মনস্বী চৌধুরী
উনিশ শতকের 'দৃশ্যকাব্য'! ''শুনে লাগে খটকা''। উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেণী-সংরূপগত বিচারে এই শব্দটি তো আর ব্যবহৃত হবার কথা নয়! এ তো সেই কালিদাসের যুগের ব্যাপার! না। আমার আর আপনার দুজনের ভাবনাই ঠিক আছে। আসলে আধুনিক যুগে আর কি এত গুরুগম্ভীর পোষাকিয়ানা নির্ভর হলে চলে? সেখানে পোষাকী নামের থেকে ডাকনামেরই কদর বেশি। উচ্চারণের পিছনেও সময় ব্যয় করবার একটা ব্যাপার আছে তো নাকি! সাহিত্যের ভাবনার আধুনিকায়নের যুগে এই ডাকনামের আদরটা বেশ খাপ খেয়ে গেছে আর তাই তো একদা যা ছিল ভরতমুনির 'দৃশ্যকাব্য' আজ তা-ই হয়েছে 'নাটক'। দাঁড়ান দাঁড়ান,পণ্ডিত-গবেষকগণ খুঙ্গিপুঁথি খুলে বসবেন এক্ষুণি। প্রশ্ন উঠবে সেদিনের 'দৃশ্যকাব্য' আর আজকের 'নাটক' কি এক? না, এক তো কোনোভাবেই নয় আর তার সপক্ষে প্রমাণও রয়েছে যথেষ্ঠ। তবে তা তাত্ত্বিক প্রমাণ। একটু ভেবে দেখুন তো, ভারতের সাহিত্য-সংস্কৃতির দর্পণে কাব্য অর্থে সাহিত্যের 'অভিনয়' হল আদি প্রতিবিম্ব আর তাই 'দৃশ্যকাব্য'-এই নামকরণ। মৌখিক-পরম্পরায় বাহিত সংলাপের মধ্যে জন্ম হয়েছিল প্রাক্-ঔপনিবেশিক বঙ্গের নাট্যসংস্কৃতির। লক্ষণীয়, চন্দ্রশেখর আচার্য বা শ্রীবাসের গৃহপ্রাঙ্গণে রুক্ষ্মিণীর ভূমিকায় অভিনয়কালে শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩)-এর ভাব-সংবেদী স্ফূরণে কোথাও নাট্যলেখর ছায়াটুকুও ছিল না। 'নাট্যলেখ' অর্থাৎ নাট্যের লিখিত ও মুদ্রিত পাঠ, যা মুখ্যত উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার পুনর্ভাবনজনিত একটি উদ্ভব ও সংরূপগত প্রকাশ। এতক্ষণ যে 'ধান ভানতে শিবের গীত' গাইছি তা এই প্রবন্ধটির নামকরণের মধ্যে যে একরকম আনুমানিক মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হবার আশঙ্কা লুকিয়ে রয়েছে তার একটা নিজস্ব কৈফিয়ত দেবার জন্য।
বস্তুতপক্ষে, 'নাটক' বিষয়টি আমাদের ভাবনায় যে জগৎটি তৈরী করে তা হল এক মায়ার জগৎ। আলো, দৃশ্যপট, কুশীলব, নাট্যকারের ভাবনা, প্রযোজকের নির্দেশ এবং সর্বোপরি অভিনয়কুশলতা ব্যতীত সে জগতের নির্মাণ সম্ভব নয়। মুদ্রিত হরফে বা পাণ্ডুলিপি থেকে সরাসরি নাটক পাঠে ব্যক্তির মানসে একটি চিত্রের প্রতিফলন ঘটে কিন্তু তা ব্যষ্টি-মননে সঞ্জীবিত না হওয়া পর্যন্ত নাটক রচনার উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। নাটকের দাবি প্রথমত এবং শেষত তার মঞ্চরূপের কাছেই। তাই ইংরেজ উপনিবেশ স্থাপনের পর্বে বঙ্গদেশে ছাপাখানার প্রাদুর্ভাবে বাঙালি 'নাটক' নামক একটি নতুন জিনিস উপহার পেলেও 'অভিনয়' নামক প্রাচীন কলাবিদ্যাটির থেকে সে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। নাটক রচনার মূলে থাকে তার মঞ্চায়নের বাসনা। এই প্রবন্ধটিতে বিষয় আলোচনার জন্য উনিশ শতকে রচিত যে কয়েকটি নাটক নির্বাচন করা হয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটিরই মঞ্চায়ন সম্ভব হয়নি, কিন্তু তার মঞ্চায়নের সম্ভাবনা হয়তো ছিল। এতদব্যতীত সবারই মঞ্চরূপ রয়েছে। তাই যে কাব্য অর্থে সাহিত্য দৃশ্যায়ন-প্রধান, তার আলোচনায় প্রাচীন 'দৃশ্যকাব্য' অভিধাটিই গৃহীত হল অহেতুক দ্বন্দ্বে প্রবেশ না করে।
উনিশ শতকে যতই মুদ্রিত হরফে প্রাপ্ত 'প্রথম বাংলা নাটক' নিয়ে গর্ব করা হোক না কেন, দেখা গেছে সেই নাটুকেপনাই অর্থাৎ পূর্বতন কাব্য-গাথা নির্ভর অভিনয় সে-আমলেও সংস্কৃতির আঙিনায় প্রথম স্থানাধিকারী। ১৭৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর কলকাতায় রুশদেশীয় সংস্কৃতি-পুরুষ গেরাসিম্ স্তেপানভিচ্ লিয়েবেদেফ্ (১৭৪৯-১৮১৭) কৃত জোড্রেলের একটি ইংরেজি নাটকের বঙ্গরূপান্তর 'কাল্পনিক সংবদল'-এর অভিনয়ে ইংরেজি ঔপনিবেশিকতার প্রসাদে ও বিভাবনে নির্মিত হল বঙ্গদেশের নতুন নাটকীয়তার সংজ্ঞা। এর বছর চল্লিশের ব্যবধানে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলের আদিপুরুষ বাবু কৃষ্ণরাম বসুর উত্তরপুরুষ বাবু নবীনচন্দ্র বসু (১৮০৯-১৮৭৬)-র প্রভূত অর্থ ব্যয়িত হল তাঁর শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চায়। তাঁর উদ্যোগে বাঙালিয়ানার উদ্যাপনে বাঙালি কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় (১৭১২-১৭৬০)-এর রস-আখ্যান 'বিদ্যাসুন্দর'-এর অভিনয়ে বাঙালির নাটুকেপনার প্রথম যথার্থ প্রকাশ ঘটল। এরপর বাঙালির নাট্যভুবনে বিদ্যাসুন্দরের সেই অভিনয়গুণে বিদ্যাসুন্দর দখল করল এক বিশেষ স্থান। উড়িষ্যার কটকের জাজপুর গ্রামের করণ জাতির গোপাল চন্দ্র দাস (১৮১৯-১৮৫৯) কলকাতায় 'নব্য' নাগরিকতার প্রতিনিধি হয়ে 'গোপাল উড়ে' হিসেবে বাঙালির অভিনয়চর্চার জগতে স্থায়ী আসন পেল ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দরের আখ্যান-প্রসারণের সূত্রেই। তৎকালীন কলকাতা শহরে বাবুমহলের আনুকূল্যে পৈত্রিক ব্যবসা ত্যাগ করে নাট্যজীবী গোপালের কৃতিত্বের দ্বারা অধিকৃত মধ্য কলকাতার বৌবাজার অঞ্চলের রাধামোহন সরকারের যাত্রা-নাটক 'বিদ্যাসুন্দর পালা' গোপালের দেশিক উত্তরাধিকারের প্রকরণগত প্রয়োগে, রঙে-রসে ভরপুর হয়ে নতুন নেশা ধরাল 'নাটুকে' বাবুদের। রাতের পর রাত বাবুবাড়ির অন্দর-দালান জমে উঠত লাগল বিদ্যা-সুন্দর-মালিনীর অভিনব আবহের সংলাপ-গীতে। বর্ধমানরাজ বীরসিংহের রাজকন্যা বিদ্যা ও কাঞ্চীরাজ গুণসিন্ধুর রাজপুত্র সুন্দরের প্রণয়লীলার তথাকথিত 'অমার্জনা'য় ভারতচন্দ্রের মূল রচনার নির্যাসেই শোনা যায় সুন্দরের বিদ্যার প্রতি গীতসংলাপ-আকুতি গোপাল উড়ের সৃজনে -
"আমার গতি কি হবে বল চাঁদবদনি
তুমি তো আনন্দে রবে হবে সন্ন্যাসিনী।
ভেবে দেখ দু কুল মাঝে, ঘর থাকতে বাবুই ভেজে
তোমার পীরিতে মজে কুলমান ত্যজে...
শুন ওলো রাজনন্দিনী তোমার এখন দুধে চিনি
আমার ভাগ্যে শাকে বালি দিলেন ভগবান
না পুরিল মন-আশা, না ভাঙ্গিল প্রেম-পিপাসা,
যা থাকে কপালে এখন কালীকুণ্ডলিনী।"
উনিশ শতকে বাঙালির নাট্যসৃজনে এই প্রথম ভারতচন্দ্রের আখ্যান-সূত্রেই পৌরাণিক দেবী কালিকার প্রসঙ্গের অবতারণা করা হল। লক্ষণীয়, সুন্দরের বিদ্যার প্রতি প্রণয়জনিত চিত্তবিক্ষেপ শেষ পর্যন্ত দেবী কালিকার নিকট কৃপা প্রার্থনায় পরিণত হয়েছে তার নৈতিক অপরাধের জন্য রাজার তরফে দণ্ডাদেশের আশঙ্কায়। এই মর্মে হঠাৎ ফিরে দেখতে ইচ্ছা করে বাঙালির কালীনামের গুণ রচনার ঊষালগ্নটিকে।
আঠারো শতকের দ্বিতীয় পাদে যে বঙ্গদেশে যে বিক্ষুব্ধ সময়ের বুকে বৈষ্ণবীয় ভাবাদর্শের অবক্ষয়ে ও তার তত্ত্বকথায় সামাজিক অবস্থার প্রতিকারহীনতায় আশ্রয়-শুশ্রূষার যাচনায় 'শাক্ত পদাবলি'র জন্ম, বঙ্গদেশের প্রথম সংগীতকার কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেন (১৭২০-১৭৮১) ছিলেন তার জনক। তাঁর মাতৃ-ভাবসংগীতে প্রকাশ পেয়েছে ছোটো মানুষের ছোটো ছোটো আশা-অভিমান-অভিযোগ 'সহজ সুরের শয়তানি'তে। আর এ-সবকিছুরই আধার সেই সন্তানের প্রতি অবিচারী মা; কখনো সাধক-মনের অনুষঙ্গে আবার কখনো বাৎসল্যের অভিমানে তার প্রকাশ -
"আমি তাই অভিমান করি।
আমায় করেছ সংসারী।
অর্থ বিনা ব্যর্থ যে এ সংসারে সবারই...
প্রসাদে প্রসাদ দিতে মা এত কেন হলে ভারী।
যদি রাখ পদে থেকে পদে, পদে পদে বিপদ সারি।"
আবার কখনো মূর্ত হয়েছে আশাভঙ্গের বেদনা এবং সাধক-সন্তানের জীবন-বিতৃষ্ণ অন্তরঙ্গ কথন -
"নিতান্ত যাবে দীন, এ দিন যাবে কেবল ঘোষণা রবে গো।
তারা নামে অসংখ্য কলঙ্ক হবে গো ...
প্রসাদ বলে পাষাণ মেয়ে আসান দে মা ফিরে চেয়ে
আমি ভাসান দিলাম গুণ গেয়ে ভবার্ণবে গো।"
গোপালের বিদ্যাসুন্দর পালার এক দৃশ্যে দেখা গেল 'জন'-এর বকলমায় ভারতচন্দ্রের 'বাঙালি' 'রাজপুত্র' সুন্দর নিজ কৃতকর্মের বিপদে পড়ে তার ক্ষত্রিয়সুলভ বীর্যবত্তাটি বিস্মৃত হয়ে যেন সাধারণ বাঙালি প্রজাসুলভ অন্তর-আর্তি জানাচ্ছে মাতৃকাদেবীর শ্রীচরণে। রাজ-চরিত্রের এই আকস্মিক 'paradigm shift' টি কোথাও গিয়ে রামপ্রসাদের মাতৃগীতে জনসাধারণের প্রকাশিত অন্তর-যাতনারই অনুবর্তী নয় কি? কর্মফলের নিরিখে নয় অন্তত নিবেদনের ভিত্তিতে এ-ভাবনাটি ভেবে দেখা যেতেই পারে।
'প্রাগাধুনিক' সাহিত্যের অনিবার্য দেবানুগৃহী মনোভাবের সমাপ্তি ঘটিয়ে স্বাভাবিক মানব-বাসনার প্রকাশের মাধ্যমে যে আধুনিকায়নের দীপ প্রজ্জ্বলনের সলতে পাকিয়েছিলেন ভারতচন্দ্র। আর সেই প্রকাশের ছদ্ম-সঙ্গী হয়েছিল 'কালিকামঙ্গল' নামক একটি অপ্রসর জন-মন-ভুলানো মঙ্গল-'পুরিয়া' বিশেষ। গোপাল উড়ের পালায় সে-কাহিনীরই বাহার-বিস্তারে বিদ্যার সঙ্গে সুন্দরের প্রণয়-কলহের প্রকাশে মধুর মানের প্রতীকী স্থাপনায় দেবী কালিকার পরিচয় অন্য রূপ পেল পুরুষ মনে নারীচরিত্রের সর্বজনীন ভাবকল্পে -
''দৃষ্ট হাসি মিষ্টিভাষী অবিশ্বাসী নারী।
সোহাগের সামগ্রী বটে বিচ্ছেদের কাটারী।
নারীর চক্র বুঝা ভার মত্ত আছে ত্রিসংসার
নারীর পদতলে পড়ে আছেন ত্রিপুরারি।
মান ভাঙলেন ভগবান নারীর পায়ে ধরি
নারীর জন্য কীচক ম'ল, রাবণ নির্ব্বংশ হল
আমি কি তার বুঝব বল নারীর ছলচাতুরী।"
সুন্দরের গীত-সংলাপে ধরা পড়ল বিদ্যার প্রেমের প্রায়োগিক রূপের অভিমানী-সংরাগ, তা-ই রামপ্রসাদের ভক্তিগীতের উপলব্ধিতে প্রকাশ পেয়েছে ভিন্ন ভাবের অনুযোগে,অভিমানের আলাদা রঙে -
"মনগরিবের কী দোষ আছে।
তুমি বাজিকরের মেয়ে শ্যামা যেমনি নাচাও তেমনি নাচে।।
তুমি কর্ম ধর্মাধর্ম, মর্মকথা বুঝা গেছে। ...
প্রসাদ বলে কর্মসূত্র, সে সুতার কাটনা কেটেছে।
ও মা মায়াসূত্রে বেধে জীব খ্যাপাখ্যাপি খেল খেলিছে।"
পালার আরেক দৃশ্যে লক্ষিত হল সহচরী-সমীপে রাজকুমারী বিদ্যার কারাগারে বন্দী সুন্দর-বিরহের প্রসঙ্গ উত্থাপনে প্রাধান্য পেল শক্তিদেবীর নিকট কৃপাভিক্ষা; শাক্তদর্শনের কাব্য-আধারে। এও যেন একজন সাধারণ বিরহকাতরা প্রণয়িনীর অন্তর্বেদনারই আলংকারিক চলচ্ছবি-
"আমায় যদি কুল দেন কুলকুণ্ডলিনী
নিস্তারকারিণী, তবে কি ভয় ওলো সজনি।
অসৎ লোকের বাণী, হৃদে যেন দংশে ফণী
জলেতে অনল জ্বলে দিবা রজনী;
বিনে সেই আদ্যাশক্তি নিবারিতে কার শক্তি
নিরুপায়ের উপায় যুক্তি, মুক্তিপ্রদায়িনী।"
রামপ্রসাদের সাধনতত্ত্বের গীতে এই সহজিয়া ভাবটিই রূপায়িত হয়েছে অন্য এক ভাব-অঙ্গে। পাকে পাকে জড়িয়ে ধরা সংসারের তীব্র অনুরাগ, ভোগ-বাসনা থেকে মুক্ত হবার আকাঙ্খা দেবী নিস্তারিণীর চরণে সমর্পিত হয়েছে প্রসাদ-পুষ্পাঞ্জলি হিসেবে -
"...গুরু আমায় কৃপা করে মা যে ধন দিলে কানে কানে।
এমন গুরুআরাধিত মন্ত্র তাও হারালেম সাধন বিনে।।
প্রসাদ বলে কৃপা যদি মা হবে তোমার নিজ গুণে।
আমি অন্তিম কালে জয় দুর্গা বলে স্থান পাই যেন ওই চরণে।।"
বা
''হুজুরেতে আরজি দিয়ে মা, দাঁড়িয়ে আছি করপুটে।
কবে আদালতে শুনানি হবে মা, নিস্তার পাব এ সঙ্কটে।।''
বিদ্যার সুন্দরের জন্য ভয় আর কর্মফলে রাজনারী হিসেবে নিজ লজ্জার বহিস্ফোরণে পরমারাধ্যার পদতলে একটা গতির আশা-প্রার্থনা তা-ই সংসারের পাকচক্রে ভিন্ন ভাবে মায়ের চরণে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে সংসারী জীবকে। রামপ্রসাদ ব্যক্ত করেছেন সেই কথাই।
এতক্ষণ আমরা দেখলাম কীভাবে উনিশ শতকের চতুর্থ দশকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থিত বিদ্যাসুন্দর পালার দেবী কালিকার প্রসঙ্গ-গীতি ও বন্দনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে সাধক-কবি রামপ্রসাদের সংগীতের মিতভাষণকে। রাজপরিবারের অসামান্য ধন-দৌলতই হোক বা রামপ্রসাদের বকলমে আঠারো শতকের বঙ্গদেশের নিপীড়িত মানুষের ঈশ্বর প্রদত্ত 'সামান্য ধন'ই হোক, বিপর্যস্ততার কালে যখন তা চরম বিড়ম্বনার বিষয় হয়ে উঠেছে তখন এই দুই গোত্রের মানুষই তারা মিলেমিশে গেছে সেই অভয়পদ প্রাপ্তিকেই জীবনের ধ্রুবসত্য তথা শ্রেষ্ঠ পাওয়ার অভিজ্ঞান লাভে সেতুর মতন দাঁড়িয়ে থেকেছেন শতক পেরোনো রামপ্রসাদ সেন।
বিদ্যাসুন্দর অভিনয়ের গগনচুম্বী সাফল্য বাঙালির নাট্যচর্চাকে ত্বরান্বিত করল দ্রুতগতিতে। নাট্যের পাশাপাশি ১৮৫২ সালে পাওয়া গেল প্রথম মৌলিক বাংলা নাটক। শুরু হল 'নাট্য' আর 'নাটক'-এর যুগলযাত্রা। ১৮৫৯ সালে সদ্য বিলেত-ফেরতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) সমকালীন সমাজ-অসঙ্গতিকে রূপ দিলেন তার দুটি প্রহসনে -- 'একেই কি বলে সভ্যতা?' এবং 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' (প্রকাশ-১৮৬০)।
'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসনের নায়কচরিত্র ভক্তপ্রসাদের লাম্পট্য বিনাশে মাতৃশক্তির অদৃশ্য খড়্গাঘাতই যেন নেমে এল আর তখনই বাচস্পতির নেপথ্য সংগীতে শোনা গেল সেই কাল পুরাতন 'রামপ্রসাদী' পদ -- ''মায়ের এই তো বিচার বটে,/ বটে বটে গো আনন্দময়ি, এই তো বিচার বটে,"
ভক্তপ্রসাদের নারীকেন্দ্রিক চারিত্রিক অবনমনের বিচারে অধর্মের পরাজয় আর ধর্মের জয় সাধিত হল। 'poetic justice'-এর সুব্যবহারে 'বাচস্পতি' নামক এক গৌণ চরিত্রের সংলাপে রামপ্রসাদের একটি সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ পদের অবতারণা করে মধুসূদন দাম্ভিক, অত্যাচারী, কলুষপূর্ণ মানসিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দর্শকদের মুক্তির হাসি উপহার দিলেন। সমাজের রুচিবৈকল্যের শোধন-প্রয়াসে প্রহসনের চরিত্রও বজায় রইল এবং প্রহসনের শেষে দর্শক-সাধারণের ইচ্ছারই প্রতিফলন স্বরূপ বাচস্পতির সরল 'communicative' কালীবন্দনায় ভক্তপ্রসাদের চরিত্রের কাল-হরণ সম্ভব হল। আঠারো শতকের এক অস্থির সময়পটে রামপ্রসাদের কাব্যগীতের চেতনায় প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর মায়ের অনধিকার কৃপা-বর্ষণের চিত্রটি -
"করুণাময়ী ! কে বলে তোরে দয়াময়ী।
কারো দুগ্ধেতে বাতাসা (গো তারা) আমার এম্নি দশা
শাকে অন্ন মেলে কই।।
কারে দিলে ধন জন মা হস্তী-অশ্ব-রথচয়।
ওগো তারা কি তোর বাপের ঠাকুর
আমি কি তোর কেহ নই।"
কিন্তু জাগতিক নিয়মে সুকর্ম আর সুসাধনের উপহার মেলেই, শ্যামার প্রকৃত বিচারে সততাই শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করে। রামপ্রসাদের কলমে মেলে তার প্রমাণ-
"... প্রসাদ বলে আমার হৃদয় অমল কমলসাঁচ।
তুমি সেই সাঁচে নির্মিতা হয়ে মনোময়ী হয়ে নাচো।"
এখানে এই প্রসাদ-কথন আসলে স্নেহময়ী মায়ের প্রতি অভিমানী, সাময়িক ভাগ্যবিড়ম্বিত সন্তানগণেরই ভাব-প্রতিমা। নতুন শতকের একটি নতুন আঙ্গিকের নাট্যে সমভাবের প্রয়োগ দৃষ্টে মনে হয় মধুসূদনের নাট্য-নির্মাণকালে রামপ্রসাদই যেন তাঁর কানে কানে বলে দিয়েছেন ভক্তপ্রসাদের কৃত্রিম ভক্তির মুখোশ খুলে দেবার পথটি তাঁর মাতৃ-অঞ্জলির সীমিত পাথেয়ের দ্বারা।
একসময় দেখা গেল সময়ের স্বর এবং সমাজের গতিবিধি স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক রূপে ধরা পড়ছে তখনকার 'চটজলদি' সাহিত্যের দর্পণে। তরলিত ইতরভাবালুতার কলঙ্কের তোয়াক্কা না করে প্রহসনের মুখ্য সাধনা সহজে সাধিত হয়েছিল 'বটতলার সাহিত্য'-এর ব্রাত্য, সস্তার লেখকদের অসাধারণ সমাজভাবনা আর লেখনীকুশলতায়। ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত হল 'বটতলা'র প্রহসনকার মহেশচন্দ্র দাস দে'র বটতলার একটি রচনা 'নেশাখুরি কি ঝক্মারি'। না-মঞ্চায়িত এই প্রহসনের একটি দৃশ্যে দেখতে পাই বাগানবাড়িতে আমোদের সময় মাতাল ইয়ার-বাবুরা হঠাৎ 'বসন্ত-বাহার' রাগে, 'আড়াঠেকা' তালে মদের ঘোরে কালীস্তুতিতে মনোনিবেশ করেছে। সেখানে মায়ের 'ইতর সন্তান'দের মদ্যের সাগরে অবগাহন করতে না পারার অভিযোগ শোনেন মা স্বয়ং -
''ওমা কালী আমাদের মদের বোতল কেন খালি।
ভাঁড়ে মা ভবানী হয়ে বৈস মুণ্ডমালী।।
মুড়ি কড়াই কাছে পড়ি, যাচ্ছে মাগো গড়াগড়ি
হচ্ছে মাগো ছড়াছড়ি দিচ্ছে করতালি।
খাপছাড়া হলে দশা, দেখ দেখি কি তামাসা
মদ্যবিনে হীন দশা বুঝি হলো সকলি।।''
প্রহসনের এই গানটি আমাদের রামপ্রসাদের সংগীতের এতক্ষণের পাঠ থেকে সরিয়ে এনে একটু অন্যভাবে চেনবার সুযোগ করে দিল। প্রশ্ন জাগে প্রহসনটিতে বাবু-প্রমোদের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তাতে পরোক্ষভাবেও কি 'ইয়ং বেঙ্গল' দলের প্রমোদের ছায়া নেই? নব্যরুচির শিক্ষিত বাবুদের সুর আর সুরার মত্ততা গানের কথার অসংলগ্নতায় প্রকাশিত হয়েছে। ইয়ং বেঙ্গল দলের তরফে দেবী কালীকে সেই ঐতিহাসিক অভিবাদন জানাবার কথা উনিশ শতকের ইতিহাস সচেতন বাঙালি মাত্রেই জানেন কিন্তু মনে প্রশ্ন থেকেই যায় নিজ ধর্ম সম্পর্কে সন্দিহান একটি যুবা সম্প্রদায় মদের ঘোরে কেন এক হিন্দুদেবীরই নাম করে বসল? জীবনাচারে তাদের যতই শ্লীলতার অনুকরণের আড়াল থাক না কেন তাদের রুচিটি ছিল মূলত স্থূল রস উপভোগের। মধুসূদনের 'একেই কি বলে সভ্যতা?' প্রহসনেও আমরা এই বাস্তবচিত্রটি লক্ষ করেছি যা মধুসূদনেরও বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্জাত। বেসামাল মদ্যপান করতে করতে মদ্যের দেবী রূপে কালীস্তুতি আসলে আমাদের এখানে একদল অশিক্ষিত সাধারণ মাতালের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। অতি সাধারণ, নিম্নমানের আনন্দের এই গানে বাবুয়ানি করতে করতে বুঝতে না পেরে নেশার ঘোরে প্রান্তজনের আশ্রয়দাত্রী দেবীর কাছেই নব্য-শিক্ষিত বাবুগণ যেন কেঁদে ওঠেন তাদের মতো করেই। বাবু সম্প্রদায়ের একাংশের এ-যেন এক চমৎকার এক রাত্রির চরিত্রাভিনয় উঠে এল মহেশচন্দ্রের রচনায় ও ভিন্নরূপী কালীগীতে। লক্ষ করবার বিষয় হল এই যে গানটির রাগ ও তালে রাজকীয়তা থাকলেও ভাববস্তুতে কিন্তু 'শ্যাম্পেন', 'সেরী', 'হুইস্কি'র মোলায়েম গন্ধ নয়, পাচ্ছি 'ধেনো'র তীব্র গন্ধ। ধেনো তো সমাজের প্রান্তজনের দুঃখ ও ক্লেদ সাময়িকভাবে ভুলে থাকবার একটি ঔষধ, সেটিও তাদের কালীপুজোর রাতে কালীমাতাই জুগিয়ে থাকেন তার প্রসাদ রূপে। তাই এই প্রসঙ্গে রামপ্রসাদের গীতভাবনা সরাসরি যুক্ত না হলেও দৈনন্দিন অপমান-অপবাদের ভাগীদার এই মানুষগুলির দলে মায়ের কাছে তাদের হয়ে প্রার্থনা জানাতে রামপ্রসাদও উপস্থিত থাকেন শ্যামা-রূপ মদ্যের পক্ষে সওয়াল করে কারণ দিনের শেষে মপাসাঁর গল্পে মাতা মেরির মতো বাজিকরের মাথার ঘাম মুছিয়ে মদ্যের বেশে শ্যামা মা-ই কোলে তুলে নেন সামাজিকভাবে এইসব ব্রাত্যজনদের -
''রসনারে করো বশ শ্যামানামামৃত রস/ গান করো পান করো পাত্র বটো রে।।''
এই প্রহসনেই আবার দুই মাতালে 'সিন্ধু' রাগে, 'যৎ' তালে গান ধরে। সেখানেও কালীর কাজ একই। সন্তানগণের নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য হলেও আকুতিটি আমাদের ভীষণ চেনা। রামপ্রসাদের বাতসল্যের অবুঝপনার থেকে কোনো অংশে কম নয় -
''ওগো শ্যামা কে তোমারে বলে গো কালী।
আমার কেন মদের বোতল হয়ে গেল খালি।।
আমার মুড়ি কড়াই চাটনী যত, পড়ে কাদে অবিরত,
এখন বোতলেতে আবির্ভূত হও মুণ্ডমালী।।"
মদের ঘোরে 'শ্যামা' আর 'কালী'র পরিচয় ভ্রমে পড়ে দুই মাতাল অভিযোগ জানিয়েছে মদ ফুরিয়ে যাবার। তাদের মতে কালীর যেন 'শ্যামা' নাম গ্রহণের কোনো অধিকারই নেই যদি তাদের মদ না জুটিয়ে দেন তিনি। গানটিতে প্রথম দুই পংক্তির কাব্যিক যথেচ্ছাচারিতা সেই তুমুল মাতলামিরই চিত্রকল্প। আর মাতাল হয়ে বেতাল পাবার মন্ত্রটি তো পরোক্ষে বলে দিয়েছেন রামপ্রসাদ, যদিও মায়ের দুই সন্তানের উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন। একজন সাধনমার্গের চতুর্বর্গের আশায় সুরাসক্ত আর আরেকজন নিতান্ত জাগতিক চতুর্বর্গ লাভের আশায় সুরাসক্ত, তাই তাদের মায়ের প্রতি আবদারের আদেশ নেমে আসে -
''এখন বোতলেতে আবির্ভূত হও মুণ্ডমালী''।
আমরা আলোচনার ইতি টানব আর দুটি দৃশ্যকাব্যে কালীস্তুতির প্রসঙ্গ ব্যাখ্যায়। ১৮৮৮ সালে তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'স্বর্ণলতা' রসরাজ অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯)-র প্রযোজনায় হাতিবাগানের নব নির্মিত স্টার থিয়েটারে 'সরলা' নামে মঞ্চরূপ পায়। তার নাট্যগানে মেলে সেই পূর্ব অভিযোগ, তবে এবার অনুরোধ-উপরোধের বদলে মায়ের প্রতি সন্তানের বিরক্তির প্রকাশ ঘটে এবং নেশারও চরিত্র বদল হয় বলিষ্ঠ প্রতিজ্ঞায় -
"মদের বোতল কেন খালি।
পূর্ণ বোতল শূন্য হোল তাই ডাকি মা বলে কালী।।
ছয় বেটা মাতাল জুটে, কল্লে আমায় নগ্দা মুটে,
বোতল বওয়া সার হয়েচে,
এবার ডাকবো বোলে বনমালী।
ধেনো মদ আর খাবো না,
শুঁড়ির বিষ্ঠা বলে সর্ব্ব জনা,
ব্রাণ্ডি নিয়ে রেণ্ডি বাড়ি, গেলাস গেলাস দেদার ঢালি।।"
অনবরত অভিযোগের আগুন জ্বলতে জ্বলতে মনের মধ্যেই তা প্রশমিত হয়ে পরিণতি পেয়েছে নিম্নগোত্রের মদ না ছোঁওয়ার শপথে। পূর্বোক্ত দুটি গানের সঙ্গে এই গানেরও বক্তব্য-বিষয়গত কোনো তফাত লক্ষ করা না গেলেও কাব্যের প্রকাশে আভাস মেলে রামপ্রসাদী পদের ভাবনার -
''ছয় বেটা মাতাল জুটে, কল্লে আমায় নগ্দা মুটে,'' পংক্তিটি আমাদের মনে পড়িয়ে দেয় রামপ্রসাদের ''এক আসামি ছয়টা প্যাদা বল্ মা কীসে সামাই করি/ আমার ইচ্ছা করে ওই ছয়টারে বিষ খাওয়াইয়ে প্রাণে মারি।।'' পংক্তিটিকে। রামপ্রসাদের এই পদটিতেই রয়েছে ''প্যাদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার নামেতে নিলাম জারি।'' - তার সঙ্গেও নাট্যগীতের ''বোতল বওয়া সার হয়েচে/ এবার ডাকবো বোলে বনমালী।'' পংক্তিটির সবিশেষ মিলটি লক্ষ করবার মতো। এখানে গীতিকার সুকৌশলে কালীবন্দনার প্রসঙ্গে 'বনমালী'র আগমন ঘটিয়েছেন পতিতাগৃহে দেদার 'ব্রাণ্ডি' পান ও কাম-বাসনার চরিতার্থতার প্রতিরূপ অঙ্কনকল্পে। দেখতে পাই একদিকে মায়ের অভয়পদে আশ্রয় গ্রহণ করে সাধনপথের প্রতিবন্ধক ষড়রিপুর বিনাশ প্রার্থনা আর অন্যদিকে ''ধেনোমদ'' রূপ রিপুর প্রতি বিরাগ থেকে তা পরিহার করে কালীর শরণ নিয়ে অন্যতর উচ্চমানের রিপুকে বরণ করবার দিকে যাত্রার হদিশ রয়েছে সেই রামপ্রসাদের দেখানো পথেই।
বাংলা নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্তের প্রহসনের ধারায় অবিসম্বাদিত প্রহসনকার ছিলেন দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭৩)। ১৮৬৬ সালে রচিত তাঁর 'বিয়ে পাগলা বুড়ো' প্রহসনে বৃদ্ধ রাজীব মুখোপাধ্যায়ের বিবাহের বাসরের দৃশ্যে চরিত্র স্বয়ং গেয়ে ওঠে একটি গান -
"মন মজরে হরিপদে,
মিছে মায়া, কেবল ছায়া, ভুলোনা মন আমোদ-মদে।
দারা সুত পরিজনে, ও মন ভেবে দেখ মনে মনে
কেউ কারো নয় এই ভুবনে, হরি-চরণ-তরী বিপদে।"
প্রহসনে গানটির সুরনির্দেশে বলা হয়েছে - 'রামপ্রসাদী-দাদরা'। বৃদ্ধ বয়সে বিপত্নীক রাজীবের বারংবার বিবাহ ঘিরে যখন তাঁর পাগলামি তুঙ্গে তখন রাজীব যেন নিজেকে নিজেই শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করলেন এই 'ন্যাড়া-নেড়ীর টপ্পা' গেয়ে। তাঁর চরিত্রের এই অসংযমতা ও নিজের অসংলগ্ন আচরণকে যেন ব্যঙ্গের চাবুকের দ্বারা শায়েস্তা করতে চাইলেন জীবনের অসার মায়ার বিষয়ে নিজের মনকে জাগ্রত করে। বৃদ্ধ বয়সে পৃথিবীর মায়া পরিত্যাগ করে ঈশ্বরপ্রাপ্তির সময়ে নতুন বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ করার দুর্দমনীয় বাসনাকে সংযত করতে কাব্যে 'হরি' বন্দনার কথা থাকলেও সুররূপ ও কাব্যের চরিত্র আমাদের টেনে নিয়ে যায় রামপ্রসাদের পদের মানবজীবনের নিষ্ঠুর উপলব্ধি-কথনে, সেখানে তিনি যেন কোনো কাব্যিকতা, তত্ত্ব-ভঙ্গিমতাকে সরিয়ে আমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন -
'ভেবে দেখো মন কেউ কারো নয় মিছে ফের ভূমণ্ডলে।
ভুলো না দক্ষিণে কালী বদ্ধ হয়ে মায়াজালে।। ...
যার জন্যে মর ভেবে সে কি সঙ্গে যাবে চলে।
সেই প্রিয়সী দিবে গোবরছড়া অমঙ্গল হবে বলে।।'
আমাদের কি মনে হয় না রামপ্রসাদের এই পদের সব কথাটাই, বিশেষত শেষ দুটি পংক্তি দীনবন্ধুর রসিক রাজীবের দিকেই যেন তাকিয়ে বলা?
প্রশ্নগুলো জানা থাকলেও; উত্তর আমাদের অজানা থাকবেই! কেবল উনিশ শতক নয়, কালান্তরের দৃশ্যকাব্য কালোত্তীর্ণ প্রসাদী-কালী-কাব্যের প্রসাদগুণে ঋদ্ধ হবে। আমাদের অভিনয়বিদ্যার মতোই কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনের 'কালীকীর্তন' বয়সে প্রাচীন হলেও ভাবাদর্শ ও চরিত্রে নবীন। তিনি ও তাঁর কাব্যসংগীত আমাদের জন-সংস্কৃতির আদান-প্রদানের সূত্রধর। কাল-সংস্কৃতির পটে নানান যুগে এবং হুজুগের মধ্যেও যাঁর স্থানটি অমলিন আলোয় আলোকিত হয়ে থাকবে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাঁর রচনার পাঠ-পরিবর্তনে চিরন্তনী হয়ে থেকে যাবেন তিনি আমাদের সাহিত্য-সৃজনে।
গ্রন্থঋণ:
১. রামপ্রসাদী, সর্বানন্দ চৌধুরী (স.), সাহিত্য অকাদেমি; ২০১৭ (তৃতীয় মুদ্রণ)।
২. বাংলার মঞ্চগীতি (১৭৯৫-১৮৭২), দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবর্ণরেখা; ১৯৯৯।
৩. বটতলার বই, উনিশ শতকের দুষ্প্রাপ্য কুড়িটি বই, অদ্রীশ বিশ্বাস (স.), গাঙচিল; ২০১৬ (দ্বিতীয় মুদ্রণ)।
- প্রথম পাতা
- বিষয়
- _গল্প
- _কবিতা
- _প্রবন্ধ
- _ভ্রমণ
- _ফটোফিচার
- _বাংলাদেশের কলম
- _ধারাবাহিক
- _ফিল্ম রিভিউ
- _পাঠ পরিক্রমা
- Editions and Archive
- _২৫শে বৈশাখ
- _বৈশাখী সংখ্যা
- _স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা
- _প্রাক শারদ সংখ্যা
- _ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংখ্যা
- _শারদ সংখ্যা
- _মাহশা ইরান সংখ্যা
- _দীপাবলি সংখ্যা
- _ঋত্বিক ঘটক সংখ্যা
- _শক্তি চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা
- _শীতকালীন সংখ্যা
- _প্রথম বর্ষপূর্তি সংখ্যা
- _বইমেলা সংখ্যা
- _ভাষা দিবস সংখ্যা
- _দোলযাত্রা সংখ্যা
- _পয়লা বৈশাখ সংখ্যা
- _কার্টুন সংখ্যা
- _শারদ সংখ্যা ১৪৩০
- _বিশেষ সংখ্যা
- _রক্ত করবী সংখ্যা
- Contact Us
- Editorial Team
- About Us