দোঁহা

শুভদীপ রায়ের গুচ্ছ কবিতা

 



অরাজনৈতিক পশুপালনের পরে

গিলি গিলি ফুস

ছিল বেড়াল হয়ে গেল রুমাল!
যাদুকর হাত নেড়ে শূণ্যের থেকে মুঠো মুঠো এনে দেয় সাজানো খাবার,
সেসব কুড়িয়ে নিতে আমার পাঁজর খুঁড়ে যক্ষের দল-
তাদের চারপায়ে মৃত্যু লেগে আছে, আর গলায় একঘেয়ে স্তুতিমন্ত্র, শুধু
যে কাপড়ে চোখ বেঁধে রাষ্ট্রের নামে- এতকাল মাথা গুঁজে দন্ডি কেটে গেছে;

তাদের জমানো সব শোকটুকু আজ এই সম্প্রচারেই নিলাম হবে।

আচ্ছে-দিন এলে ওই রাস্তার ধার দিয়ে

ঝড়ে পরা শিউলির মতো-তাদের রক্তমাখা হাসিমুখগুলো দিয়ে সাজানো শহরে

আমরাও একে একে হাত তুলে শূণ্যের থেকে

মুঠো মুঠো এনে দেব পঞ্চবার্ষিকী খিদে



নিরপেক্ষতার পোশাকে লেগেছে ছুতো

যে কবিতা পক্ষ নেয় নি কখনো, আমি তার ডানগালে চুমু দিয়ে আসি, বামগালে অযত্নে তিল এসে বসে,

একবার এই চোখ, একবার ওই চোখ খুলে ভারসাম্য বেঁধে দিতে হয়,

কখনো কান্না পেয়ে গেলে অশ্রুফোঁটা নিক্তিতে মাপি-

এত এত ভক্ত দুইদিকে, আমিও সমান প্রশ্রয়ে তাদের মাংস ছুঁড়ে দিই,
জঙ্ঘার দুই পার থেকে,

কখনো উঠলে ঝড় পাছে হেলে যাই, তাই, শিরদাঁড়া আগেই ভেঙেছি,

এখন কেবল ঐ হৃৎপিন্ড বামদিকে বলে-

পাকস্থলীটা টেনে ডানদিকে নিয়ে যেতে হবে…



কবিতা উৎসব 

চার আনার হজমির তারে উদগারে উঠে আসে নাড়ি ভুড়ি সব।

আমার শহরে আজ উৎসব প্রতি ঘরে ঘরে।

আর উৎসব লাগলেই জেনো-খিদেরা ঘিরে আসে জোনাকির মতো।

সকলেই ভিক্ষাপাত্র হাতে,

"কে দেবে ভিক্ষা?" -এই প্রশ্নের ঠিকমতো মীমাংসার আগে

রাজকীয় ফরমান লাগে।

এত এত প্রাচুর্য, এত সফলতা-তাদেরই কারণে, তাই শহরের আগে

সোনার ফলকে প্রতি বুভুক্ষুর নাম লেখা হবে!

এসব আমোদকালে কৃতজ্ঞ উৎসবে মাতোয়ারা যারা কবিতা-উৎসবে মাতে,

তাদের মাত্রাবৃত্তে ঢেকে যায়-অভুক্ত সহস্র কন্ঠে দূরে একঘেয়ে মেঠো সুরে "দুটো ভাত দে!"



ওয়াইফাই

ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড পাল্টে দেওয়ায় আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ফাঁকা মাঠের ঠিক মাঝখানটাতে দাঁড়িয়ে জরিপের পদ্ধতিগত ভুল মাপতে মাপতে, খাঁচাটুকু রেখে দিই নিজের কাছে। আমাদের গতজন্মের স্বপ্নে দেখা প্লটটার উপর এজন্মের ব্যাপারীরা বাংলো বানাবে।

কঙ্কাল খুলে রেখে বুধন সাজিয়েছে এই কোয়ার্টার,

ফাঁপাবুক ওর বৌ রান্না করে যত্নে খাওয়ায়,

তোমার আসার কথা শুনলেই লজ্জামুখে আঁচল বোলায়,

আমিও যে রাতজাগা, সিগন্যাল খুঁজে চলি জঙ্গলময়-আর তার ফাঁকে পয়সার গন্ধ পাই বসে যাই টেবিলের পাশে,

স্নাতকোত্তর স্থাপত্যশৈলী দিয়ে সর্বনাশ এঁকে যাই, এঁকে যাই মৃত্যু ওদের অজ্ঞাতে পিতৃপুরুষের অর্থনৈতিক চুক্তি যতদিন লাগু থাকবে এসো, আমরা এই সাজানো কোয়ার্টারে থেকে যাই আরো কটা দিন-বুধন আনবে মাছ, ধরে আনবে বনমুরগী, 

ওর বৌ সাজিয়ে দেবে থালা পঞ্চব্যঞ্জনে-তোমার ওয়াইফাই সারিয়ে নেব ততদিনে, এখনো পারষ্পরিক সমঝোতা বাকি আছে যে!



একান্ত ব্যক্তিগত

তোমাকে চুমু খাওয়ার সময় আমি রাষ্ট্রের খবরদারি মানিনা!

আমি চুড়ান্ত পর্যায়ে এই অন্ধকারে গেস্টাপো বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে যদি হেরেও যাই, তবু,

তোমায় চুমু খাওয়ার অধিকার আমি পরলোকে নিয়ে যাব!-এইসব স্বপ্নদোষে ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায়,

এই যুদ্ধের ব্যাটন আমি কার হাতে তুলে দেব-এমনটা ভাবার সময় বুঝি আজ! তাই, নির্বাচনের দিনে একান্ত ব্যক্তিগত মতে

সুরক্ষিত করে যাব আমার চুমুর অধিকার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন