দোঁহা

শুভাশিস সেনগুপ্তের কবিতা

 


যুপকাষ্ঠ

যুপকাষ্ঠে গলা ডুবিয়ে-এমন কল্পনার 
ঘোরেও তুমি হয়তো চমকে উঠবে। 
কল্পনা কর, বৃত্তাকার ঘিরে থাকা ছাগময় সংসারে 
তোমার নিমজ্জিত মস্তক থেকে আর্তস্বর ভেসে আসছে 
দুটি বলিষ্ঠ পাঁঠা তোমার অধমাঙ্গ 
আকর্ষণ করছে পরস্পরের দিকে এবং 
তোমার হাত দুটি পিছমোড়া করে বাঁধা। 
উত্তেজনার এমন মুহূর্তে কোন ছাগী ঈশ্বরীর নিকট 
বলির মন্ত্র পড়ছে কোন অজ পুরোহিত। 
অন্তিম সময় স্বেদে ভরে যাচ্ছে যুপকাষ্ঠ এবং 
তোমার খুব কাছে বামপার্শ্ব থেকে কোন শিবাপ্রিয় জল্লাদ 
তোমার ঘাড়ে এক তীক্ষ্ণধার ধাতব অস্ত্র স্পর্শ করে 
একবার ছাগী ঈশ্বরীকে দেখছে...একবার তোমাকে 
ধীরে ধীরে অস্ত্রটি উঠে যাচ্ছে তার মাথার উপর-
মুহূর্তটিকে যত ভাগে ভাগ করলে তোমার কাছে 
পড়ে থাকে অবকাশ...তোমার এখন ততক্ষণ আয়ুষ্কাল। 

এমন এক বাস্তব, স্বপ্ন বা কবিতা বোধ করি 
কোনটিই যাচিত নয় তোমার কাছে। 
কালী যদি সকল কিছুর নির্মাণকারিনী হন 
তবে শুধুমাত্র মানব কি প্রকারে তাঁকে 
জননীর একমাত্র অধিকাররূপে দাবী করতে পারে?
সকল প্রাণীর মাতৃ-স্বরূপা হলে কিভাবে বলো একজন মাতা কেবল মনুষ্যদিগের মনস্কামনা পূর্ণ হেতু অন্য বিজাতীয় পুত্রের প্রাণ বলিদানে সুখী হতে পারেন?
আমি যদি বলি:তোমার গতজন্মের পিতা বা মাতা ভ্রাতা বা ভগিনী, আত্মীয়-অনাত্মীয় বলির আগে তোমাকে মূক ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে?

জানি, তোমাদের লোলুপ জিহ্বা 
এই সত্য কখনো মান্য করবে না।



নির্গুণ 

এই আধুনিকতায় যদি পুরাতন কোন প্রথা 
ফিরিয়ে আনার কথা বলো 
তবে নারীর স্বয়ংবর সভা ফিরে এলে বড় ভালো হতো 
যোগ্য দিকপালগণের সারিতে 
প্রথম থেকে সর্বশেষ প্রতিযোগীর মুখ 
কৌতুহলময়, উদ্দীপ্ত ও উৎকণ্ঠিত!
কেউ বা অতিমাত্রায় অর্থ দম্ভে দম্ভিত 
যদিও বেশিরভাগ নারীর চোখ 
সেদিকেই ঝুঁকে খুঁজে নিতো আশ্রয় 
একমাত্র সত্য প্রেম জানি খুঁজে নেয় ভিখারি মহেশ্বরকে 
তুমিও কি খুঁজে নিতে আমাকে তেমন করে? 
ঐশ্বর্য্যহীন কৈলাশ-ভস্মময় অলংকার 
ধনহীন বৈরাগ্য-বাসযোগ্যহীন শ্মশান 
নির্গুণ ব্যক্তিত্ব-নেশাখোর যাপন...

তুমিও প্রকৃতি...শক্তির আধার 
প্রত্যেকটি ঋতুর গল্প তোমাকে ঋতুবতী করেছে 
নির্গুণ পুরুষের পাশে-হে ঈশ্বরী 
তুমিও কি শক্তির রূপক হয়ে দাঁড়াবে তখন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন