শ্রীতা মুখার্জী
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম ধারা হল শাক্ত পদাবলী। এর উদ্ভব হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এর আদি ও শ্রেষ্ঠ কবি হলেন রামপ্রসাদ সেন।
আনুমানিক ১৭২০-২১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি হালিশহরের কুমারহট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মনে করা হয় ১৭৮১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি দেহত্যাগ করেন। কবি ছিলেন কালীর ভক্ত। কলকাতার এক ধনী জমিদারের সেরেস্তায় মুহুরীগিরি করার সময় হিসাবের খাতায় তিনি গান লেখেন -
‘আমায় দে মা তবিলদারী, আমি নেমকহারাম নই মা শঙ্করী’
এই গান লিখে তিনি মনিবের মন জয় করেন এবং তাঁর থেকে বৃত্তিলাভ করে কালীবন্দনায় মন-প্রাণ সমর্পণ করে দেন।
রামপ্রসাদ শুধু সাধক ও কবি ছিলেন না, তিনি গায়কও ছিলেন। তাঁর দেওয়া গানের সুরকে ‘রামপ্রসাদী সুর’ বলা হত। তিনি ছিলেন গৃহী সাধক। ভক্তিই ছিল রামপ্রসাদের জীবনের প্রধান অবলম্বন। নিজের চিন্তাভাবনা, আনন্দবেদনা, সুখদুঃখ, ইহকাল-পরকাল সবকিছু কবি শ্যামামায়ের চরণতলে নিবেদন করে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলেন। তিনি বিদ্যাসুন্দর, কৃষ্ণকীর্তন প্রভৃতি কাব্য রচনা করলেও, তাঁর প্রধান খ্যাতি শ্যামাসঙ্গীত রচনার জন্য।
রামপ্রসাদের শ্যামাসঙ্গীতের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। গানগুলির মধ্যে আগমনী, বিজয়া ও ভক্তের আকুতি পর্যায়ের পদ রয়েছে। সাধনা বিষয়ক পদে নানা উপমা-রূপকের সাহায্যে সাধনভজনের কথা বলা হয়েছে। ভাষার সরলতা, ভাবের গভীরতা, সহজ প্রকাশভঙ্গী, লিরিক সুরের মূর্চ্ছনায় প্রসাদী সঙ্গীতগুলির আবেদন সর্বজনীন। সহজ ভাষা, সরল সুরে, চলিতভাষার ছন্দে এবং প্রাণঢালা আবেগে গানগুলি অতুলনীয় হয়ে ওঠে।
রামপ্রসাদ ভক্তসাধক ছিলেন বলে আরাধ্য কালীমায়ের সঙ্গে তাঁর মাতাপুত্রের আন্তরিক ভক্তি ও স্নেহ ভালবাসা ও মান-অভিমানের সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কখনো গানের মধ্যে দিয়ে মাকে তিনি অভিযোগ জানান ও তিরস্কার পর্যন্ত করেন,
‘মা আমায় ঘুরাবি কত।
কলুর চোখ বাঁধা বলদের মতো।
ভবের গাছে বেঁধে দিয়ে মা পাক দিতেছ অবিরত।
তুমি কি দোষে করিলে আমায় ছ’টা কলুর অনুগত।'
আবার কখনো অভিমান করে রামপ্রসাদ বলেছেন –
‘বল মা আমি দাঁড়াই কোথা?
আমার কেহ নাই শঙ্করী হেথা।'
কখনো রাগ করে কালীকে কটু কথা বলতেও তাঁর বাঁধেনি। মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত সন্তানের মতোই ব্যাকুল হয়ে ওঠে সময় সময় কবির মন। তাঁর আগমনী ও বিজয়ার গানেও মেনকার স্নেহময়ী মূর্তি পাঠকের চোখে ধরা পড়ে। এর মধ্যে দিয়ে কবির স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ প্রকাশ পায়।
রামপ্রসাদের গানে সহজ ভক্তিভাব সহজেই ফুটে ওঠে।তাঁর গানে জীবনরস, আধ্যাত্মিকতা, দার্শনিকতা, গূঢ় তত্ত্বকথা একসঙ্গে মিশে রয়েছে। একজন শাক্ত কবি হয়েও তিনি কৃষ্ণকে নিয়েও গান বেঁধেছেন। সুতরাং ধর্মীয় উদারতা তাঁর গানের মূল বৈশিষ্ট্য।
রামপ্রসাদের শাক্ত সঙ্গীত আজও মানুষের বিপদে-আপদে নির্ভরতা ও সাহস এনে দেয়। গানের সুর হৃদয়কে মথিত করে। মানুষের মুখে মুখে ফেরে এমন কিছু রামপ্রসাদী গান, যা এখন প্রবাদের অঙ্গ হয়ে গেছে।
‘মন রে কৃষিকাজ জান না
এমন মানব জমিন রইলো পতিত,
আবাদ করলে ফলতো সোনা।’
শ্যামাপূজার মাহেন্দ্রক্ষণে তাঁর এই সাধক সন্তানের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম রেখে যাই।
- প্রথম পাতা
- বিষয়
- _গল্প
- _কবিতা
- _প্রবন্ধ
- _ভ্রমণ
- _ফটোফিচার
- _বাংলাদেশের কলম
- _ধারাবাহিক
- _ফিল্ম রিভিউ
- _পাঠ পরিক্রমা
- Editions and Archive
- _২৫শে বৈশাখ
- _বৈশাখী সংখ্যা
- _স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা
- _প্রাক শারদ সংখ্যা
- _ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংখ্যা
- _শারদ সংখ্যা
- _মাহশা ইরান সংখ্যা
- _দীপাবলি সংখ্যা
- _ঋত্বিক ঘটক সংখ্যা
- _শক্তি চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা
- _শীতকালীন সংখ্যা
- _প্রথম বর্ষপূর্তি সংখ্যা
- _বইমেলা সংখ্যা
- _ভাষা দিবস সংখ্যা
- _দোলযাত্রা সংখ্যা
- _পয়লা বৈশাখ সংখ্যা
- _কার্টুন সংখ্যা
- _শারদ সংখ্যা ১৪৩০
- _বিশেষ সংখ্যা
- _রক্ত করবী সংখ্যা
- Contact Us
- Editorial Team
- About Us