দোঁহা

রূপক চট্টোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা

 

চতুরঙ্গ 


১)
সময় হলেও আর বাড়ি ফিরেতে ইচ্ছে করে না।
ঘড়ির কাঁটা ভেঙে 
টুপটাপ নির্জনতা ঝরে। শুকনো পাতায়
পা ফেলে ফেলে কৈশোর খুঁজি, সদ্য ফোটা
কুঁড়ির ভেতর মায়ের ময়লা কাপড়ের গন্ধ খুঁজি।
দিকে দিকে গুমটি খুলে
বিপননে মশগুল হয়েছে মানুষ। 
পানের স্টলে বসে বখাটে হচ্ছে রোদ বান্ধব। 
ভালোবাসার চাতাল জলে ধুয়েমুছে
একটি ইচ্ছাপূর্ণ ঘট বসাই।
আমি বাড়ি নয়, একটি অনন্ত উৎসবের দিকে 
হেঁটে যেতে চাই।
...ক্রমশ! 


২) 
ধৃতি সেন শর্মা সাদাকালো টিভিতে 
খবর পড়তেন। কপালের ওপর টলটলে 
একগোছা চুল দুলে উঠত বৈকালিক সংবাদে!
তখন থেকেই আমি তার প্রেমিক। নব কিশোর।
তাকে দেখিনি কোনদিন। শুধু একটা 
টিভির সাদাকালোর ভেতর তার বসন্ত বিচ্ছুরণ দেখেছি। বয়সে তার ধারে কাছে
ছিলাম না। তবু মনে মনে ডিঙিয়ে যেতে চাইতাম 
সেলুলয়েড সভ্যতা। আংরাভাস নদী। চা বাগান।
বরফ শরীর নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যন্ত অপেক্ষা 
আমাকে এখনও ফার্ন বিকল করে রাখে।

২) 
এতোটাই জমি অধিগ্রহণ করেছি আমি।
এতোটাই পৃথিবীর পরিধি। এর বেশি নয়।
কবেকার সম্মোহনী আগুন 
টেনে নিয়ে যায় ওই যজ্ঞের দাউদাউ উচ্চারণে।
এইতো গিজার্ড গরজে ওঠা জলে
উষ্ণ হচ্ছে মন ভালোকরা বিন্ধ্যচল। রাত জুড়ানো 
রুটির পাশে একটি বিষন্ন শূন্যের ভ্রমরী 
গান গায়। আমার কান্না আসে। 
এতোটা কান্নাই অধিগত করেছি আমি
যতটা কাঁদলে দেহ বৃক্ষ পাখি এসে বসে।
সব মানুষ নাগরিক পোশাক থেকেও
বেশি ভালোবাসে মানুষের ঘেঁষে ঘেঁষে থাকা
হৃদয়ে হৃদয়ে। 


৪) 
ও আয়না তোর দুচোখ অন্ধ করেদি।
হাত বাড়িয়ে নাগাল পেলনা যে অপরূপ 
তার জলতরঙ্গ বেজে যায় রাতের গর্ভাগারে।

একটি অচল ঘড়ির পাশে চুপচাপ 
শুয়ে থাকে পৃথিবী। গায়ে শুকনো পাতার কোলাজ।

এক টুকরো আংরাভাস নদী
এক প্রস্থ জানালায় একটি অনন্ত প্রবহ রেখে
 ও মেয়ে কেন চলে গেলো?

অর্কিডের গুচ্ছাকার বাদামি চুলের আড়ালে দেখা মুখ, 
আমি কি আয়না হতে পারি না!



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন