দোঁহা

আ-মরি বাংলা ভাষা

 


নীলম সামন্ত 

আ-মরি বাংলাভাষা! ওই যে মেয়েটা স্নান না করে বাসি জামায় এপাড়া ওপাড়া ছুটে এসে গোছাগোছা ঘেঁটুফুল তুলে ঘর সাজাচ্ছে সে জানেই না তার গলায় জড়িয়ে আছে বাংলার ধারক। নৌকার পাল অভিজাত  ছিন্ন বস্ত্রের মতো ঝুলে থাকে আকাশের নিচে কোন এক অবহেলায়৷ ও গো বাংলা ভাষা তুমি কি জানো ওই মেয়েটার ফ্রকে কতখানি লেগে আছ? তুমি জানবে কি করে। তুমি তো বিপন্নতার মাঠে হাহাকার সমেত একটা ড্রাগন ঘুড়ি উড়িয়ে আকাশ দখলের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। এসো, আজ তোমায় গল্প বলি। ইউরোপীয় দেশগুলোতে কতগুলো ভাষা? ফ্রান্সের ফ্রেঞ্চ, জার্মানির জার্মান, ইতালির ইতালিয়ান - সক্কলের আলাদা আলাদা।  তবে কি ওই সব দেশের মানুষেরা একে অপরের সাথে কথা বলে না?  বলে তো।  ইংরেজিতে বলে। আমাদের যেমন হিন্দি ওদেরও ইংরেজি। ওদের মাতৃভাষাগুলো বিপন্ন বুঝি?  

"...তুমি ঢেউ — হাওয়ার মতন! 
আগুনের মতো তুমি আসিয়াছো অন্তরের কাছে 
আশার ঠোঁটের মতো নিরাশার ভিজে চোখ চুমি
আমার বুকের পরে মুখ রেখে ঘুমায়েছো তুমি!"

আহা প্রেম, তুমি প্রজাপতির রূপ ছেড়ে কখনও ফড়িং হয়ে উড়ে চলো। মনখারাপের ভাষায় যখন সমুদ্র উগরে দেবে মাটির গন্ধ তখনও ওই ফ্রক পরা মেয়েটি বড় হবে। ফ্রক ছেড়ে শাড়ি পরবে। দেশলাই বাক্সের ভেতর জমিয়ে রাখবে অজস্র ঘুন পোকা। তারপরেও ইস্কুলের ঘন্টায় কমতি থাকবে না আর সেকেন্ডের হিসেবে রোদ এসে শুয়ে থাকবে চালতা ফুলের বৃন্তে। দিদিমণি চিৎকার করে শেখাতে চাইবে "হুইলস অন দ্য বাস গোস রাউন্ড অ্যান্ড রাউন্ড!" চাকার বৃত্তে কত কি ফিরে আসে। পুরাতনের গায়ে নতুনের জন্ম। ফিসফিস করে বলে তোতাপাখি। ততক্ষণে আমার ঘুম পেয়ে যাবে, গলার কাছে আটকে থাকবে 

"রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে..." 

রানার-রানার - তুমি যে জিভের আগায় ছুটতে থাকা ডাকনাম, কত কবিতা হয়ে গেছে, কত বসন্ত হারিয়ে যেতে যেতে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে আর পিঠ থেকে জেগে উঠছে সাধন সঙ্গের ফুটপাত। এখনও তো খিদের কথা বলে কত নাবালিকা, কত প্রেমিকা, কত কত গ্রহ নক্ষত্র। শুধু এক কোণে পড়ে থাক অব্যক্ত বিপন্ন-বিস্ময়। যেখানে জানালা নেই, এমনকি নক্ষত্রভূমিও নেই। তবে কি হারানোর ভয় আঙুলের ওপর বাড়িয়ে চলেছে উইঢিপি?  

ওহ রানার! ওই ফ্রক পরা মেয়েটার জামায় মাটি লেগে আছে, স্বচ্ছ পলি মাটি। কোন একদিন গোধুলি খাঁচায় ভরার নাম করে অক্ষরের সমষ্টিতে কত অপেক্ষার গরাদ বসিয়েছি, তুমি জানো অন্ধকারের শব্দ আছে। জানো, তুমিই তো জানো। চিঠিপত্রের মান অভিমান কাঁধে নিয়ে অন্ধকারের শব্দে তুমিই তো হাঁটতে শিখিয়েছিলে। তারপর থেকে সব চিঠি পত্রিকা হয়ে গেল। এখন ছ'হাজারেরও বেশি৷ তবে কিসের বিপন্নতা? বিপন্ন তুমি হে৷ তোমার ঝুমঝুমে আজ আর কেউ দরজায় এসে দাঁড়ায় না। রাজভিখারির ছদ্মবেশে বিপ্লবের গোপন নিয়ে দুধ বিক্রি করে। তখনও কি বিপন্নতায় বিপনি বাংলার মুখস্থ সংলাপ বহুপক্ষিকতার পতাকা উড়িয়ে দেবে!  আহা প্রেম! আহা! "আ-মরি বাংলা ভাষা"।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন