দোঁহা

শিবালোক দাসের গুচ্ছ কবিতা

 


কিঞ্চিত পীযূষের ঋণের জন্য...(দিদিভাইকে)

অধিকার
 
সংবিধানে এমন কোনো অধিকারের কথা 
লেখা নেই যারা নীরবতার ভেতর ফুটিয়ে 
তুলতে পারে দুটো চোখ। 

হাজার ধাক্কা ছুঁড়ে দেবার জন্য কিছুটা 
অন্ধকার তো লিখতেই হয় পড়ন্ত হাতে!

গান ভেসে গেল জলে, 
তাই গুন দিয়ে সমস্ত অক্ষর জুড়েছি,
প্রজাপতি তার রং ছড়িয়ে গেছে একটি
বেওয়ারিশ লাশের উপর সারা দুপুর। 

আগুন, মাটি, অরণ্যের কোনো উপশম নেই, 
তবে তোমার কাছে কি নেই, দিদিভাই?


ওম 

কাঠ পুড়িয়ে আসবার পর যখন আমি
মাটিতে বসে ভাত খাই, 
তখন ইচ্ছে করে দু ফোঁটা ওম দিয়ে দিই। 
আমি চাই না ছুরি বিঁধে যাক কাল্পনিকে,
তার রক্তে যেন সুগন্ধি ফুটে ওঠে।

বেঁধে দাও সমস্ত ওল্টানো স্তম্ভ, 
আমি দূর থেকে আরো দূরে চলি...

ধারালো দাঁত, শ্বাপদ সংকুল...
চারিপাশটা ঘুরছে, ভরকেন্দ্রে শিহরণ...

সারাদিন কাঠ পুড়িয়ে যখন আমি ভাত খাই, 
তখন রক্তিম দানে লেগে থাকে তোমার ওম।


অন্তরীপ 

বালির ভেতর থেকে পুড়তে পুড়তে 
একদিন সামনে আসে কীর্তিনাশা। 

এখন ছাদ পেরোলেই বড় অসহায় লাগে...

ছড়ানো যে সমস্ত বন্ধ মুখে আজ দাম্ভিক 
তৃণের মতো এক অনাথ ছেদে যতটুকু 
রেখে এসেছি নৈর্ব্যক্তিক, সেটা তোমার। 

তারা রোজ এসে আমার জন্য দরজা খুলে দেয়।

না, মস্তিষ্কের ধারে ক্ষয়ে যাওয়া দাগের ভেতর
আমি জন্ম নেবার পর, আমার জীর্ণ হাতে কোনো 
দোষ ছিল না, জন্মকবচ এখনও অক্ষত। 

এক টুকরো রুটির বদলে গড়ে ওঠে অন্তরীপ...



ঋণ 

মগ্ন হবার মধ্যেও একটি ভাষা রয়েছে। 

ভেঙে ছড়িয়ে যাক সেটা মোটেই নয়,
তবে, গভীর খাদের পাশে দাঁড়ালে যখন 
নীরবে শ্বাস নিতে হয় অরণ্যের মতন,
আমি সেই নিয়ম লঙ্ঘনকে বলি ঋণ। 

মাঝে মাঝে এই কপালে হাত রেখে দেখে
নিতে হয় এখনও কোনো শূন্যতা আছে কিনা।

মনে নেই, বুঝি ?

একবার অতিক্রম করার পর 
তুমি কি হাত খুলে দেখতে না
যে নিরোগ দৈন্যের নাম স্নেহ?



খিদে 

আমার হাত দুটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে 
আমি ভাবান্তরকে আমার বাগানে 
দিতাম না একটু আশ্রয়। 
সে সিঁদুরে মেঘ দেখলে বড্ড ভয় পায়।

না, আর কোনো আফসোস নেই, 
আমি এখন সঙ্গে নিতেই পারি 
আমার সমস্ত স্বগত খিদে, বা 
কিছুটা লেখার জন্য পায়ে চাপ 
দিলে যে শোষণে তুমি আরোগ্য 
লাভ করো, এটাই দূর্বাদল হয়ে
মাটি ফুঁড়ে জন্ম নেয় প্রতিবার।

মৃত্যুর ভেতর মৃত্যুকে আমি দগ্ধ করি।



নির্ঝর 

ঘুমের ভেতর আমি বিস্ময়কে ধীরে ধীরে 
ব্রহ্মতালু অবধি পৌঁছে দিই।
কোনো বিচ্ছেদ তাদের মহাজাগতিক 
উল্লাসে বিঘ্ন ঘটাতে পারে না।

তবে রোজ আমি স্বখাত সলিলে মাথা 
ডুবিয়ে ফিরিয়ে আনি কোমা থেকে,
আর নির্ঝরের মুখে ছুঁড়ে দিই ছাই। 

তাদের কেউ ঘরে তোলে না। 
তারা রোজ রক্ত তোলে, অস্ফুটে। 

তবুও কোথাও কোথাও ছায়ার সাথে 
মিশে গেলে তোমাকে কে ফেরাবে?
নির্ঝরের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই। 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন