দোঁহা

শিবালোক দাসের গুচ্ছ কবিতা

 


সুন্দর                  



ভেঙে চুরমার সব বিকেলের মতো।
তবু, রোজ এই খেলা চালিয়ে যাই।

তুমি পায়ে করে মুছে দাও আমার
পিঠে সমস্ত অক্ষর, গান, অস্ফুট...

অতল, আঙুল ছোঁয়ালেই বিস্ফারিত
হবে জেনে আমি হাত রেখে জানাই
না বিদায়...অতল...অতল...অতল...

এমনি করেই আত্মসমর্পণ করো বুঝি?



এবার স্নান সারো, শতাব্দী পার,
ডুবিয়ে রাখো ডানা, ভেসে যেও না,
রোমন্থন করো ঘুরে যাওয়া শ্বাস
পাঠানো মূলাধারে...

একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখো,
তোমাকে ডাকে দুটি ঠান্ডা চোখ!

তুমি নৈর্ব্যক্তিক কে বলেছে তোমাকে?
তবুও চাঁদের আড়ালে তোমার সজ্জিত
পৃথিবী ডুবে গেল ধীরে ধীরে...

তোমার কান্নায় ভেসে যায় আমার
পান্ডুলিপি, আমার পদ্য যাপন।

তোমার নগ্ন শরীর ঢেকে দিই এসো।  
দুঃখিত হয়ো না। উড়ে যেতে দাও
তোমার উত্তরীয় নিঃশব্দে!



যদি ভয় হয়,
তাহলে ফেলে দিও দগ্ধ ফুল।
জল চাইতে চাইতে সে পুড়ে
গেছিল, তার দিকে ফিরে কেউ
তাকায় না। চক্রব্যূহে ঘুরতে
ঘুরতে সুন্দর, তুমি দেখো
তার অস্থি তোমার শরীরে লেগে
যায়, ওটাই তোমাকে স্বর্গদ্বারে
নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।



আবর্তে হঠাৎই চোখ লাল
হয়ে ওঠে হাওয়ার,
অভিমান সেরে ওঠার আগেই
সে টের পেল, অসমাপ্ত লিপি
তার চূর্ণ-বিচূর্ণ, পড়ে দাওয়ার
উপর।
সে তোমাকে মনে মনে চেয়ে
কি ভুল করেছে, সুন্দর?



ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময়
আমার পকেট থেকে বেরিয়ে
পড়ে একটি গ্রহ, তার চারপাশে
কোনো সংঘর্ষ নেই, কিন্তু কি
অসম্ভব ঠান্ডা তার নীরবতা!

আপেক্ষিকতা, তুমি নিশ্চয়ই
এত শীতল হওনি রাত্রিবেলায়!

আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে
ভাবি যদি আগুনে হাত দেওয়া
হত অত্যন্ত সহজ, তাহলে তো
কবেই পরিণত হয়ে যেতাম...



পিঠে এখনো দেওয়ালের
নোনা লেগে আছে,
দপ দপ শিরা ফেটে চুঁয়ে
পড়ে অমৃত সমুদ্র মন্থনের!
সুন্দর, পান করো আমার
চোখের অবশিষ্ট আলো,
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বে শান্ত এলাকাটি
আমি দেখতে চাই না।

চাদরে মোড়া শিরদাঁড়া।
 
তবুও দু একবার উঠিয়ে
আবার কি সানুদেশে ফিরিয়ে
দিতে চাও ধবল স্পর্শ?



আমার মা প্রতিদিন সন্ধের সময়
প্রদীপ জ্বালেন কবিতার মধ্যে,
বাবার পিঠ চাপড়ে হঠাৎ কেউ
রাস্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়
হরতালের মাঝে।

আমি এসবের কিছুই জানতাম না।

কাগজে কতগুলি ক্লিষ্ট বিবর্ণ
মহানুভবতা, আমার হাত ধীরে
ধীরে ধীরে চওড়া হয়ে আসে।

চোখের জলের শব্দ কি টের
পাওয়া যায় মৃত্যুর পূর্বের চুম্বনে?



শূন্যের নিরিখে বিচার করলে
তখন অন্ধকার স্পর্শ করেনি।

পরিধির বাইরে বিদ্যুৎঝলক,
তবু শীত করে না একটুও।

তারপর? আচমকা পদস্খলন।

ঢেউকে আমি সমগ্র হাতের মুঠোয়
বন্ধ করেছি, কলঙ্কিত হতে দেব না।

১০

ভাতের মধ্যে ছড়ানো সুগন্ধি জ্যোৎস্না।

প্রত্যেক মোড়ে আমি টোকা মারতে ভুলে গেছি।

একবার...
দুইবার...
তিনবার...

পুরোনো কঙ্কালটা ঘরেই পড়ে রয়েছে।

মোমবাতির গলনে আমি যে নিরোগ হয়েছি সেটা তোমাকে কে বলেছে, সুন্দর?

আমি জ্বরের মুখে শুষে নিয়েছি সমস্ত ছায়া।

এখনও বাকি। পা পড়েছে যেখানে,
সেই বিন্দুতে, আঙুলের ফাঁকে, রাস্তায়,
গড়ে উঠেছে শহর। বাতাস পৌঁছতে পারেনি।

পুরোনো কঙ্কালটা হঠাৎ নড়ে উঠল...

১১

এত শীতল তোমার আলিঙ্গন।
ঢেউ ফুরিয়ে গেল বালিতে।
চাকাতে উঠে এসেছে মাটি।

এরপরও তুমি খুলে নেবে শিরস্ত্রাণ?
তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ বলবে,
বাতিল করো সমস্ত উষ্ণতা।

একদিন যখন আমার আঙুলগুলি
তোমার মাথায় রাখব, ভুলে যেও
ঘুমন্তের কাছে রাখা ছিল জন্মকবচ।

১২

শক্তিহীন। তুমি অনুভব করো শ্বাসে,
দেখবে খুলে গেছে দরজা।
তারপর চোখের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে
একে একে সমস্ত ঘর।
ধুলোমাখা আদুল গা তোমার,
রুপোলি পালক তোমায় ছুঁয়ে যেতে
যেতে বলেনি যে ঠোঁটের আড়ালে
ছিল কয়েক ফোঁটা জল!

এরকম অনেক দিন গেছে যেখানে
লুকিয়ে রাখতে পারিনি অনেক ওল্টানো
অন্ধকার, স্বাভাবিকভাবেই আমার ঘুম
হয়নি। নক্ষত্রের কাছে ভোরের শিশির ছিল।
তারা ফুরিয়ে গেলে বড় দুর্বল হয়ে পড়ি। ভুলে গেছি রেশম সুতোর ন্যায় জমাট
বিন্দুদের আলাদা করে দিতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন