খসড়া
...সংবাদে প্রকাশ, জর্মনরা ক্রমেই হিংস্র হইয়া উঠিতেছে। যে-দেশ দখল করে, সেখানকারই ইহুদিদের ধরিয়া নাকি যথেচ্ছ হত্যা করে। নতুবা কী-এক ক্যাম্প হইয়াছে, সেইখানে দগ্ধিয়া মারে। এতদূর হইতে সব খবর পাই না, কিন্তু এইসব শুনিলে ভয় হয়। জাপানিরা বোমাবর্ষণ করিতেছে ইতিউতি। কলিকাতা ছাড়াইয়া পালাইতেছে সব। আমিও ফিরিয়া যাইতাম, যদি-না এই চাকুরি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া রাখিত। তুমি দুশ্চিন্তা করিও। আমার জন্য কেউ চিন্তা করিতেছে ভাবিলেও ভালো লাগে। একুশ শতকে বসিয়া পত্র লিখিতেছি উনিশশো তেতাল্লিশে। সমস্ত জানিবার পর, ভয় আরও গ্রাস করিতেছে। এই যুদ্ধ বেশিদিনের নয়, তবে আরও বড়ো বিপদ সম্মুখে। ভালোমতো একটা বাড়ি দেখিয়া, তোমাদের লইয়া আসিতে হইবে কলিকাতায়। কারণ জিজ্ঞাসা করিও না, সে-কথা লিখিবার সাহস আমার নাই। কেবল জানিও, গিয়া দেখিব বাসায় আগুন জ্বলিতেছে, তোমরা রওয়ানা দিয়াছ পূর্বেই, পথ ফুরাইবার আগেই ফুরাইতেছে জীবনপ্রদীপ। আর কয় বৎসর মাত্র। তাহার পরই এই একুশ শতক, এই পত্র। হায়, যদি সময়ে জানিতাম! ইতিতে নাম লিখিবারও সাহস হইতেছে না। ইহারে উড়োচিঠি বলিয়া গণ্য করিও।
শিকড়
দেওয়ালে বটের চারা। সময়ে নজর দিলে
বাড়িটা বাঁচানো যেতে পারে
শুভস্য শীঘ্রম ভেবে
উপড়ে ফেলতে চাই
তেরোশো চুয়ান্ন মনে পড়ে
পেট্রাপোল
এপারে নড়েছে হাত, ওপারে জবাব হাসিমুখ
অতএব চলেছে সে—চলে গেল
দেখা যায় রঙিন প্রান্তর ততদূর
আরও দীর্ঘ ফিরে এলে
দু-চোখে উদাসকথা
জল নয়, অচেনা গড়ন—
চাইলে মোছাই যেত
পারোনি বলেই আজও উন্মাদ কবিতার মন