দোঁহা

এ-পাড়ায় শীতকাল


 

অভিজিৎ গায়েন

বাতাস বইছে শীতল। শারীরিক অসুস্থতা চারপাশে। ট্যাফিকের হর্ণ শোনা যায় সন্ধ্যে বেলায়। পুকুর পারে জোনাকির আলো। ঝিঁঝি পোকারা উন্মাদ। রেলপথ শুনশান। সোয়া আটটায় মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে কেউ। ঘুমিয়ে আছে কুকুর; বাচ্চা বুকে জড়িয়ে। সার্বজনীন কালী মন্দিরের প্রদীপ জ্বলে। নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকে রোড লাইট। নষ্ট টিউবওয়েল থেকে গড়িয়ে পড়ে জল, টিপটিপ। শালিক পাখি দিন শেষে আসে, তৃষ্ণা মিটিয়ে যায়। টিকটিকিরা দেয়াল খোজে, সত্য কথাও খোজে মাঝেমাঝে। পার্কের বেঞ্চে জমে থাকে কুয়াশা। বহুকাল প্রেমহীন বসে থাকে চেয়ার। প্রচীন মানুষের মতো নিরবে নিভৃতে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে পাগল। চাঁদ ওঠে আকাশে। দিনের শেষে ঘরে ফেরে মা পাখি। বাচ্চার জন্য খাবার সংগ্রহ করে। চেঁচিয়ে ওঠে তারা। ফাঁকা মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে শেয়াল। জলন্ত দু চোখ তাঁর। ঠাকুমারা ঘরে বসেবসে গল্প বলে নাতি-নাতনিদের। চাঁদের বুড়িতে হারিয়ে যায় ছোট্ট মন। যেনো এক অজানা কৌতূহল। সুতো কাটছে চাঁদে বসেবসে। লতাজির গান, রবীন্দ্র সংগীত বেজে ওঠে পুরোনো দোতালা বাড়ি থেকে। হুইল চেয়ারে বসে জীবনের শেষ ভাগে আর গান শুনে মৃতপ্রায় লোক। বাড়ির মহিলারা গরম ভাত নামিয়ে বেড়ে দেয় স্বামী-সন্তানদের। পেট ভরে খেয়ে ঘুমিয়ে যায় সুনীল। রাত নেমে আসে, অন্ধকার। মাঝরাতে পাখির শব্দ মাতে বাঁশবাগানের পশ্চিম দিকে। সব শেষে ভোর আসে। আমার এই ছোট্টো প্রাচীন পাড়ায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন