শুভাঙ্কুর মিত্র
আরো এক দফা ভোট । ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে রাজনৈতিক প্রচার বিষয়ক মিমের ছড়াছড়ি । তীব্র শ্লেষ আর তির্যক কটাক্ষ মেশানো অন্তমিল ছড়ার সাথে চিত্তাকর্ষক কার্টুন, শোভা পাচ্ছে পাড়ার দেওয়ালে দেওয়ালে । সব ছড়ার মধ্যে উৎকৃষ্ট রসবোধের খোঁজ না পেলেও, ওই দেওয়ালে চোখ আঁটকেছে নিঃসন্দেহে । ভোটের প্রচারে ওই চোখ টানাই যে সব চেয়ে বড়ো কাজ, সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই । আর কবিতাপ্রেমী বাঙালির, এই বাঙালিয়ানার জোড়েই, দেওয়াল লিখনে এগিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ । থাকবে নাই বা কেন? ছড়াগুলোতে তো শুধু রাজনীতিই নয়, জড়িয়ে আছে ইতিহাস, আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতও । কিছু কিছু ছড়া দেওয়ালের বাইরে গিয়ে, ভোটের প্রচারকে আরো ধারালো করতে, সঙ্গী হয়েছে মিটিং বা মিছিলে । এই লেখা, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহিত এইরকম কিছু ছড়ার কোলাজ বলা যেতে পারে । মূল উদ্দেশ্য, দেওয়াল লিখনের, সেকাল আর একাল বোঝার চেষ্টা করা ।
যতদূর জানা যায়, দাদাঠাকুর মানে শরৎচন্দ্র পণ্ডিতই বোধ হয়, ভোটের ছড়ার পথিকৃৎ । কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে “কর-পরশনে বিপরীত রীত" নামে ছড়ায় লিখেছিলেন, “যিনি তস্কর দলপতি দৈত্যগুরু/ যিনি বাক্যদানে আজি কল্পতরু/ ঠেলি নর্দমা কর্দমে অর্ধরাতে/ কত মর্দজনে ফিরে ফর্দ হাতে” । এছাড়াও “ভোট রঙ্গের গান” নামে কবিতা লিখেছেন । “দাদাঠাকুর” চলচ্চিত্র যারা দেখেছেন, তারা হয়তো আরো অনেক কিছুই মনে করতে পারবেন । স্বাধীনতার পরে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত । তখন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলায় স্লোগান হিসেবে বেছে নিয়েছিলো, “ভোট দেবেন কিসে/ কাস্তে ধানের শীষে” । বলাই বাহুল্য, কাস্তে আর ধানের শীষ, তখন কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার নির্বাচনী প্রতীক । খুব সম্ভবত, পূর্ণেন্দু পত্রী এই স্লোগানটি লিখেছিলেন । সেই সময় কংগ্রেসের প্রতীক ছিল জোড়া বলদ । কংগ্রেসের যখন লিখলো, “ভোট দেবেন কোথায়/ জোড়া বলদ যেথায়”, কমিউনিস্টদের পাল্টা ছড়া, “কংগ্রেসিদের গোড়ায় গলত/ তাই নিয়েছে জোড়া বলদ” আসতে দেরি হয়নি । সৌজন্যের সীমারেখা অতিক্রম করে, ব্যক্তি আক্রমণও চলতো ভালোই । বিধান চন্দ্র রায় তখন মুখ্যমন্ত্রী । তার বন্ধু নলিনী রঞ্জন সরকার । বামপন্থীরা ছড়া লিখলো, “বাংলার কুলনারী হও সাবধান/ বাংলার মসনদে নলিনী-বিধান” । বলাই বাহুল্য, গুণী জনেরা ধিক্কার জানিয়েছিলেন, এমন স্লোগানকে । ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া ভেঙ্গে জন্ম নেয়, কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট) । যাকে আমরা সিপিএম বলে জানি । তাদের নির্বাচনী প্রতীক, কাস্তে-হাতুড়ি-তারা । সিপিএম লিখলো, “জোড়া বলদের দুধ নেই/ কংগ্রেসেরও ভোট নেই/ ভোট দিন বাঁচতে/ তারা হাতুড়ি কাস্তে” । ১৯৬২ তে ভারত-চীন যুদ্ধ চলছে । বামেরা দ্বিধায় । দোষী কে? ভারত না চীন? কংগ্রেস লিখলো, “গড়তে দেশ, রুখতে চীন/ কংগ্রেসকে ভোট দিন” । সিপিএমের হয়ে ছাত্র যুব নেতা, শৈবাল মিত্র লিখলেন, “ঢের গড়েছো দেশ/ ঢের রুখেছো চীন/ মাথার ওপর চেপে আছে/ আমেরিকার ঋণ" । এই লেখার পরিপ্রেক্ষিতটাও মনে রাখতে হবে । ১৯৬৬-৬৭ সালে খাদ্য আন্দোলন শুরু হয় । ভারত তখনো সোভিয়েত ক্যাম্পে যোগ দেয়নি । আমেরিকা থেকে পি এল ৪৮০ নামে একরকম গম নিয়ে আসতে হয়েছিলো । তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, কংগ্রেসের প্রফুল্ল সেন । তিনি বলেছিলেন, “হয় কম খাও, নয় গম খাও” । সাথে তার পরামর্শ ছিলো, গমের সাথে খেতে হবে বিভিন্ন আনাজ, মানে আলু, কাঁচকলা, বেগুন এইসব । বামেরা তাকে কটাক্ষ করে লিখলো, “বাজার থেকে বেগুন কিনে/ মনটা হলো প্রফুল্ল/ ঘরে এসে দেখি/ এতো কানা অতুল্য” এবং “ইন্দিরা মাসি, বাজায় কাঁসি/ প্রফুল্ল বাজায় ঢোল/ আয় অতুল্য, ভাত খাবি আয়/ কানা বেগুনের ঝোল” । স্বাধীনতা সংগ্রামী অতুল্য ঘোষের একটি চোখ নষ্ট হয়েছিলো, ইংরেজদের বেয়োনেটের খোঁচায় । ব্যক্তি আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পেলেন না তিনিও । কংগ্রেসের জবাবও তৈরী ছিল, “অনিলা মাসি বাজায় কাঁসি/ জ্যোতি বাজায় ঢোল/ আয় প্রমোদ ভাত খাবি আয়/ মাগুর মাছের ঝোল।“. খাদ্য আন্দোলনের সময়ে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের একটি কবিতার অংশ, বামপন্থীরা প্রায়শঃই ব্যবহার করতো । সেটা ছিলো, “পেট জ্বলছে/ ক্ষেত জ্বলছে/ হুজুর শুনে রাখুন/ এবার খাজনা মাফ না হলে/ জ্বলে উঠবে আগুন.” আমেরিকা-ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন চলছে । সিপিএমের স্লোগান হলো, “তোমার নাম, আমার নাম/ ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম” । কংগ্রেসিরা ব্যঙ্গ করে লিখলো, “বলতে বলতে ভিয়েতনাম/ ভুলে গিয়েছে বাপের নাম” । ১৯৬৬ সালে মিস ওয়ার্ল্ড হন, ভারতের রিতা ফারিয়া । মার্কিন সৈন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে রিতা ফারিয়াকে ভিয়েতনামে নিয়ে যাওয়া হয় । ১৯৬৯ এর ভোটের আগে, সিপিএম “এলাটিন বেলাটিন” এর সুরে গান লিখলো, “রিতা ফারিয়া বিশ্ব সুন্দরী হইলো/ ভিয়েতনামে গাইলো/ টন টন গম আইলো/ খাও ভাই এবার মাইলো" । মাইলো একটি খাদ্যশস্য, যাকে গমের সাবস্টিটিউট বলে ধরা হলেও, মূলত সেই সময় গরু বাছুরদেরকেই খাওয়ানো হতো । কংগ্রেসের আভা মাইতি যখন মেদিনীপুরে মাইলো বিলি করছেন, তখনও একই সুরে, আরো একটি গান জনপ্রিয় হলো, “আভা দিদির মাইলো/ সবাই মিলে খাইলো” । ১৯৬৯ এ কংগ্রেস ভেঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী তৈরী করলেন, নব কংগ্রেস । নিচুতলার লোকেরা তখন পুরোনো কংগ্রেসকে “আদি কংগ্রেস” আর ইন্দিরার কংগ্রেসকে “মাদী কংগ্রেস” বলে ডাকতো । মহিলা অর্থেই “মাদী” শব্দের প্রয়োগ । এর আগে অবশ্য, ১৯৬৭ তে বাংলায়, প্রথমবার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে পরাজিত করে, ক্ষমতায় এসেছে যুক্তফ্রন্ট । ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে, বাংলা কংগ্রেস গঠন করে মুখ্যমন্ত্রী হন অজয় মুখার্জী । উপমুখ্যমন্ত্রী ইউনাইটেড লেফট ফ্রন্টের জ্যোতি বসু । কংগ্রেস যুক্তফ্রন্টকে কটাক্ষ করে লিখলো, “যুক্তফ্রন্টে কি পেলাম/ গুলি, বুলি, লাল সেলাম” । বামেদের সাথে অজয় মুখার্জীর জোটকে উদ্দ্যেশ্য করে লেখা হলো, “শুনো হে, দেশের ভাই/ যুক্তফ্রন্টে গদিই সত্য/ দেশপ্রেম কিছু নাই” । যুক্তফ্রন্ট, অন্নদাশঙ্করের “তেলের শিশি" ছড়ার প্যারডি বানিয়ে জবাব দিলো, “কিল মারেনি, ঢিল মেরেছে!/ তাতেই তোমরা রুষ্ট হলে/তোমরা যখন হুকুম দিয়ে / চালাও গুলি দুষ্ট বলে/ তার বেলা?” ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে এস.এ. ডাঙ্গের নেতৃত্বে, সিপিআই যোগ দেয় কংগ্রেসের সাথে । যে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সিপিআই) কিছুদিন আগেও, যুক্তফ্রন্টের শরিক ছিলো, তারাই প্রার্থী দেয় সিপিএমের বিরুদ্ধে । ১৯৭২ সালে জ্যোতি বসু, সিপিআই এর শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্য্যের কাছে প্রথমবার নির্বাচনে পরাজিত হন । ইন্দিরা কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক তখন ছিলো, গাই বাছুর । সিপিএম ১৯৭১ -৭২ সালে নির্বাচনের আগে, তাই ছড়া লিখেছিলো, “আদি, মাদী, ডাঙ্গে/ ঠাঁই নেই বঙ্গে” । এখানে “আদি” মানে আদি কংগ্রেস, “মাদী” মানে ইন্দিরা কংগ্রেস আর ডাঙ্গে মানে সিপিআই । সাথে ছিলো, “দিল্লি থেকে এলো গাই/ সঙ্গে বাছুর সিপিআই” । কংগ্রেসের জবাব ছিলো, “চীনের চিহ্ন কাস্তে হাতুড়ি/ পাকিস্তানের তারা/ এখনো কি বলতে হবে/ দেশের শত্রু কারা?" । এর কিছু পরে, ইন্দিরা কংগ্রেস যখন জ্যোতি বসুকে আক্রমণ করে লিখলো, “চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে/ ছাদনা তলায় কে?/ হাতি নাচছে, ঘোড়া নাচছে/ জ্যোতিবাবুর বিয়ে", বামেরা সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিলো, “ঠিক বলেছিস, ঠিক বলেছিস/ ঠিক বলেছিস ভাই/ ইন্দিরাকে ছাদনাতলায়/ সাজিয়ে আনা চাই” । ব্যক্তি আক্রমণ এখানেই থেমে থাকলো না । জ্যোতি বাবুকে কটাক্ষ করে লেখা হলো, “দেহের শত্রু পাঁচড়া খোস/ দেশের শত্রু, জ্যোতি বোস" । উল্টোদিকে, বামেরা ইন্দিরা আর সঞ্জয় গান্ধীকে নিয়ে লিখলো, “বড়োলোকের বেটি লো/ সাদা কালো চুল/ বাপের কোটে গোঁজা ছিল/ লাল গোলাপ ফুল/ সেই বেটির বেটা লো/ পাতলা পাতলা চুল/ দেশ জুড়ে ফুটিয়ে দিলো/ হলুদ সর্ষে ফুল” । আশাবাদী বামেরা, নির্বাচনের আগে লিখলো, “হবে বাম, হবে বাম/ হবে বাম, হবে হবে” । কংগ্রেসীদের তৎক্ষণাৎ উত্তর, “হবে কষ্ট, হবে কষ্ট/ হবে কষ্ট, হবে হবে” । ১৯৭৭ এ জরুরী অবস্থা জারি করার খেসারত দিয়ে রায়বেরিলি থেকে হেরে গেলেন, ইন্দিরা গান্ধী । পরে নিৰ্বাচনী প্রতীক হিসেবে ইন্দিরা কংগ্রেস বেছে নেয়, হাত চিহ্ন । বামেরা লিখলো, “ঝোঁকের মাথায় নিলি হাত/ এবার ভোটে হবি কাত" এবং “শুনলেও হাসি পায়/ কাটা হাতে ভোট চায়”। তিন বছর পরেই, উপনির্বাচনে চিকমাগালুর থেকে জিতলেন, ইন্দিরা । কংগ্রেসিরা লিখলো, “রায়বেরিলি ভুল করেছে/ চিকমাগালুর করেনি/ সিপিএম জেনে রেখো/ ইন্দিরাজি মরেনি” । শুধু রাজনৈতিক দলকেই নয়, নকশাল পিরিয়ডে স্লোগান, লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল পুলিশকেও । “পুলিশ তুমি যতই মারো/ মাইনে তোমার একশো বারো”, প্রায় সকলের মুখে মুখে ঘুরতো । নব্বইএর দশকেও রাস্তায় রাস্তায় কৌটো নিয়ে চাঁদা তুলতো সিপিএম । কংগ্রেসিরা ছাড়েনি । লিখেছিলো, “দিনের বেলায়, কৌটো নাড়ে/ রাতের বেলায় ফিস্ট/ ভোটের সময় এরাই বলে/ আমরা কমিউনিস্ট” । তেহেলকার পরে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের বিপক্ষেও লেখা হয়েছিল, “নোটন নোটন মন্ত্রীগুলো/ ঝোটন বেঁধেছে/ ওপারেতে জর্জ-জয়া ভেসে উঠেছে/ কে দেখেছে কে দেখেছে?/ তেহেলকা দেখেছে / তেহেলকার হাতে ডট কম ছিলো/ ছুঁড়ে মেরেছে/ দিদির বড্ডো লেগেছে” । “দিদি” মানে মমতা ব্যানার্জী । তখন উনি অটলবিহারী মন্ত্রীসভার সদস্যা ।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল রাজনৈতিক পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে একটি স্লোগান দিয়ে । সেটা ছিলো, “ঘাসের ওপর জোড়া ফুল/ বাংলা বাঁচাবে তৃণমূল” । ২০০৫ সালে জনগণকে ভরসা জুগিয়ে ভোট বাক্সে প্রতিফলন ঘটানোর ডাক দিয়ে, তৃণমূলের স্লোগান ছিল, ‘চুপচাপ /ফুলে ছাপ।’ সিঙ্গুর আন্দোলন যখন চরমে, তৃণমূল লিখলো “টাটা আর ন্যানো গেলো/ বাংলা হলো শুদ্ধ/ আর কটা দিন সবুর করো/ এবার যাবে বুদ্ধ” । বামেদের জবাব ছিলো, “দিদিরা যখন ন্যানো তাড়ায় / দাদারা যায় সাথে/ বেকার যুবক ভোট দেবে না/ ফুলে কিংবা হাতে” । তৃণমূলের আরো একটি ছড়া, “কাল ছিলো লাল খালি/ আজ ফুলে যায় ভরে"ও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল । তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে লেখা হলো, “সূর্য কাঁদিয়া কহে/বিমান আমার ভাই রে/ বুদ্ধকে বলে দিও/ ভারতে বামেরা আর নাই রে” । ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে, তৃণমূলের স্লোগান ছিলো, “ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল/ আবার আসছে তৃণমূল” । সাথে ছিলো, “হাত, হাতুড়ি কাস্তে তারা/ এবার হবে বাংলা ছাড়া/ ফুটবে নাকো পদ্মফুল/ ভারত গড়বে তৃনমূল” । দেওয়ালে আবছা হয়ে থাকা, বিরোধীদের কিছু লেখা, কিন্তু এখনো খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে । যেমন, “লুট হয়েছে/ হাজার কোটি / কে খেয়েছে?/ হাওয়াই চটি “, “একই বৃন্তে দুটি ফুল/ চিটফান্ড আর তৃণমূল” কিংবা “একি পরিবর্তন আনলে কাকা/ বাজার গিয়ে পকেট ফাঁকা” । মুঠোফোন আসার পরে অবশ্য জনপ্রিয় হয়েছে নির্বাচনী গান । ২০২১ এর নতুন গান সবার চেনা । “বাইরে থেকে বর্গী আসে/ নিয়ম করে প্রতি মাসে/ আমিও আছি, তুমিও রবে/ বন্ধু এবার খেলা হবে” । সুকান্ত ভট্টাচার্য বা সুভাষ মুখোপাধ্যায় থেকে সরে এসে, অনেকটা মরিয়া হয়েই ২০২১ এ বামেরা ফিরেছিলো, “টুম্পা সোনা”য় । ভীষণ ভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল, সেই প্যারডিও । বিজেপি পিছিয়ে থাকবে কেন? “বেলা চাও” এর প্যারডি তৈরী হলো, “পিসি যাও, পিসি যাও.." । এখন সব দলেরই ভোট প্রচারে অংশ নিচ্ছে আইটি সেল । সেখানে মিমের আধিক্যই বেশি । মিমের সুবিধে হচ্ছে, ছবির সাথে পছন্দ মতো লেখা জুড়ে নেওয়া যায় । যেহেতু কার্টুন বা ছবি, এই লেখার পরিধির বাইরে, তাই মুঠোফোনে ভেসে আসা, ছড়ার ছড়াছড়িই থাকুক শুধু । সাম্প্রতিক সময়ে, তৃণমূলের লেখা ছিলো, “চকচকে রাস্তা/ ঝলমলে আলো /জনগণ বলছে/ তৃণমূলই ভালো” । বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “অমিত মোদির ভোটের গাড়ি/ বোঝাই করা টাকার হাঁড়ি/ গাড়ি চালায় টিভির চ্যানেল/ সঙ্গে থাকে কাগজ প্যানেল” । একসাথে বাম আর বিজেপির বিরুদ্ধে লেখা হলো, “চিড়িয়াখানায় বিজেপি/ জাদুঘরে বাম/ এই বাংলার ঘরে ঘরে/ তৃণমূলের নাম” । বাম-কংগ্রেসের জোটের পরে লেখা হয়েছিল, “ভোটে নতুন চমক/ সাপে নেউলের সন্ধি/ বাম কংগ্রেস জোট বেঁধেছে/ মাথায় নতুন ফন্দি।’ সরাসরি মোদিকে উদ্দেশ্য করে নির্বিষ লেখাটা কিন্তু বেশ মজার, “মোদি তুমি দুষ্টু লোক/ তোমার মাথায় উকুন হোক” । এছাড়াও প্রচার পেয়েছে, “কারখানা হলে, কাজ পাবে/ বিদ্যালয় হলে, শিক্ষা/ হাসপাতাল হলে, চিকিৎসা পাবে/ মন্দির হলে, ভিক্ষা” । সিপিএমের নতুন স্লোগানগুলির একটি হল , “শত কমরেডকে মারলি তোরা/ আদর্শটাকে পারবি?/ মারবি যত বাড়বে মিছিল/ মার কত মার মারবি” । এছাড়াও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে এই ছড়া গুলিতে, "আরাবুল থেকে মনিরুল /সন্ত্রাসের নাম তৃণমূল", "পরিবর্তনের কেষ্ট /পুলিশের চোখে শ্রেষ্ঠ", "ডেলোর আড্ডা আর নাই /ছবি আঁকা বন্ধ তাই", "সারদা থেকে শিলিগুড়ি /ধামা চাপা দিদির চুরি", "চোর ধরেছে সিবিআই /চোরেরা সব দিদির ভাই "৷ একই ছবি উঠে আসে, বিজেপির নতুন ছড়াগুলিতেও, “যে বেকারের জ্বলছে পেট / ঘুষ না দেওয়ায় পায়নি টেট/সেই বেকার দিচ্ছে ডাক / তৃণমূল সরকার নিপাত যাক", "মা -মাটি -মানুষের আর্জি/রেহাই দাও মমতা ব্যানার্জি", "একই বৃন্তে তিনটি ফুল / সিপিএম -কংগ্রেস -তৃণমূল/ তিনটি দলের একই গুণ /দুর্নীতি আর মানুষ খুন/ তাই আর নয় ভুল /এ বার শুধুই পদ্মফুল" ।
ভোটের প্রচারে চলবে এই ছড়ার যুদ্ধ । মুচকি হেসে, কবিতাপ্রেমী বাঙালি, অন্তমিলের ছন্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে । জমে উঠবে বাঙালির ভোট । সব শেষে, জয় হবে গণতন্ত্রের । নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দেওয়ালে লেখা একটা ছড়া তাই, না বললেই নয় ।
"কেউ পড়বে একটু পিছিয়ে/ কারো বা হবে জয়/ গণতন্ত্রের রায় মেনে তাই/ হোক সমন্বয়" ।