তানিয়া চক্রবর্তী
রক্ত আসলে রক্ত নয়
রক্ত আসলে দাম,
রক্ত আসলে জন্ম থেকে যোগ
সে রক্ত দিল মা, সে রক্ত খেল মা
শান্ত রূপ ভৈরবে এসে কাল খেল গিলে
হায় হায়, কাল খেলো মেয়ে
বস্ত্র সব মিলিয়ে গেল
দেহের যত মান ছিল ভগ্ন হয়ে নগ্ন হয়ে
কেবল শক্তি ফিরে পেল...
যে মেয়ে দু'নখে মিজ রেখা ধরে, সন্তান বুকে উরগের মতো ঘর মোছে রোজ, তাকে পুরুষ রাত্রে উলঙ্গ করে, নাচায়, খেলায়! তা খেলাক! দেহ আছে...শিশু অজুহাতে কাম তো আসে...কিন্তু তা তোয়াক্কা করে কে!! শুধু আক্ষেপ, উপুর্যপরি নিক্ষেপ!অহো পুরুষ এ তো সঙ্গম নয়!নারী দেহে করো না স্বমেহন...করো পুজো...দেহ মিলন মন্দির, যদি তুমি সাধনা শেখো! দেহ থেকে দেহ হতে সম্মতি নাও...শক্তির তাপ গহ্বরে রাখা থাকে, জন্ম তার একমাত্র বোধ...তাকে এনো না ওপরে, ত্বকের বাহিরে...তাকে করো না উগ্র...তার রং ধরে এনো না অযথা অঙ্গার ও অমানিশা!
দেবত্র খুলে নারী এসেছে গৃহস্থ ঘরে। সম্মানে পেতেছে আঁচল। ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে রাখা ডিম্ব সে তুলেছে পাত্রে।তোমরা এসেছো ধেয়ে...ব্যর্থ গল্পের সমাহারে। নিক্ষিপ্ত প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ নারী...গর্ভে রেখেছে সৃষ্টি...তাকে অবমাননায়, আত্মায় এসে মারো যদি, তার স্নেহময় রূপ অগ্নি হয়ে আসে।অগ্নিতে এসে যে কাঠ ঋত্বিক কে বোঝায় মিলন; তা আসলে শক্তির কথা, শক্তির মুখ!
এভাবে দেহে ফুল আসে, দেহ মা হয়ে ওঠে। দেহ এলোকেশে রাঙা পায়ে পাতালে এসে বসে। রাতের অন্ধ দোকানে ছেঁড়া নাইটি পড়ে মুড়ি খায় রোজ। রাস্তার ধুলো মেখে কালো হয় রোজ। রোজ রাত্রে কারা যেন আসে, খাদ্যের মুখে তার শ্যামাপোকা এসে বসে।আর অজস্র শ্যামমার্কারা তার অর্ধ অঙ্গ খায়। খাদ্যের নাভি বড় কাঁদে, এলোকেশে মেয়ে দু'পায়ের ফাঁক হতে মুদ্রা কুড়ায়। এভাবে দিন যায় , ভেতরে যেন বৃষ্টি হয়, কে যেন ঝুরি ধরে বড় হতে চায়!!অমানিশায় শহর ঘুমিয়ে আসে। অন্ধের পেটে গ্যালাক্সি বড় হতে চায়...
এখন পেঁচা ডাকে, রোজ পেঁচা ডাকে, পেট থেকে তলপেট বড় হয় ধীরে...সকলে পাগল জানে, দু পয়সা ছুড়ে দেয় পেটের বামে। "বামে এসে উঁকি দিন শিব"...এলোকেশ স্বপ্ন দেখে। কেউ তার কেউ নয়...
শ্যামমার্কার এসেছে আবার।পেটে তার শ্যামাপোকা কান্না।এলোকেশ দোকানের গা ঘেঁষে উঠেছে দাঁড়িয়ে। এলোকেশ সৃষ্টি বাঁচাবে তাই উঠেছে দাঁড়িয়ে। এলোকেশ ভাঙা কাঁচ দিয়ে চিরে দেয় শ্যামমার্কাদের মুখ। এলোকেশ অবৈধ গর্ভ জুড়ে কালী হয়ে ওঠে। এলোকেশের এক হাতে কাঁচ, অন্যহাতে মুদ্রা। এলোকেশ মা হয়ে ওঠে...এলোকেশ কালী হয়ে ওঠে....
কালী অর্থে আমরা জানি উগ্র, প্রচণ্ড এক শক্তির প্রকাশ। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তার রূপভেদ আছে।কিন্তু অশুভ শক্তির মূলকে নির্মূল করাই যে এর আসল মৌলিক দিক তা মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য। কালীঠাকুরের পরিচিতিও স্থানভেদে কিছুটা মতান্তর রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের কালীপুজো আর ভারতের অন্যান্য অংশের কালীপুজো বেশ ভিন্ন মাত্রার ও ভাবের। কিন্তু মূল কথা হল, দূর্গার মাতৃ রূপ, পার্বতীর সৌম্য রূপ থেকে এই দানবী কালীর রূপ এলো কেন? কারণ শক্তির বিক্ষেপ শক্তি ছাড়া ঘটতে পারে না। শক্তিকে প্রতিহত করতে শক্তিই প্রয়োজন। কেন নারী শক্তিকেই এত তীব্র রূপকে প্রয়োজন? আসলে বিজ্ঞান বলছে আবেগ হল এক শক্তিশালী উপাদান। আবেগ ভাবলেই আমরা ভাবতাম তা কোথাও যেন বিপর্যাস!আসলে Emotional intelligence এক চূড়ান্ত নির্মীয়মাণ উপাদান। মেয়েরা অবশ্যই অধিক আবেগপ্রবণ, দেহবোধে জটিল, হরমোনের এক সমষ্টিগত বিশেষ প্রক্রিয়া বিদ্যমান ফলে এই চূড়ান্ত শোষণকারী, সৃষ্টিশীল ক্ষমতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তি লাগে। এই শক্তির যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রকাশ ঘটে তা আসলেই ভয়ঙ্কর হতে পারে...
নারীদেহ -এর অন্তস্থ গঠন এতো শক্তি আবর্তের, যে আসলেই শক্তির সংগ্রহশালা তাই মেয়েদের শক্তির প্রকাশ বা আস্ফালন অপেক্ষাকৃত কম। তাই যদি নারীশক্তির উচ্চ প্রকাশ হয় তবে তা সর্বগ্রাসী হতেই পারে। এটা কেবল কোষজনিত, পেশিজনিত শক্তির কথা নয়। এই পৌরাণিক বেশ কিছু কাহিনির আসলে কিছু বাস্তবিক ভিত্তি আছে।
আমার এই নারী রূপ প্রসারিত প্রেমময়...বিক্ষেপে সেই নারী লড়াইয়ে এসে পড়ে...তখন গোটা সৃষ্টির প্রয়োজন হয় তাকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করার...কালের কালিমা মোছার আন্দোলিত রূপ।