দোঁহা

দেবব্রত রায়-এর কবিতা

 

 

থার্ডপার্সন  

মেয়েটি তার শরীরের সমস্ত স্বরবর্ণ এবং, ব্যঞ্জনবর্ণ গুলো একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পরিত্রাহি-চিৎকারে আমাকেই ডেকেছিলো 
আমার এই সাদামাটা জীবনে ট্রেন বাস ফেরিঘাটে আজ অব্দি স্কাইল্যাব, আইলা, লাতুর, গুজরাট, ৭১-৭২ নিয়ে কত ধুন্ধুমারই না ঘটেছে
কত মানুষকে দেখেছি শুধু, মরে যাবার ভয়েই শূন্য-মন্দিরে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে
কেউ কেউ চায়ের দোকানে গলা ফাটিয়েছে,মহান X Y Z - এর নামে।
গ্যারান্টি-বাবার পায়ের ধুলোভরা-মাদুলি শরীরে ধারণ করলেই, সমস্ত আপদ নাকি, দিকচক্রবালের ছায়াও মাড়াবে না
এভাবেই শিকড়হীন গাছ আঁকড়ে বেঁচে থাকার কত আকুলতাই দেখছি 

নিজেকে বোঝাই, আপৎকালে থার্ডপার্টি-ইন্সুরেন্স-হোল্ডারের মতোই, এক চুটকি হাওয়া ছাড়া আমি কিস্যু নই
অতএব মেয়েটার অসহায়-আর্তনাদ শুনেও, প্রতিবাদহীন শব্দে চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে প্রতিদিনের একটা অসংখ্য-ভীড়ে আমি মিশে যাই


অথমাটিকথা 

এরোপ্লেনগুলো লেখে এরোপ্লেনের কবিতা মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল এবং প্রান্তিক নাট-বল্টুগুলো লেখে  সবকিছু তাদের মতন করে 

নুন আনতে পান্তা ফুরনো-উঠোনে কেউ-কেউ কবিতা লেখে একটি তোবড়ানো ফুটোফাটা-বাটির, যার কোনো একটা ফুটো মেরামতি করতে গেলে নিশ্চিতভাবেই, সেখানে আরো কয়েকটা ফুটোর শিং গজিয়ে ওঠে 

এরকমই অনন্ত ফুটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া লাভের গুড়টুকু ডেঁয়োপিঁপড়েরাই শেষমেশ নিজেদের বাসায় তুলে নিয়ে যায় 

উড়োযানগুলো যতটা ডানার অহংকার মিশিয়ে আকাশে ওড়াউড়ি করে তার সিকিভাগ ভরসাও তারা চাকার উপর রাখে না 

কিন্তু মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল গুলো জানে, গুড়ের গন্ধমাখা টুটা-ফুটা-বাটির মেঠো উঠোনের উপর দিয়ে চাকা না-গড়ালে শুধুমাত্র, ডানার ভরসায় আকাশ ছুঁয়ে থাকাটা একেবারেই অসম্ভব 

ঘেমো তালপাতার শরীরজুড়ে বডিস্প্রে-র রামায়ণ-মহাভারত লেখা হলেও, ঘিনঘিনে পাঁকেই হেসে ওঠে ১০৮টি পদ্ম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন