তিন মারাঠি দলিত কবি ও কবিতা
দ্বিখণ্ডিত
ত্র্যম্বক সাপকালে
ছবির বইয়ের পাতা ওল্টাই। আমি ও ছেলে৷
পাতা ফুঁড়ে গরীবকে মারতে ছুটে যায় মহাজন।
-'কেন বাবা?' প্রশ্ন উড়ে আসে।
-'কারণ সে ধনী'
আবারও ওল্টাই পাতা। আবারও সেই দৃশ্য।
হাতে অস্ত্র, গরীবকে মারতে উদ্যত মহাজন।
পাতা ওল্টাতে দেয় না ছেলে।
নিমেষে টেবিল থেকে ব্লেড নিয়ে এসে ধনীর হাত কেটে ফেলে। মুখে তার যুদ্ধজয়ের হাসি।
-'তাকে সাহায্য করার লোক থাকতে পারে!'
-'এরপর কেউ আর তাকে মারবে না।
এই দ্বিখণ্ডিত হাত তারা চিরকাল মনে রাখবে।'
ছেলে হাসে। কাগুজে রক্তে ভেসে যায় ঘর।
[ত্র্যম্বক সাপকালের জন্ম ২২ এপ্রিল, ১৯৩০ সালে মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে, এক দলিত পরিবারে৷ ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া সাপকালে, রেলের টিটি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকারের জন্য কবিতা লিখতেন। 'সুরঙ্গ', 'ভাঙা মানুষ' তাঁর দুই বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। ১৯৭৭ সালে পেয়েছেন মহারাষ্ট্র সরকারের 'কেশবসূত সম্মান'। ১৩ জানুয়ারি ২০১৪ তে মারা যান বিদ্রোহী কবি সাপকালে।]
গান
ভীমসেন ডাথে
বাবা মাথায় পাথর বইতে বইতে শুনলো
নেতাটি গোঁফ পাকাতে পাকাতে বলছে,
'ওহে, একটা চমৎকার লাভনী শোনাও দেখি!'
সাথেসাথেই আমার বাবা উলকি আঁকা গলায় গান ধরলো
যে গানে ছিল-
এক আবেগপ্রবণ মেয়ের ভালোবাসার নেশায় মাতলামির শব্দ
ঘর্মাক্ত দাগী হাতের তালি শোনা গেল
সাধুবাদের গমগম আওয়াজে ভরে উঠল চারিপাশ
কৃতজ্ঞতার স্পর্শে ভরে উঠলো বাবা, এক অনাবিল খুশি
ফিরতি পথে নিমজ্জিত অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে অভাব-অনটনের গান
যা সে কখনো ভাবেনি গাইতে পারবে বলে...
[দলিত মারাঠি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ভীমসেন ডাথের জন্ম মহারাষ্ট্রে ১৯৫৭ সালে। 'ইস্কট', 'ঘুসমেট', 'চক্রী' সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ডাথে ছিলেন সুসাহিত্যিক, নাট্যকারও। দলিতবর্গের শোষণের বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছে তাঁর কলম। পেয়েছেন 'আম্বেদকর সমাজভূষণ পুরস্কার' সহ আরও অসংখ্য সম্মান। ২০১৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন ভীমসেন ডাথে৷]
দীর্ঘশ্বাস
নরেন্দ্র পাতিল
পরিস্থিতির কবলে চিন্তাগুলো জ্বলন্ত, বিদেহী
সমস্যা ঘনীভূত ভেবেই তারা
আইনি মামলা ঠুকল জ্বলন্ত চিন্তার বিরুদ্ধে।
নিছক দীর্ঘশ্বাস ছাড়া উপায়হীন চেতনা
কারণ তাদের তত্ত্বাবধানে কাঠগড়ায় চিন্তার সমুষ্টি
যাচিত স্বপ্নগুলো বেড়ি বাঁধা হাতে কারাগারবন্দী
কিন্তু কতদিন?
কতদিন মুক্তডানার বন্দীদশা এই অন্ধকূপে?
চিন্তার যে বীজ বপন হয়েছে তিলে তিলে
তাকে বন্দী বানিয়ে আটক করা খুব সহজ নয়
যার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে কাঁপে সেই তথাকথিত পোক্ত চার দেয়াল
যা শুধু ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়!
[মারাঠাভূমির প্রথমসারির দলিত কবি নরেন্দ্র পাতিল (জন্ম.১৯৬৫)। আম্বেদকরের ভাবশিষ্য; দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর নরেন্দ্র লিখেছেন অসংখ্য কবিতা যা অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়৷ 'অন্ধকারের যাত্রী' তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ৷]
অনুবাদসাহিত্যের ঋদ্ধ ঘরানায় যুক্ত হল আরও তিনটি উজ্জ্বল পালক। মূল কবিতা পাঠ না করেই এই যে সৃষ্টির আত্মার সাথে নির্মিত হল এক অলৌকিক সাঁকো, এর নামই তো সাহিত্য (সহিত+ষ্ণ)...
উত্তরমুছুন