সেই অর্থে কিছুই করে নি। আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য ছিল জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ভাবে বাঙালিকে দুর্বল করে দেওয়া। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথও ওয়াকিবহল ছিলেন। অন্যদিকে এটাও বলা চলে পাঞ্জাবিরা যেভাবে তাদের দাবি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন বাঙালিরা তেমন পারেন নি। স্বভাবত তাদের ঠিক পশুদের মত কখনো শিয়ালদহ প্ল্যাটফর্ম, কখনো আন্দামান কখনো মধ্যপ্রদেশে পাঠানো হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকদের লক্ষ্য ছিল পূর্ববঙ্গ থেকে সংখ্যালঘু বিতাড়ণের মাধ্যমে বিধর্মী বিতাড়ণ করে পূর্ববঙ্গকে সংখ্যালঘু প্রদেশে পরিণত করা। দুঃখের কারণ হল এই সব ঘটনা প্রবাহের মধ্যে তৎকালীন শাসকদের মনে কোন রূপ পরিবর্তন হয় নি। বাঙালির রক্তক্ষয় কষ্ট মানব মর্যাদার অবনমনে কেন্দ্রীয় পাঠকদের চৈতন্য জাগেনি। এই প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় ভীষণ ভাবে উপেক্ষিত তা হল বাঙালি মুসলিমদের অবস্থান। জানা যায় বাংলায় ৫৪ শতাংশ ও পাঞ্জাবে ৫৭ শতাংশ মুসলিম ছিল। সরকারি ভাবে দুই দেশের মধ্যে হিন্দু মুসলিম জাতি বিনিময়ের কথা বলা হলেও অনেক মুসলিম ভারত তথা বাঙলাতে থেকে যেতে চেয়েছিলেন। তাহলেও তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ মুসলিম গ্রামের দিকে অথবা অপেক্ষাকৃত মুসলিম প্রধান এলাকাতে চলে যেতে বাধ্য হন। ১৯৪৬ সালের পর ১৯৫০ এবং ১৯৬৭ সালেও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। অনেক পরিবার তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে চলেও যান। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে মুসলিমদের উৎখাত করে হিন্দুরা তাদের বাড়ি ঘর দখল করে নেয়। এর মধ্যেও এই দেশভাগ বাংলা সাহিত্যকে কিভাবে নাড়িয়েছে সেটি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি উক্তিতেই পরিষ্কার হয়। তিনি বলেন, ‘দেশভাগ নিয়ে আমার বাবার একটি উক্তি আমার সব সময় মনে পড়ে। ৪৭ এর পনেরোই আগস্ট সকালে বাবা ভাঙা ভাঙা গলায় বলেছিলেন ভারত স্বাধীন হলো আর আমরা আমাদের দেশ হারালাম! সেই হারানোর বেদনা এত বছর পরও বুকের মধ্যে টনটন করে।’

বাংলা সাহিত্যে দেশভাগ মানেই দেশ ফেলে আসার যন্ত্রণা, এর মাঝে যুক্ত হয় উদ্বাস্তু সমস্যা বাস্তুচ্যুতির জন্যে বেদনা বোধ। যদি সুবোধ ঘোষের মত অনেক সাহিত্যিক এই বিষয়ে লিখতে চাননি। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশভাগ ও দাঙ্গা নিয়ে লিখতে হলে নিষ্ঠুর বর্ণনা দিতে হয়, যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। আসলে ভারতে দাঙ্গা শুধুমাত্র হিন্দু মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাঙালি বিহারী, হিন্দু পাঞ্জাবি জাতির মধ্যেও দাঙ্গা হয়েছে। বাংলাতে তুর্কী আক্রমণের পর তৎকালীন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বহু নিম্নবর্ণের হিন্দু মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। সেই সময় শাসক মুসলিমরা ধর্মান্তরের পরবর্তী কালে রাজঅনুগ্রহ লাভের উপর জোর দেন। এরপরেও কিন্তু বাংলায় হিন্দু মুসলিম একসাথেই থাকে এবং ১৯৪৬ সালে অনেক হিসাব বদলে যায় ও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়ে। চতুর ইংরেজ সম্প্রদায় ও এই বিভেদকে বাড়িয়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এই প্রসঙ্গে ভিষ্ম সাহনির ‘তমস’ উপন্যাসের বর্ণনা উল্লেখ করবার মত। এটা আমাদের কাছে লজ্জার যে স্বাধীনতার সাথে দেশভাগ উদ্বাস্তু সমস্যা অতপ্রতো ভাবে জড়িয়ে গেছে। আমরা চেয়েছিলাম এক অখণ্ড স্বাধীন ভূখণ্ড, বিনিময়ে পেলাম তিন খণ্ডের ভূমি সঙ্গে দগদগে ঘা, যা এখনো শুকিয়ে যায় নি, বরং সময়ে সময়ে আরো দগদগে ঘায়ের আকার নিয়েছে। স্বাধীনতা জানান দিয়েছে স্বাধীনতা দুঃখের শেষ করতে পারে না। হয়ত একথা মনে রেখেই জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘সৃষ্টির মনে কথা মনে হয় দ্বেষ।’(১৯৪৬-৪৭) ভারতের স্বাধীনতার সাথে এই দেশভাগ দেশত্যাগ দুটি শব্দই এমন ভাবে উচ্চারিত হয় যেখানে পালিয়ে আসার স্মৃতি ছাড়া আর কোন সাক্ষী থাকে না। এক অনন্ত পথ চলার মাঝে পেরিয়ে আসতে হয় ভিটে মাটি। তারপর সমস্ত পথ একটাও কথা না বলে আমরা হাঁটতে থাকি। (শঙ্খ ঘোষ, দেশান্তর) অন্য দেশে দেশান্তর শব্দের ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। নস্টালজিয়াও স্মৃতির সাথে কষ্টকে উষ্কে দেয়। এই প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাঁকোটা দুলছে কবিতার শেষ স্তবকটি মনে পড়ে। “এপার ওপার স্মৃতিময় একাকার/সাঁকোটা দুলছে এই আমি তোর কাছে।’ ভারতভাগের সাথে জোর করে জড়িয়ে আছে জোর করে দেশত্যাগ করানোর ব্যথা। আসলে সব সময় জন্মভূমি আর দেশ এক হয় না। দেশভাগের প্রত্যক্ষ প্রভাবে যেমন কবিতার সাথে জড়িয়ে আছে তেমনি পরোক্ষ  প্রভাব ও জড়িয়ে। একথা ভুললে চলবে না, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব কখনও এক হয় না। একটা মাটির সংগ্রামে অংশগ্রহণ আর সেই কথা শুনে লেখা দুটো এক নয়। যদিও দুটো শ্রেণিই খুঁজে যায়, ‘যে জীবন দোয়েলের ফড়িংয়ের কেড়ে নিল যারা, দেশ ভেঙে টুকরো হল, সীমান্তের দুপাশে পাহারা।’ দেশভাগের কবিতার মধ্যবর্তী কষ্ট প্রতিবাদ হতাশা আমাদের নুতন করে ভাবতে বাধ্য করে, ‘কাঁটাতার লেখা কেন দুই বাংলা ভাষার ভেতরে?’ তবে এই সব লেখার মধ্যে যতটা সেই সময়কার প্রভাব দেখা যায় তারথেকেও বেশি থাকে পূর্ববাংলায় বসবাস করবার স্মৃতি ও নস্টালজিয়া। উল্টোদিকে ভয়াবহতার কঠোর ও কঠীন চিত্র ফুটে ওঠে ভারতের অন্য প্রদেশ বিশেষত পঞ্জাবে লেখা  সাহিত্যের মধ্যে।

এখন দেশ ভাগের প্রত্যক্ষ প্রভাব যেহেতু পঞ্জাব ও বাঙলা এই দুই রাজ্যেকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে স্বভাবতই এই ভাষাতেই সব থেকে বেশি দেশভাগ নিয়ে সাহিত্য রচিত হয়। আগেই আমরা ভীষ্ম সহানির ‘তমসের’ কথা উল্ল্যেখ করেছি, এছাড়া ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’,( খুসবন্ত সিংহ), আইশ ক্যাণ্ডি ম্যান(বাপসি সিধোয়া), মিডনাইটস চিল্ড্রেন (সলমন রুসদি) এই বইগুলি ভারতীয় জনমানসে একটা প্রভাব ফেলে। তবে বাংলার পরিস্থিতি, তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পালা ও পরিবর্তনকে বুঝতে হলে দেশভাগের উপর যে সব বাংলা বইগুলি রচিত হয়েছে সেগুলির কথা ভাবতে হবে ও পড়তে হবে। এই প্রসঙ্গে বলা যায় বাঙালি তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে আসার যন্ত্রণা নিয়ে যত লেখা লিখেছে তা পড়া ও উপলব্ধি করা রীতিমত সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। আমরা যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব পশ্চিমের’ কথা উল্লেখ করি, ঠিক তেমনি ভাবেই উল্লেখ করতে পারি হাসান আজিজুল হকের  ‘আগুনপাখি’। এছাড়া মনোজ বসুর ইয়াসিন মিঞা, সুমথ নাথ ঘোষের উদ্বাস্তু, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের হেডমাস্টার, পালঙ্ক প্রভৃতি।  মিহির সেনগুপ্তের ‘বিষাদবৃক্ষ’, সুনন্দা শিকদারের ‘দয়াময়ীর কথা’  সীমা দাশের ‘দ্যাশ থেকে দেশে’। আবার শক্তিপদ রাজগুরুর মতন সাহিত্যিকরা অবশ্য উদ্বাস্তু হয়ে এই দেশে না এসেও শুধু মাত্র তাদের কষ্ট দেখেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’ র মত একটি বিখ্যাত ছোটগল্প লিখেছেন।

বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণাতে বারবার উঠে আসছে অবিভক্ত বাংলা ভাগ হবার পেছনে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে জমিস্বার্থ জড়িত থাকবার কথা। দেশভাগের আগে মুসলিম লিগ সেখানকার চাষিদের বিশেষ করে দরিদ্র মুসলিম চাষিদের বুঝিয়েছিল দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান হয়ে গেলেই হিন্দু সামন্ততান্ত্রিক প্রথার উচ্ছেদ হবে। যদিও জমির মালিকানা ও দরিদ্র চাষিদের উপর খাজনা বা কর সম্পর্কিত অত্যাচারের ক্ষেত্রে হিন্দু জমিদারদের পাশে মুসলিম জমিদারদাও কোন অংশে কম ছিল না। তবুও সাধারণ মুসলিম কৃষকদের বোঝানো হয় পাকিস্তান সৃষ্টি হলে এই হিন্দু সামন্ততন্ত্রের উচ্ছেদ হবে ও ‘সরিয়ত’ অনুয়ায়ী ‘জাকাত’ ‘খয়েরাত’ এর ব্যবস্থা হবে। যদিও সেই ব্যবস্থা কতটা বাস্তবে ঘটেছে তার দলিল ইতিহাস বলবে ও বলছে। জমির সাথে আরেকটি যে বিষয় জড়িত ছিল  তা হল সম্পত্তি। হিন্দু গ্রামের আশেপাশের মুসলিম পরিবারগুলি ছিল বেশ গরিব। তাই হিন্দুদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখল করবার তাদের একটা বাড়তি উৎসাহ ছিল। অন্যদিকে হিন্দু উচ্চবংশের  অত্যাচারে বাংলাদেশের নিম্নবর্গীয় হিন্দু তথা নমঃশূদ্ররা যেকোন কারণেই হোক একটা অস্তিত্ব সংকটে ভুগত। স্বাভাবিক ভাবেই তারা কখনো উচ্চবর্ণের হিন্দুদের পাশে এবং কখনো মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখবার চেষ্টা করত। একটা কথা এই প্রসঙ্গে বলতেই হয় সেটি হল, হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায় একই দেশে ও একই ইংরেজ শাসকের অধীনে বাস করলেও তাদের মধ্যবর্তী ও পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল অগভীর ও কেতাবী। দুই সম্প্রদায়ের বহুমানুষ এই সম্পর্ককে মানসিক ও হার্দিক করবার চেষ্টা করলেও খুব বাস্তবিক বিষয় হল সেই চেষ্টা পুরোটা সফল হয় না। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ হল দেশভাগের আগেই ১৯০৭ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ময়মনসিংহ, জামালপুর এমনকি কুমিল্লাতেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বই ও প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। যদিও উল্টোদিকে হিন্দুদের মুসলিম লিগের মিছিলে হামলা করার ও অভিযোগ আছে। এই প্রসঙ্গে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সতর্ক করে লেখা বাংলা ও ইংরেজি ভাষাতে লেখা একটি বইয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। তার ফল এসে পড়ে দেশভাগের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াতে। অন্যদিকে আরেকটা বিষয় হল দেশভাগ দেশভাগ শুধুমাত্র র‍্যাডক্লিফ সাহেবের তৈরি একটা সীমারেখা নয়, এর সাথে জড়িয়ে ছিল সাধারণ ছিন্নমূল মানুষের আত্মীক ও সামাজিক বিভাজন। এই নিয়ে সাহিত্য রচনা আরো দরকার ছিল  কিনা সেটা সময় বলবে।

 

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন