হাওয়াব্রিজ
সকালবেলায় জানলা খুললেই আমি খুব বিরক্ত হই। পর্দার শরীর ফুঁড়ে ঘরে ঢুকে আসে আলো। বিছানায় সিগারেটের ছাই আর তোমার চুলের কাঁটা পড়ে থাকে আবাল্য সঙ্গীর মতো। যেন কতদিনের চেনা। রান্নাঘরে প্রেশার কুকারে সেদ্ধ হয় মুসুরির ডাল আর আলু। ট্রেনের বগির মতো নিজস্ব একটা দিন এসবের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে এসবের মধ্যেই ফুরিয়ে যেতে থাকে। আমি ইলেকট্রিক বিল হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরনোর আগে বাথরুমের শাওয়ার চেক করি। আয়নার ঘাম জুড়ে টিপের আঠা লেগে থাকে। লেগে থাকে তোমার শরীরের অমুদ্রিত কোলাহল। বাইরে এসে দরজা টেনে দিয়ে বেরনোর আগে মনে হয় ট্রেনের বগির মতো এইসব নিজস্ব দিন আজ ঠিক কতগুলো হাওয়াব্রিজ পেরোবে...
নেরুদা
নেরুদাকে আমি চিনি ততদিন
যতদিন হলো চিনেছি কলকাতাকে।
গলির পর গলি ছুটে যায় ক্ষুধার্ত সাপের মতো।
আর আশেপাশে একেকটা ঘরবাড়ি
ফেলে যায় ছায়া। অস্থির গতিবিধি।
কোলাহল, গোঙানির অবিমিশ্র সুরে
ঘোর লেগে আসে।
ময়লা ফেলার গাড়ি, দুয়েকটা খুচরো বিপদ, পকেটমারের হাসি, অনূঢ়া মুখের শ্বেতীদাগ পেরিয়ে যেতে যেতে মনে পড়ে আমাদের নেরুদা কবিতা লেখেনি কোনোদিন।
খালাসিটোলায় খুব মেঘ করে আসে।
নীলচে বেগুনী মেঘ সন্ধ্যের আগে।
মনে হয় এই বুঝি খপ করে ধরে নেওয়া যাবে। তারপর মুঠোর মধ্যে পলাতক বারুদের ঘ্রাণ,
ভুলে যাওয়া কিশোরীর মুখ
টুক করে জেগে ওঠে ছায়াছবি যেন।
তারপর আবার বেগুনী মেঘ ঘন হতে হতে সন্ধ্যে জাপটে ধরে পাঁজরের হাড়
রেলের ঝুপড়ি থেকে ধরা পড়ে বিশে।
মার খাওয়া মুখ তার জ্যোৎস্নায় চকচক করে। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকে নিমাইয়ের বোন।
চোখে তার টলটলে জল।
সিগারেট নিভে আসে। চলাচল গতিহীন হয়। খালাসিটোলায় বসে মনে পড়ে নেরুদার কথা।
দূরে কোথাও বাঁশি বেজে ওঠে।
কথা কমে আসে। আলো কমে আসে।
মেঘ করে আসে খুব, মেঘ করে আসে।
নেরুদা হারিয়ে যায় মেঘের ভেতর...