দোঁহা

সূর্যাভ বিশ্বাসের কবিতা

 


অরণ্যলিপি 

আমরা একটু একটু করে ঢুকে পড়ছি একে অপরের ভেতর। বুনো জন্তুর মতো একটু একটু করে আমাদের শরীর পাল্টে যাচ্ছে শ্বাপদ সঙ্কুল অরণ্যে। মাথার ওপর মেঘ সরে যেতে যেতে থমকে দেখছে আমাদের। নীলচে অবদমন ছাড়িয়ে ভাঙচুর হওয়া আলোর টুকরো গুলো গেঁথে যাচ্ছে শরীরের খাঁজে খাঁজে। জেগে উঠছে গোপনতম স্থানের আর্দ্রবিলাস।শব্দহীন চিৎকার হেতু জাগছে না কেউ; কেবল এই শরীর দুটো লীন হয়ে যাচ্ছে কুয়াশার ভেতর; বাকল উঠে যাওয়া দেহজ লবণ বিশ্রাম নিতে নিতে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছে অর্জুনের দীর্ঘ ছায়ায়। তোমার শরীরে সমস্ত গান থেমে গেছে। সমস্ত কবিতা একে একে খুলে ফেলছে যাবতীয় উপমা ও অলংকার।আমরা আশ্চর্য আশ্লেষে মেলে দিচ্ছি আমাদের আলোকসন্ধানী ডালপালা। তবু তোমার শরীরে তৈরী হচ্ছে গোপন ছায়াঘর। পেটের ভেতর স্ফীত চাঁদ ঢুকে পড়ছে হামাগুড়ি দিতে দিতে। নখের মধ্যে যেভাবে তছনছ হয়ে যাওয়া সমস্ত শীৎকার আস্তে আস্তে ঢেউ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের অরণ্য সহবাসে...


ক্ষরণ

স্নানঘরে জল পড়ে বৃষ্টির মতো।
আমিও থাবার নীচে লুকিয়ে রাখছি এই রুমালের খিদে।
হরিণীর মতো তুমি নদী হয়ে ওঠো রোজ 
দ্বিপ্রাহরিক বেলাঘুমে।

আকাশের দিকে তাকালেই মনে হয় 
প্রতিদিন ছোটো হয়ে আসছে 
পাখিদের নিজস্ব পরিবার।

কারা যেন ছাদের ওপর ফেলে গ্যাছে পেটকাটি,
চাঁদিয়াল আরো কত কি। তোমার ঐ নীল ব্রা 
বুকহীন ঝুলে থাকে মধ্যবিত্ত তারে।

আমি শুধু দেখি।
বর্ষায় ভেঙে যাওয়া পিঁপড়ের ঘর 
ধৈর্য্য ফুরিয়ে আসে আজকাল দ্রুত।

খাবারের সন্ধানে নিমগ্ন চিনিকলে 
হলুদ সাইরেন বেজে ওঠে।
দেখতে দেখতে আরও ছোটো হয়ে আসে দিন।

রোদ মরে যায়। শূন্য চরে দুয়েকটা মন্থর বালিহাঁস ওড়াউড়ি করে। মরচে রঙের আলো স্তব্ধ আকাশে।
মেঘের স্তনের ভিড়ে যৌনচাঁদের ফালি ঢেকে রাখে মুখ।

মায়াদিঘীর জল কেঁপে ওঠে তক্ষকডাকে।
একেক দিন সন্ধ্যে নেমে আসার মতো করে দেখি
নেমে আসো তুমি ছাদ থেকে 
জটিল সিঁড়িভাঙা অঙ্ক ফুরিয়ে।

শরীরে হাওয়ার দাগ, ঘোলাটে চোখের নীচে 
ক্লান্ত ঘুঘুর বাসা, মুঠোভর্তি ক্ষয়।
অঘ্রাণ কুয়াশায় ভিজে আসে বুক।

পাতাদের মর্মরধ্বনি শুনে সচকিত কাঠবেড়ালি 
পাঁচিল ডিঙিয়ে গেলে বুঝি, এইমাত্র শিল্প নষ্ট হলো
শিল্প নষ্ট হয় এভাবেই 
প্রতিটা দৃশ্যপট খুব কাছে এলে তোমার মতোন...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন