দোঁহা

ফুলকি


শুভেন্দু ঘোড়াই

বিজয়া চলে গেছে আজ দুদিন। কাঠামোটা টেনে টেনে আড়ার দিকে নিয়ে এল ফুলকি। খুব ঘোর হয়ে দেখছে। হঠাৎ কী মনে হল কে জানে। সব ছেড়েছুড়ে একছুটে ঘরমুখো হল সে।-মা?-মা? উতলা হয়ে ডাকছিল।

   পরনে একটা ন্যাংটোপ্যান আর একটা ছেঁড়া সাদা টেপজামা। শীতের ঢা ঢা বাতাসে নাকে মুখে সর্দি। ফোঁস ফোঁস করছে। ফুলকির মা ওর খেলনা রান্নাবাটিগুলো গোছাচ্ছিল তখন। সামনে গিয়ে হ্যাবলার মতো দাঁড়াল ফুলকি। কাঠামোর সঙ্গে মায়ের মুখটা মেলানোর চেষ্টা করছে। ওর খেলনার উনুনটা একটু মাটি ঘষে-মেজে দিচ্ছিল লক্ষ্মী। বলল-'তুমি খুউউউব ভালো মা।'
  শুনে একগাল হেসে লক্ষ্মী সেই কাদামাখা হাতে ফুলকিকে কোলে নিয়ে একটা হামু খেল গালে।

  ফুলকির চোখে তখনও কাঠামোটা ভাসছে। মায়ের শাড়িটা নিয়ে চারকোনে চারটা খাঁচি পুঁতে খেলনাঘর বানিয়েছিল। কোল থেকে নেমে শাড়িটা নিয়ে একছুটে দে-ছুট পুকুরপাড়।
   পিছন থেকে হাঁক পাড়ল লক্ষ্মী- 'ফুলকি ফুলকি কোথায় যাচ্ছিস? কথা শোন ফুলকি...'

   ফুলকি ততক্ষণে পুকুর পাড়ে। ছেঁড়া শাড়িটা দিয়ে খড়ের ভুরুটা জড়াচ্ছিল।তারপর ফিরে এসে দেখছিল মায়ের মুখটা। যেন লক্ষ্মী ঠাকুরের মতো।

    বলল-'ঠাকুর কেন জলে ভাসায় ওরা? মাকে কি কেউ ভাসায়?' বলে একটা মিষ্টি করে চুমু দিল কপালে।
   লক্ষ্মী চোখ দুটো বন্ধ করে ফুলকির কথা ভাবছিল।ফুলকি মায়ের গলাটা জড়িয়ে আদর দিতে দিতে বলল- 'আমি বড় হলে চাকরি করে অনেক টাকা আনব ।আর তুমি সেই টাকা দিয়ে একটা মন্দির বানিয়ে দেবে। এখন ঐ ঠাকুরটাকে ঘরে আনবো চলো তো।'

   মায়ের হাতটা ধরে টানতে টানতে পুকুর পাড়ের দিকে চলল ফুলকি...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন