দোঁহা

মেনোপজ

 


 জয়শ্রী দাস

ধুলোমাখা বইয়ের Shelve এ,  জীবনবিজ্ঞানের আনাচে কানাচে ফেলে আসা হাজার চোরাবালির  অতল গহ্বরে লক্ষ লক্ষ নারীর না বলা কথার বহিঃপ্রকাশ-মেনোপজ। পাড়ার প্রবীণ থেকে নবীন সবার জানা, আবার অনেকের কাছে জানা-অজানার ভিড়ে ঘুরতে থাকা এক অদ্ভুত পেন্ডুলাম, চলতে থাকে...চলতেই থাকে। 
           
গোল টেবিল বৈঠকের মধ্যবিত্ত বাড়ির চায়ের আসর বসিয়ে কোন জমজমাটি আড্ডা দেওয়ার মত বিষয় না হলেও, দাঁড়িপাল্লা তে বসানো জীবনের বাটখারা চাপিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বাজারে দর করার মতন বিষয় কিন্তু নয়...আমরা প্রত্যেকেই জানি যে  ৪০-৫০ বছর বয়সের মধ্যে নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়, এই বিশেষ প্রক্রিয়ার নাম মেনোপজ, শুধুই কি তাই? নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক চক্রব্যূহ? আমার সমালোচক বন্ধুদের যুক্তির তাগিদে যদি ধরিয়ে নিই, যে মেনোপজ নারীদের জীবনের একটা অধ্যায়, যা নারীকে তার জীবনের অন্য ধারায় বয়ে নিয়ে যায়, যা মাসিকের ঐ পাঁচদিনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়, কিন্তু সারাজীবন ধরে নারীর বুকে চেপে রাখা সেই সমস্ত মান-অভিমানের একলা আকাশ আজ "রাত- ভোর- বৃষ্টি" হয়ে জোয়ারের টানে ভাটা হয়ে নেমে আসছে জীবনের মোহনা। জীবন কখনও কারও জন্য থেমে থাকে না, তাই মেনোপজ হয়ে গেলেও একজন নারী যে সত্যি সত্যিই স্বাধীনতার নির্যাস কে পুরোপুরি শুষে নিয়ে জীবনের সাগরে নিমজ্জিত করলেই কি বলা যায়-"আমরা নারী, আমরা পারি।" আজও একজন নারী আরেকজন নারী কে কটাক্ষের মায়া জালে বন্দি করে? আজও বয়ঃসন্ধির বিচারে একটা মেয়েকে ঘিরে ফেলা হয় হাজার হাজার প্রশ্নের পরিধি দিয়ে। Career pressure, Marriage pressure, Baby planning, Body shaming...আর কি কোন বিষয় বাকী থাকলো, যা নারীদের আজীবন জরাজীর্ণ পাতার মত অবহেলায় পড়ে থাকতে হয় না? কিন্তু আর কতদিন? এই  Feminist আর anti feminists কে আর কতবার সাহিত্যের দোরগোড়ায় তুলে ধরব? 

জীবন খাতার প্রতি পাতায় আসতে থাকা অনেক বাঁধার গোলক-ধাঁধায়  আটকিয়ে কেন জানি না আজও নারীরা মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। জীবনের জয়গান গাইতে গিয়ে কেন সমাজের আবছা সূর্যাস্তের ছোঁয়ায় মূর্ছা পড়ে হাজার হাজার সরষে ফুল। নিকোটিনের ধোঁয়া হয়ে আজও উড়ে যায় জীবনের মরীচিকা। নীল-নির্জনের দমকা হাওয়াই আজও থমকে যায় শত শত দ্রৌপদীর লেলিহান শিখা। কাদম্বরীর সুইসাইড নোট যেন আজও প্রতিচ্ছবি হয়ে জ্জ্বলজ্জ্বল করে "শেষ হয়েও হইল না শেষ।"
         
জীবন যেন যৌবনের ভাড়াটিয়া না হয়ে আজ বার্ধক্যের কলিংবেল বাজিয়ে বিষণ্ণতার স্রোত হয়ে মেতে উঠছে খেলাঘরের অচলায়তনে...যে সমস্ত নিয়মের বন্ধন কাটিয়ে গড়তে চাই চিলেকোঠার ব্যাস্ত দুপুরের গভীর বিকেল- "বেলাশুরু" আর "বেলাশেষে" এর মাঝে তুলে ধরতে চাই এক অজানা ইতিহাস- বাঁচিয়ে রাখতে চাই জীবনের সমস্ত দেয়া- নেওয়া গুলোকে "এক আকাশের নীচে।" গীতবিতানের সুর মাতিয়ে দেয় আস্ত এক ক্যানভাস রাঙানো এক বিষাক্ত জীবনকে। 
 ঝরতে থাকা চোখের জলের ফোঁটা সাক্ষী থাকুক - "ফুল ফুটুক, নাই বা ফুটুক, আজ বসন্ত।" "ক্লান্ত, মুহ্যমান পথিকৃৎ হয়ে" "শেষের কবিতা" তুলে ধরুক মিথ্যা কথার শহরে এক আস্ত অঞ্জন দত্ত কে, যাদের লেখনী তুলে ধরে হাজার বিনিদ্র রজনীর বেলাবোস কে। হয়তো আমার আমি কে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি শত শত উদ্বাস্তুদের আঙিনায়-


     

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন