বিজয়া
অশ্রু নামের কান্না ভেসে ওঠে
কে যেন কে মিলিয়ে গেল নীলকণ্ঠ পাখির ঠোঁটে ঠোঁটে
কে বা কারা, আস্ত পাড়া
বাঁশ পড়েছে, দুগ্গা হবে
আশ্বিনে কাশ, ফিরিঙ্গী রোদ
উমা! উমা!
ডাকছি কাকে, কাকে আমি হাতড়ে বেড়াই
চোখের উপত্যকা আর মনের খাঁ খাঁ শূন্য তরাই
কে যেন কে মিলিয়ে যাচ্ছে অতীতনদীর তটে
কে বা কারা, আস্ত পাড়া
আনকোরা ভাঁজ, নতুন জামা
উমা, উমা, কোথায় উমা
এবার কদিন পুজোর ছুটি
এবার কদিন বিসর্জন
অশ্রু নামের কান্না ভেসে ওঠে
নীলকণ্ঠ মিলিয়ে গেছে অনিন্দিত হাওয়ার ঠোঁটে ঠোঁটে...
মেছুয়াবাজার ফেরিসার্ভিস - ৬
সাম্পান
ভেসে যায় প্রভূত সাম্পান
পায়ের তলায় তার অস্থির স্রোতজল
অস্পষ্ট হতে হতে যতীন্দ্রমোহন শিশুটি কাজল
গলুইয়ের চোখ থেকে টুপ্ খসে স্বপ্নের মতো ধুয়ে গেছে
সে বুঝি ইশকুল থেকে এখনই ফিরেছে
চৌবাচ্চার পেটে তার মগের মুলুক স্নানজল
চিরুনির স্নেহচাহনিতে
শালিমার চুল তার সিঁথিপাটি কোমল জেনেছে
গ্রাসের তুলিতে মাখিয়ে কলাইয়ের ডাল
পেটের ইজেলে ঢেলেছে তৃপ্তির হাপুস হুপুস রংধনু
লণ্ঠনে হ্যারিকেনে পাঠ্যক্রমের শীতল স্রোতজলে অবাধে ভেসেছে
ভেসে, কলেজের চৌকাঠে এসে পৌঁছেছে
সে এক অবাক সাম্পান
শুধু ভেসে যাবে বলে, ভাসবার তরে, অজ্ঞাতসারে
পার হয় ভোলগা, গঙ্গা, মিসিসিপি
জীবনের দুরূহ জটিল কারচুপি
আজও সে তেমনি পেরোয় মেছুয়াবাজার ফেরীঘাট
আজ সে অফিস যায়
অপরাহ্নের বজরায়
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে জলের স্রোতের সাথে ভেসে আসে
কচুরিপানার তরুণ অস্থি, সংবর্ধনার প্রাক্তন মালা, মন্ত্রোতর আশীর্বাদী ফুল
পায়ের তলায় তার অস্থির স্রোতজল তুমুল তুমুল
সাম্পানে বয়সা লেগেছে, ওপারে কুয়াশা
জল ভেঙে এতপথ এই হেঁটে আসা
ভ্রূণের শিকড় বিসর্জন দিয়ে তবু ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া লালন
সূর্যের সাথে বিবাহলগ্না পৃথিবীর অবিরাম গাজন
আমার মুগ্ধ সাম্পান ভেসে যায়
এই উদ্ভ্রান্ত সাম্পান ভেসে যায়
জীবন-ভঙ্গুর এ স্রোতজলে সাম্পান শুধু ভেসে যায়...