দোঁহা

রাধাবল্লভ চক্রবর্ত্তীর কবিতা


 হে দেহী, আত্মা অধীন

আমাকে জাগিয়ে রেখেছে কবেকার সেই অজানা পুরনো চাঁদ

তাই, প্রতিটি শব্দে-র নীচে আলো জ্বলে ধিকিধিকি

যাকে “রাই” বলে জানি, তাকেই নতুন রূপে দেখেছি কি?

সহস্রযুগ পেরিয়ে এসেও সুনাম কুড়িয়ে খাই, অনাকাঙ্খিতভাবে খেতে হয় খোঁচা।

মৌতাত হ'য়ে আমি আজও তোমাকে ধারণ করি সায়কে, শিয়রে

কাঙালের অন্ন থেকে কে হয় বঞ্চিত? হে ঈশ্বর, আপনি প্রত্যক্ষ করুন-

যেদিন এসে বললেন-“কিচ্ছু চাইনা আমি, শুধু একটি ফুলের বদলে চাই সহস্র ফাল্গুন ”

ঠিক সেই দিন হ'তে অদ্যাবধি ক্রমাগত অশ্রু খসে পড়ে।

কারণ কী? তবে শোনো-এই আমি হ’তে চেয়েছিলাম ডুমুরের ফুল

কখনও চাইনি ভেসে যেতে কৃষ্ণা-কাবেরীর জলে। তাই একা একা পথে হাঁটি আর

শুনি দামামাধ্বনি, নীরবের কান্না, আহত দেবতাদের আর্তনাদ। হাতিয়ার

পড়ে থাকে রক্তে মাখোমাখো। বারণ না শুনেই নেমে গেছি বিপদসঙ্কুল

সেই অধিত্যকায় মেরুবরফ ডিঙিয়ে, কিছুই অসত্য নয়, হে মৃদুভাষী, শোনো মম সত্য বচন

রোদ দেখে মনে হয় যেন, “এই বুঝি সকলের ছায়া এসে পড়ল স্ফটকে"-

হাতে হাত ধরে যাদের সাথে পেরোনোর কথা ছিল ছায়াপথ, তাদের দেহে পচন,

পাক হয়েছে শুরু। কী আর করার আছে নিরলসভাবে? এসো, মুহ্যমান হই, ফিরে যাই শূন্য শতকে।

পাথরবাঁধানো সেই প্রেতমার্গ ছেড়ে এখনও যায়নি এক অশ্বচালক, সারথি

মন চায়, চেয়ে নিই জীবন ওর কাছে, চাইবো মুগ্ধ হ'তে পরে, সংকোচে

জীবন কী? সমুদ্র নয়! হায়! তবু কেন ভেসে ভেসে আসে? খুঁজে পায় কে কার অতীত?

প্রেম তো পাখনা নয়! তবু সব ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-আঘাত, রক্ত মোছে

সতর্কিতে। ঘরে ঢুকবার আগে যারা হারিয়ে ফেলেছে তালা ও চাবি

তাদের ভরসা: মাথার ওপরে তুলোর মতো মেঘ, অজানা, পুরনো চাঁদ এক-

ও আমার বিলাসবিহীন কষ্টপ্রতিমা, কতকাল লোকের অশ্রু মোছাবি?

জীবন কারনহীন, মৃত্যুই শর্ত অধীন। জীবন কঠিন, সইতে না পেরে, বইতে না পেরে মৃত্যু-কে চেয়ে ফেলে শেষে।
হে দেহী, আত্মা অধীন,
দ্যাখ...
চেয়ে দ্যাখ...


অন্ধকার। বার্তা ও সারস

মহাসিন্ধু-র ওপার হ'তে কী বার্তা বয়ে এনেছ সারস?
ঝোলা ভরে এনেছ কি ছিন্নমন, কর্তিত ইচ্ছে?
ওদের অবগাহন হয়নি বুঝি? তাই ইচ্ছেমতো ভিজছে
অকালবর্ষণে-এমন বর্ষায় দেখা যায় মৃত্যুদ্বারও।

সে খবর হারিয়ে যাওয়ার পরেও তুমি কীরকম আপ্লুত
যেন সিঁদুরে মেঘ ছেয়ে গেছে গগনে-
আর কিছু না! শুধু নির্বাণ চাওয়া উচিৎ এমন লগনে
যখন মহাকাল এসে তোমার চরণে লুটাত। শুত...

সূর্যের সমাধি যেখানে, সেখানে কি প্রান্তর শেষ?
বয়ে যায় বাণিজ্যবায়ু...বলে যায় বিপন্ন বোল...
সে কি ক্লান্তপ্রাণ এক? নাকি সহসাই পাগল?
যে ঝিঁঝি-র ডাক শুনে অতীতের কথা মনে করছে...

কী মনে পড়ে? তারা ঢাকা মেঘ আর মেঘে ঢাকা তারা?
ভোলাভালা শিশুখেলা, কানামাছি, কু-ঝিকঝিক রেলগাড়ি?
কন্ঠ নামিয়ে কে বলে তবু, “জলে ভেসে যায় কার শব/কোথা ছিল বাড়ি”-
কোথা কে? ঝিম অন্ধকার। নিঃস্তব্ধ শতাধিক পাড়া।

তবে কি আমাদের বাঁয়ে গিরিখাত আর ডানদিকে ধ্বস?
তবে কি আকাশে ছেয়ে আছে জোরালো মেঘ?
যখন জোয়ার উপচে আসে, জনস্রোত একেবারে কমে;
তুমি কোনও বার্তা নিয়ে এলে দ্বিধাহীনভাবে বোলো, সারস...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন