দোঁহা

ভাটিপুত্র মিহির সেনগুপ্ত : এক বরিশাইল্যার শ্রদ্ধার্ঘ্য

 


মালবিকা মিত্র

নিজেকে ভাটিপুত্র বলতে ভালবাসতেন। ভাটির টানে তার হৃদয় সদা চঞ্চল। ভাটির গন্ধ তার শরীরে, ভাটির সুর ও স্বর তার কথার পরতে পরতে। আর একবার যদি কেউ ভাটি পুত্রের যথাযথ স্থানে খোঁচা মারতে পারতো, গলগল করে বেড়িয়ে আসতো ভাটির গল্পকথার মণি মাণিক্য। মানুষটার কলমে ছিল যাদু, ধূলো কে সোনা করার মন্ত্র। ঝুলিতে ছিল কতো না কাহিনী। আর যখন তিনি বের করে আনতেন সে যেন টাটকা সরস রসবড়া। অথচ বিনয়ের সাথে বলতেন আমি তো নিমিত্ত মাত্র। গল্প তো ভাটির মানুষের তৈরি। বলতেন "পরের চাউল পরের কলা বত্ত করেন কাঞ্চন মালা"। উল্লেখ থাকে যে, তাঁর সব গল্প কথার কেন্দ্রে অবস্থান করে নিম্নবর্গ, যা মিহির দার কথায় অপবর্গ।

মিহিরদার নিজের কথায়, "ভাটিপুত্র যশোপ্রার্থী লেখক নয়। মূলত সে লেখকই নয়। সে শুধু পুরোনো দিনের গল্প শোনায়। পরের চাউল পরের কলায় তার বত্ত...সে যশ বা কাঞ্চন মূল্যে লেখে না। সে যা ভালোবাসে তাই দশেধম্মকে চাখায়, নিজেও চাখে। সে ভাবে আহা, এই ভালোলাগা টুকু সবার জন্য যদি একটু ধরে রাখতে পারি। সবার সাথে ভাগ করে যদি এই 'রস টুকু' একটু 'আউড়াইয়া' চাখতে চাখাতে পারি।" আমিও সেই চাখতে ও চাখাতে অক্ষম প্রয়াস চালালাম। চাখাতে না পারি, গেলালাম।

◆ বহু বরিশাইল্যার কাছে শোনা গল্প, শোনা একটা প্রবাদ "মিললো না, চিড়লো তো" এই সুবাদে চেখে নেওয়া যাক। 

সাদা সিধা কানাই প্রতিদিন সকালে দুধ নিয়ে বের হয় লোকের বাড়ি বাড়ি। প্রথমেই দেখা হবে পানের ঝুড়ি মাথায় নগেনের সাথে, 
--হেই কানাই তর হাতে কি? নগেনের প্রশ্ন। 
-- ক্যান দুধ। 
-- তুই খা আমার মুত, নগেনের সটান জবাব। 
নিত্যদিনের সাত সকালে এই মুত খাওয়ার ফাইজলামি কানাইয়ের কাছে অসহ্য। বাড়িতে মাথা গরম করে, অশান্তি করে। বৌ কে সব কথা বলে। অবশেষে বৌ সব শুনে সমাধান সূত্র জানায়। 
-- নগেনের সাথে দেখা হইলে আগেই তুমি কইবা, "নগেন তর মাথায় কি?" ও যেই কইবো "পান"। তুমি লগে লগে কইবা "কাটি তর কান"। 
স্ত্রী বুদ্ধিতে পুলকিত কানাই সারা রাত আওড়াতে থাকে "কাটি তর কান...কাটি তর কান"। পরদিন সকালের কথা ভেবে উত্তেজনায় ছটফট করে। সাত তাড়াতাড়ি ভোর থাকতে দুধের বালতি হাতে বেড়িয়ে পরে। আওড়াতে থাকে কাটি তর কান... কাটি তর কান...কাটি তর কান... কাটি তর কান। 

ওই নগেন আসছে। কানাই আগে ভাগে প্রশ্ন করে
-- অই নগেন, তর মাথায় কি? 
-- ক্যান্, পাআআন। 
এই যাহ। কানাই ভুলে গেছে কি জানি কি জানি কইবো সে। কিন্তু সে দমবার পাত্র নয়, সে ভাটিপুত্র। সে বলে ওঠে, 
-- তর সোগায় খেজুর গাছ। 
-- মিললো কই? মিললো না তো...
-- চিড়লো তো।

◆ মিহির দা বলতেন, "কথা এক অনন্ত প্রবাহ। আমরা মনুষ্যের শব্দরূপ ভেলায় সেই প্রবাহে জীবন বৈতরণী পার হই... নগরমার্গী শব্দ ভেলা ময়ূরপঙ্খী বজরার মত। ...সব খাড়িতে বজরা ঢোকে না, তখন ডিঙার দরকার হয়।"

ভাটির বাক্যালাপে শহুরে মান্য ভাষা ও মান্য শ্রেণীর লোকেরা নাকে মুখে চাপা দেয়। শালীনতার ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নেয়। আর ভাটির অপবর্গের কথা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু এরাই আড়ালে এইসব কথার রসাস্বাদন করতেন। 

আমি বলি কি, মান্য শ্রেণীর কেউ কেউ অপবর্গের ভাষাকে মান্য ভাষায় অনুবাদও করেছেন। অশোক মিত্রের অনুবাদ "পশ্চাদ্দেশে নাই চর্মাবরণ, রাধাকৃষ্ণের নামোচ্চারণ"। ভাটির অপভাষায় যেটা হলো "সোগায় নাই চাম রাধাকৃষ্ণের নাম।" অনুরূপ আর একটি শোলোক : "আঙ্গো লিখতে পোঙ্গা ফাটে, গঙ্গাচরণ নাম।"

◆ পায়ু বা মলদ্বার নিয়ে কতনা চর্চা। অতি সাইরা... ঝোলাসোগা। এই সোগা আবার কখনো হোগা। কারণ,
-- বরিশাইল্যারা স এরে কয় হ। 
-- কইবো কোন হালায়? 
-- ওই যে আপনে কইলেন হ। 
-- এইয়া আপনের হোনতে ভুল। 
তা ঘটনা হইসে ভাটিপুত্র রমনীবাবু দেশ ভাগের পর এই বাংলায় এসে খুবই মনমরা। একদিন বুঝি একটু বেশি বিমর্ষ। অপর ভাটিপুত্র হরিপদ বাবুর সম্বোধন, 
-- ও রমনী, হইসে ডা কি ? মুখখান অমন ত্যালা হাড়ির সোগার লাহন দ্যাহায় ক্যান? 
-- রাজেন আমারে গাইল দেসে, হোগা কইসে। 
-- কও কি! এইডা তো ভাল কথা না। রিফিউজি হইসি বইল্যা কি হ্যাষে হালা মাসওয়ালা বেহারিতেও গাইল পারবো! না, ব্যাফারডা দ্যাহন লাগে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, ব্যাপারটা হলো, রমনীবাবু বাজারে গিয়ে মাছওয়ালা রাজিন্দর প্রসাদকে জিজ্ঞেস করে, 
-- অঅঅ রাজেন কাতল কতঅ কইরা? 
-- ছ' রুপয়া কিলো। 
-- টুউউ মাচ্।
ব্যাস রাজেন দুটো মাছ রমনীবাবুকে ধরিয়ে দেয়। রমনীবাবু বলে আমি মাস নিমুনা। আমি মাস চাইসি? রাজেন বলে, আপ তো খুদ দো মছলি মাঙ্গা, অব ওয়াপস নেহি হোগা। রমনীবাবু চেঁচিয়ে ওঠে তুমি আমারে গাইল দিলা ক্যান! হোগা কইলা!

◆ বরিশাইল্যা গোঁ বা ঘাউড়া বরিশাল কথাটা প্রচলিত। এরা বড়োই জিদ্দি। ওই যে গান আছে "না যামু যামুনা আমি মাস(ছ) না ধইরা, না যাম না যাম।" খাইসরাৎ এর দোষ। এ নিয়ে কতো গাল গল্প প্রবচন। "হাইদিসে ভুল নাই"। 

এইডাও ভাটির গইপ্য। নদী নালা খালের বিছানো জাল। নৌকায় নৌকায় পাইকারি বাজার। বড়ো দুই সেরের ধামায় ভরে মাল তুলে অন্য নৌকায় দিচ্ছে বিক্রেতা, এক এক এক এক... দুই দুই দুই দুই... তিন তিন তিন তিন...ক্রেতা নৌকায় শ্যেন দৃষ্টিতে মাপের দিকে তাকিয়ে আছে বৈঠা হাতে। মাপ চলছে "তেইদিস তেইদিস তেইদিস তেইদিস... চইদিস চইদিস চইদিস চইদিস... পাইদিস পাইদিস পাইদিস পাইদিস...হাইদিস হা ই দি স... "ক্রেতা নৌকার বৈঠা দিয়ে সজোরে বিক্রেতার ওপর আঘাত "সয়দিস গেল কই? মোর বাপে খাইসে?" আচমকা আঘাতে বিক্রেতা জলে পড়ে খাবি খায়, জল কাদা মেখে উঠে আসে তখনো মুখে তার "হাইদিস... হাইদিস..." আবারও একটা বৈঠার ঘা। তার পরেও জলে খাবি খেতে খেতে "হাইদিস... হাইদিস..." আউড়ে চলে। বরিশাইল্যা ঘাউড়া।

◆ ঘাউড়ামি তে রমনীবাবু কম যান না। এদেশে উদ্বাস্তু হয়ে এলেও পাস্তুর ল্যবরেটরীর চাকরিটা ছিল পুরানো। পূর্বাঞ্চলের সেলস ম্যানেজার ছিলেন। বাংলা বিহার আসাম উড়িষ্যার দায়িত্বে। বছরে দুই বার, দুর্গাপূজা আর বৈশাখ মাসে আমের ছুটিতে। তাঁকে বাজারে পেলে এদিকে হাঁক "বড়ো কত্তা আপনার জন্যই রাখা আছে...আপনি ছাড়া আর কার হিম্মত আছে"। এইসব তোষামোদ আর ফোলানো ফাঁপানো কথার বন্যা। রমনীবাবু এগুলো উপভোগ করতেন, আস্বাদন করতেন। বড়োসড়ো মাছ ঝুলিয়ে, রিকশায় আম কাঁঠালের ঝুড়ি চাপিয়ে ফিরতেন। বিজয়ীর ভঙ্গিতে চারদিকে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে ঘরে ফিরলেন। 

এরপরেই স্ত্রী মলিনার সঙ্গে দ্বিতীয় পর্ব। এ্যাতো বাজার আনসে। বাড়িতে কয়ডা রাঁধুনী চাকর আছে। আইছেন, যদ্দিন থাকবেন খালি গেলবেন। হা ভগবান! এই মাছ তো পচা, গন্ধও পাওনাই? "হঃ, পচা! তোমার বাফেও কহনো এতো দামের মাছ খায় নাই। মাইয়া মাইনসের আর কতো বুদ্ধি হইবো।" ওদিকে চলতে থাকে মলিনার চোপা, "এয়া আমি কার চিতায় দিমু"... "কোন ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হইবো" ..."খালি গেলোন আর গেলোন, গিল্যা গিল্যা মরো মরো"। 

আর তৃতীয় পর্বে রমনীবাবু মাছ মুখে দিয়েই মুখ বিকৃতি। "মলিনা আর দুই হান লঙ্কা দাও দেহি"..."ঘরে গন্ধরাজ লেবু নাই" ..."আহহা, বাজারে কতো লেবু আছিলো"। গন্ধ চাপার কতো আয়োজন। কিন্তু মাছ পচা ছিল না, বাজারের সেরা। আম খেতে বসেও একই দশা, "মলিনা, একডু লবন দাও দেহি। লবন ছাড়া মিষ্টভাব আসে না।" ভুলেও বলা যাবে না, আমটা টক। এই হইলো বরিশাইল্যা ঘাউড়ামি। 

◆ মা ঠাকুমার কাছে শোনা, পরে শ্বশুর বাড়িতে শোনা, মিহির দার কাছেও শোনা। পরিবারে বাল্য বিধবা বুড়ি থাকতো। কোনো কাজ কর্ম করতো না। বাড়ির কম বয়সী মেয়ে বউরা ব্যাঙ্গ করে বলতো "কামের মধ্যে দুই, খাই আর হুই"। এর প্রত্যুত্তরে বুড়ি বলতো "হঅঅ, খাওন কি কম ছেরম, খাইতে বওন, ভাত মাহোন, পেরতেক গরাসে হা করোন, চিবাইয়া হ্যাসে গেলোন"। এ গল্প সুনন্দা সিকদারের লেখাতেও আছে। 
এ হলো বরিশাইল্যাগো নিজেগো গপ্পো।

◆ লেখাটা কারো সংগ্রহে নেই। স্মৃতি হাতরে লিখছি। পান্ডুলিপি থাকলে একমাত্র অরূপ রঞ্জনের কাছে আছে। আমরা তখন "নাইয়া" নিয়ে দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র, ফুঁকো, দেরিদাঁ করছি। মিহির দা আমাদের নিয়ে মজা করে লিখেছিলেন। নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামটা উহ্য রাখলাম :

শ্রীযুক্ত অমুক চন্দ্র অদ্য দ্বিপ্রহরে অবশেষে সকল উৎকন্ঠার অবসান ঘটাইয়া আস্ত একটি দেরিদাঁ হাগিয়াছেন। আলজেরিয়ান ফরাসি দার্শনিক দেরিদাঁর একটি ঢাউস গ্রন্থ এই বিপদের কারন। গতকল্য সারা রাত্তির এই গ্রন্থের গোগ্রাস ভক্ষণ ও ফলতঃ বিপাকীয় বিপত্তি, অবিপাক বা বদ বিপাক। অদ্য প্রাতে নিয়মানুসারে শ্রী অমুক চন্দ্র শৌচালয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় করিয়াও ব্যর্থ মনস্কাম, সময়ের অপব্যয়। নানাবিধ টোটকা, সাপোজিটর, ইনিমা প্রয়োগের পর অবশেষে সেই বিশালাকার গ্রন্থ মলদ্বার রক্তাক্তপূর্বক বাহিরে আসিল। মলদ্বারের ওই ফুঁকো দিয়া (মিশেল ফুঁকো নয়) এই সুবৃহৎ তত্ত্বের বাহির হওয়া বিস্ময়কর, মলত্যাগ না বলিয়া প্রসব বলাই শ্রেয়। সেই বিচারে রক্তপাত অতি সামান্য ও স্বাভাবিক। গ্রন্থের শিরোনামেই এই সতর্কতা আছে "অব গাড় মারাতো..."। আমি হইলাম ভাঁটির পোলা, উচ্চারনেই পোঙ্গাফাটে, জিহ্বা ছালাইতে হইবো "Of Grammatology"। 

আমাদের সাবঅলটার্ন চর্চা, উত্তর আধুনিকতা, কলোনিয়াল লিগ্যাসি, বিনির্মাণ ইত্যাদি শব্দের কচকচানি শুনে মজা পেতেন মিহির দা। মজা করতেন। তারই একটা নমুনা পেশ করলাম স্মৃতি থেকে। বলা বাহুল্য তাৎক্ষণিক ভাবে তখন কখনো বুঝি খুব রাগও হতো। কিন্তু মিহির দার ওই সরস বিদ্রুপে রাগ করার সাধ ও সাধ্য হতোনা। রাগ গলা দিয়ে নীরবে পাকস্থলীতে নেমে যেতো। 

এরপর, শিক্ষকতার জীবনে ছাত্রদের সাথে নিম্নবর্গের চেতনার প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে, নিম্নবর্গের চেতনায় মাপকাঠি মানদন্ড যে উচ্চবর্গের থেকে ভিন্ন সেটা বোঝাতে গিয়ে নানা কসরতের পর অবশেষে মিহির দার কাছে শোনা গল্পের আশ্রয় নিয়েছি। বিশ্বাস করুন, কি সহজেই গলায় আটকে থাকা তত্ত্ব মসৃণ ভাবে চালান হয়ে গেলো উদরে। সেই গল্পটাই বলা যাক। 

দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি। বুড়ি ভিখারিণী ও তার নাতনী পাতায় ছাওয়া হোগলার বেড়ার ঘরে এক কোণে জড়াজড়ি করে অভুক্ত। ভিক্ষা জোটে নি। নাতনী দিদিমার কথোপকথন চলে-
-- দিম্মা, এই যে বৃষ্টি চলতাসে, জিরানির নাম নাই। আমাগো মহারানী, হেইডারও তো বড়ো কষ্ট অহন। খাওয়া জোটে নাই? 
-- হঅঅ! হেই মাথারির কি আমাগো দশা! হ্যায় হইলো মহারানী। হ্যায় অহন চিড়া দিয়া গুড় দিয়া মাইখ্যা খাইয়া, ক্যাথা মুড়ি দিয়া শুইয়া আআহা, পরম সুখে মাগ্গো পূত করে (বায়ু নিঃসরণ করে)। 
ভিখারি বুড়ির কাছে সুখের চরম ও পরম রূপ। ওর মাপকাঠিই আলাদা। এটার নাম নিম্নবর্গের চেতনার ভিন্ন স্তর। 

মিহির দার এই গল্প ছাত্রদের গলায় আটকায় না। মনে পড়ে পুরুলিয়ার ঝালদায় ১৯৯৫ এর ডিসেম্বরে প্লেন থেকে অস্ত্র বর্ষণ হলো। আমি তখন পুরুলিয়া জেলা স্কুলে। পরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করলো। কোনো গ্রামবাসী রকেট লঞ্চারের মোটা ব্যারেল দিয়ে কুঁড়েঘরের দাওয়ার খোঁটা বানিয়েছে, আরও একটা পায়নি বলে আফশোষ তার। কেউ মর্টারের শেল পেয়ে গোয়ালে গরু বাঁধার খুঁটি করেছে। নিম্নবর্গের চেতনায় উয়া ভগবান পাঠাইনছে, ধন্যি উড়াকল (এরোপ্লেন)। কিন্তু পুলিশের ভাষ্যে আরও অস্ত্র উদ্ধার। 

মিহির দার মতো অবাধ বিচরণ থাকলে আরও বহু কিছু দৃশ্যমান হয়। আমার বাড়িতে সাত ফুটের বেশি লম্বা সাপ ঢুকলো। সকাল থেকে পাড়া প্রতিবেশি পথচারী সবাই এসে নিজ নিজ জ্ঞান বুদ্ধি প্রয়োগ করলো। শুকনো লঙ্কা পোড়া, দুধ কলা সহ মনসার মন্ত্র, কার্বলিক অ্যাসিড সব প্রয়োগ প্রচেষ্টা ব্যর্থ। এসবের গন্ধে আমাদের পালাই পালাই দশা। যাই হোক অবশেষে রাত্তির ৯ টা নাগাদ আমরা শাপমুক্ত হলাম। এরপর চললো সারা বাড়ি পরিস্কার পর্ব। কাজের মেয়ে রুমি কাজ করে আর বলে "মামা সাপটা কতো বড়ো?" আমি বলি, হুমম সাত ফুটের বেশি। আবার ঘুরে ঘুরে একই প্রশ্ন "মামা, সাপটা কতো বড়ো?" বুঝলাম আমার উত্তর ওর মনে ধরছে না। শেষে আমিই ওকে বললাম, তুইই বল কতটা বড়ো। রুমি বললো "ঘর মোছা বালতির হাফ বালতি তো হবেই?" 

এবার বুঝলাম সিজিএস এফপিএস পদ্ধতি, ফুট মিটার সেন্টিমিটার আমার কাছে সত্য। আমার মা কাকিমার কাছে শাড়ি ১১ হাত ১২ হাত, আমার চোখে ৫ মিটার ৫.৫ মিটার। রুমির মাপের একক ওই ঘর মোছা বালতি। এই বোঝাটা মিহির দার সাহচর্যে।

◆ বরিশালের ভাষায় আজাইরা কথাবার্তা, অনর্থক আহাম্মক ভাবনা চিন্তা হলো আজাইরা। বাড়িতে মা বাবার কাছে, পরে শ্বশুর বাড়িতেও শোনা। মিহিরদার কাছেও শুনেছি। 

১) অনর্থক আকাশ কুসুম দুশ্চিন্তা করে মাথা খারাপ করা। আদৌ কোনো সমস্যা না, সেটাকে নিয়ে জটিল সমস্যা ভাবা। লোকে লোকারণ্য হাট। বেলা শেষ হলে "হাটের দোচালা মুদিলা নয়ান"। আজাইরা ভাবনা হলো হাডের এতো লোক থাকবো কই, শুইবো কোথায়! 
"চিন্তার মায়ের ভাবনা বড়ো
হাডের লোক হুইবো কই?"

২) এমনই আরও একখান আজাইরা কথা কই। জামাই আইসেন শ্বউর বাড়ি। কিসু তো কথা কওন লাগে। জামাই কইলো "এই ফটো দুইডা কার? মালা পরানি আসে?" বৌ কইলো আমার ঠাউরদা ঠাউরমা।" এ্যানারা ঘরে নাই? এ্যানাগো দ্যাখলাম না তো?" বৌ বিস্মিত, দ্যাহো নাই ফডোতে মালা? দুইজনেই বাইচ্যা নাই। "হেইয়া তো বুঝতে পারসি। এমনি কইলাম, নাইলে কথা আগাইবে ক্যামনে?"

৩) বাগানের মইধ্যে বিরাড পুষ্করণী। জামাই শ্বশুর মশাইরে বলে "এই যে পুকুর কাডানো হইসে, এয়ার মাডিগুলি কই গেল?" শ্বশুর কয়, তোমার লাহান পোলা জনম দিয়া অর্ধেক খাইসে তোমার বাপে। আর এমন জামাই পাইয়া বাকি অর্ধেক খাইসি আমি।

◆ স্থান ভদ্রেশ্বর স্টেশন, রামদার চায়ের দোকান। ওখানেই "নাইয়া" র কয়েকজন জড়ো হবে। সবাই তখনও আসে নি। অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তার মাঝে রামদা বললো, তোমাদের আসতেই দেরি হয়েছে। মিহির সেন তো সেই কতো আগে এসেছেন, দুবার চা খাওয়া হয়ে গেছে। মিহির দা সহাস্য স্বগতোক্তি: "হালা কফালে এয়াও আছিল, হ্যাসে রামদা দিয়া গুফ্ত স্থান কর্তন।" মিহির দা ছিলেন সেনগুপ্ত । 

◆ ফাজলামি কইরা একদিন কইসি কি, বদ্যিগো একটা মিথ্যা গুমর আছে। অথচ থাওন উচিত সিলো কুলীন কায়স্থ বৌসগো। ক্ষুদিরাম বোউস , সুভাষ বোউস, জগদীশচন্দ্র বউস, সত্যেন্দ্রনাথ বউস, মালাধর বউস, রাজশেখর বউস, সমরেশ বউস, বুদ্ধদেব বউস, এমনকি হালের জ্যোতি বউস, বিমান বউস। আপনে কইতে গ্যালে অমর্ত্য স্যানেই আটকাইয়া যাইবেন। 
মিহির দা বললেন, বেশ কথা। অমর্ত্য স্যানরে বাদই দিলাম, বিজয় সেন, বল্লাল সেন, লক্ষ্মণ সেন, তানসেন, জনসেন, নিকসেন, সান ইয়াৎ সেন, বরিস ইয়েলৎসেন, আরও কইতে হইবো?

◆ খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি এরকম একটা শোলোক আমরা ব্যবহার করি। অনুরূপ বরিশাইল্যা শোলোকটা বলার আগে কাহিনীটা বলে ফেলি, শোলোকটা শেষে। 
-- মাইজ্যা কত্তা আছেন নাহি? 
-- হঅঅ, বয়েন। ভিতরে কাম করে। 
ভিতরে তহন হোনোন যায় মাইজ্যা কত্তার গলা, "ভালো কইরা, হক্ত কইরা ধর। ধইরা থাক। হ্যাঁ, এইবার আইস্তে আইস্তে বাঁও দিকে নামা, নামা, ব্যাস। হারামজাদা থামা। ওইহান থিয়া ডাইন দিকে একটু কইরা নামাইতে থাক, আরও নামা, ব্যাস। থাম হারামজাদা পুঙ্গির পুত। এইবার সোজা উপরদিকে ওঠা ওঠা আরও, ব্যাস ব্যাস। এইবার ডাইন দিকে ঘুরাইয়া প্যাচাইয়া..."
-- ভিতরে হইতাসেডা কি? মাইজ্যা কত্তা কি কুস্তি করে? 
-- পোলারে ক ল্যাহায়।
পোলারে ক ল্যাহায় একটা বরিশাইল্যা শোলোক। 

◆কোনো কামের না অকম্মা। কিন্তু আয়োজন বিস্তর। এমন ক্ষেত্রে একখান শোলোক খুব পরিচিত: আকাডা নাইপতার পাজা ভরা ক্ষুর। 

◆ তিক্ত অপ্রীতিকর কোনও কথা বা স্মৃতি কেউ উত্থাপন করলে সেই স্মৃতি প্রসঙ্গ কে এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শোলোকটা খুব প্রচলিত। লক্ষণীয় শোলোকটা অ মার্জিত হলেও ভূগোল পরিবেশ বর্জিত নয় :
রাহো সেইসব কথা। বালের কথা খালে ফেলাইয়া দিসি। 

◆ বঙ্কিমচন্দ্র প্রাঞ্জলতা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, স্থূল বাক্যটির অর্থ যখন জটিল ও দুরূহ হয়, সেই স্থানে উদাহরন প্রয়োগ আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে বরিশালের গল্পটা বলেই ফেলি :
জন্মান্ধ সুধীর, মা বাপের ডাকে সুধিরয়্যা। বাড়ির দাওয়ায় বসে থাকে আর সবাইকে ডেকে আলাপ করে গল্প শোনে। তো একদিন দুধওয়ালাকে বলে,  ও ভাই, দুধ তো নেত্যই খাই। আইচ্ছা, হেই দুধ দ্যাহতে ক্যামন? 
-- সাদাআআ। ধবধইব্যা। 
-- সাআদা! হেয়া আবার ক্যামন? 
-- বক আছে না? বহের মতন হাদা। 
-- বওক!! হ্যায় আবার ক্যামন? 
-- সারছে। ক্যামনে বুজাই! কাছি আছে না, ধান কাডে, ঘাস কাডে, হেইরহম ব্যাহা? 
-- কাছি! কি জানি! 
-- হ হ, এইবার হইবো। রোশো রোশো। দুধওয়ালা হাতের আঙুল থেকে কব্জি অবধি কাস্তের মতো বাঁকালো। নাও ধইরা দ্যাহো। সুধীর দুহাত দিয়ে বাঁকানো হাতটা ছুঁয়েছুঁয়ে আন্দাজ করলো। 
-- হঅঅ, চেনলাম দুধ। এই নাকি সাদা।

 ◆ অলস গতর কুঁড়েদের নিয়ে এখানে ওখানে কতনা চর্চা গল্প লোক প্রবাদ। ভাটির দেশের জীবন ধারণের আবশ্যিক শর্ত ডিঙি নৌকা। বরিশাল তো প্রাচ্যের ভেনিস। রাস্তা বলতে খাল নদী নালা। এহেন ভাটির মানুষের জীবনের প্রধান ও আবশ্যিক অবলম্বন নৌকা। এই দেশে অলসের চরম রূপটা একবার ভাবুন --

আলিইস্যা রে আলিইস্যা, তর নাওডা যে যায় ভাইসগ্যা।
যায় যাউক ভাইসগ্যা, আর একখান বানামু বইসগ্যা বইসগ্যা।

◆গুরুত্বপূর্ণ কথা শুধু ভুলে যাওয়া নয়। গুরুত্ব না বোঝা, বোধ হীন নির্বোধ বলা যায়। এইরকম ক্ষেত্রে একটা শ্লোক আছে, "ঠাউরঝিরে লইয়া গ্যাসে নাচাইতে নাচাইতে"। 
তো, গল্পটা কি? দুপুরের পর থেকেই খাওয়া দাওয়া শেষে একান্নবর্তী পরিবারে একটুখানি ঝিম ধরে। বিকেল ও সন্ধ্যায় আবার জম জমাট হয় বাড়ি। এতো লোকজন কে কার খবর রাখে। রাত্তিরে খাবার সময় মনে হইলো বাড়ির মাইয়া গেলো কই। তারে যে মেলা সময় দেহি না। খোঁজ খবর ছুডাছুডি চললো। হগলডি গলদঘর্ম হইয়া ব্যাজার মুহে ভ্যাটকাইয়া আছে। তহন বাড়ির সেজ বউ নির্লিপ্ত নির্বিকার ভাবে কইলো-

ভুইল্যা গেছি কইতে।  
মোয় আর ঠাউরঝি 
দুপুরে গেছিলাম আচাইতে, 
কুম্ভীর হ্যারে লইয়া গ্যাছে 
নাচাইতে নাচাইতে। 

একবার ভাবেন, এই কথাডা কইতে ভুইল্যা গ্যাসে। আর কুমীর জলের মধ্যে আছাড় মাইরতে মাইরতে নিছে, এইডা দারুন মজা পাইসে "লইয়া গ্যাসে নাচাইতে নাচাইতে"। ননদিনী ও বৌদির সম্পর্কের রসায়নটিই বা কিসে কম যায়? 

◆ পুরুষতান্ত্রিক দম্ভের গপ্পোডা এই সুযোগে কইয়া ফ্যালাই। বাড়ির বড়ো পোলা গৌর বরণ, ছোটোখাটো, নাদুসনুদুস। ঠিক য্যান গোপাল ঠাউর। হগলে হ্যারে ডাহে ঠাউর। হ্যার বিয়ার পাত্রি দ্যাখতে গ্যাছে ঠাউরের বাপে আর মামায়। বাপে মামায় দুয়েই ভোজন রসিক। বিস্তর আদর আপ্যায়ন খাওন দাওন কইরা, বাপে পাকা কথা দিয়া বেলা শেষে নৌকায় বাড়ি ফিরতে আছে। মামায় কয়, জামাইবাবু, মন কইতাসে, মাইয়া লম্বায় আমাগো ঠাউরের দ্যাড়া। হঅঅ, কি যে কও, মাইয়া মাইনসে পুরুষের থিয়া লম্বা হয় নাহি। 
বিয়ার পিড়িতে জামাইবাবু বলে, বোঝলা অবিনাশ, বৌমার পিড়িডা একডু বেশি উঁচা হইছে মনে হয়। এই ঠাউর হলেন আমার জ্যাঠামশায়। জেঠিমার বগলের কাছে তার মাথা। কিন্তু আমার দাদু কোনোদিন স্বীকার করেননি। 

◆ ঘটকরা কিভাবে প্রতারণা করতো বর্ণনা আছে শোলোকে : মাইয়া এক্কেরে ফাস্টো কেলাস। সাইত চড়েও মুখে রা কাডে না। আর মাথার চুল, কি কইমু, খাড়াইলে ঘেডি ছোয়, হুইলে মাডি ছোয়। আইর কাজে কম্মে, সদাই এক পায়ে খাড়া। 
বাস্তবে দেখা গেলো : মেয়ে খোঁড়া, বোবা, মাথায় চুল নাই ঘাড় ছাঁটা চুল। 
"সাইত চড়েও মুখে রা কাডে না", "মাথার চুল, কি কইমু, খাড়াইলে ঘেডি ছোয়, হুইলে মাডি ছোয়", "কাজে কম্মে, সদাই এক পায়ে খাড়া" বরিশাইল্যা বাগধারা, শোলোক। প্রত্যেকটির নেপথ্যে একটা করে বড় ছোটো গল্প। 

◆ আমার শাশুড়ি মায়ের পিসি শাশুড়ি। তিনি মাত্র মাত্র ছ বছর বয়সে কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে বউ হয়ে এসে ন বছর বয়সে বিধবা হন। মস্তিষ্কে তার বাড়াবাড়ি রকমের বিকৃতি। কখন যে কোথায় ভেসে যায়। বিপদ পাকায় ষোলো আনা, যখন সেই মানুষ বাড়ির কোনো দুধের শিশু নাতি নাতনি কে নিয়ে ভেসে যায়। অনেক বার গ্রামবাসী খুঁজে দিয়ে গেছে। আমার শাশুড়ি বলতেন, "পিসিমা আপনে বাচ্চারা নিয়া বাইরে যাইবেন না"। সটান জবাব " ক্যান, পোলা মাইয়া কি তুমি বাপের বাড়ি থিকা আনছো?" ঠিক এই ভাষ্যডা পাইছি মিহির সেনগুপ্তের ল্যাহায়। পরিবারের ধাইমা ছোডি বাড়ির বউকে বলছে "এগুলি কিন্তু আপনে বাপের বাড়ি থিকা আনেন নাই"। 
ওই পিসি শাশুড়ির বাড়াবাড়ি রকমের বিকৃতি হলে তাকে বেঁধে রেখে ঘর বন্দী করতে হতো। পিসি শাশুড়ি তখন জানালার গরাদ ধরে চিৎকার করে বলতো "হাত বান্ধবা পাও বান্ধবা মন বান্ধবা কেডায়"। আজ যখন বাংলাদেশের লোক সংগীতের কথায় এই কলিটাই শুনতে পাই, ভাবি এও কি ভাটির সৃষ্টি! 

◆ বরিশালের মানুষ কথায় কথায় শ্লোক বলে, "কথায় আছে না...", "হেইযে কয়না..." । এমনকি যেখানে শ্লোক নাই, মনে নাই, খুইজ্যা পায় না, তখন দুইবার ঢোক গেলে, তারপর কয় "কি জানি কয়, তো হেইয়া"। 
"কি জানি কয়, তো হেইয়া" নিজেই একটা শ্লোক হয়ে গেছে।

◆ আবার বরিশাইল্যারা এ্যাতো কথায় কথায় শোলোক আউড়ায়, যে মাঝে মধ্যে ভুল অপ্রাসঙ্গিক শোলোক বলে ফেলে। তখন একটি শোলোক আছে : "কইসে একখান কথা"। মূল ভাবটা হলো, ভাষা সাহিত্য শব্দ ভান্ডার হাতরাইয়া  হাতরাইয়া বলদায় খুইজ্যা পাইসে, "কইসে একখান কথা"।

◆ অনেকেই আছেন সবেতেই বিস্ময় প্রকাশ। অতি সাধারণ, অতি পরিচিত বিষয়েও এটা কি, ওটা কি। ফুটি ক্ষেতের পাখি, সে শশা ক্ষেতে এসে ফল চিনতে পারছে না। 
ফুট ক্ষ্যাতের পক্ষী আইয়া 
ক্ষীরই ক্ষ্যাতে পড়ে, 
কিপ্পল কিপ্পল করে। 
প্রায় অনুরূপ শোলোক : আড়াই দিনের যুগী, ভাতেরে কয় পেরসাদ। 

আমার শাশুড়ির কাছে এটার পৃথক ভার্সন শুনেছি। অল্প জলের মাছ খলবল খলবল করে। সে যখন বড়ো নদীতে পৌঁছায় ভ্যাবাচ্যাকা খায়, খাবি খায়। তেমনি, শশা বা ক্ষীরই ক্ষেতের পাখি, সে বড়ো বড়ো ফুটি দেখে অবাক বিস্ময়ে ভিরমি খায়। 
ক্ষীরই ক্ষ্যাতের পক্ষী আইয়া 
ফুইট ক্ষ্যাতে পড়ে, 
কিপ্পল কিপ্পল করে। 

◆ শান্তশিষ্ট নিরীহ, সাত চড়ে রা কাটে না। তার যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন সে অনন্যোপায়, বেপরোয়া। সে তখন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সেই প্রসঙ্গে এই শোলোক :
বোঝছো আমার মা, 
ছাগলে কামড়াইলে, মানুষ বাঁচে না। 

◆"অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত্তির", "সেই তিমিরেই" এই রকম শোলোক শব্দবন্ধ আমরা ব্যবহার করে থাকি। তেমনি একটি শোলোক "সাবেক হুকুম বহাল"। ঘাইন বুড়া শওকৎ ঘানি ঘোরায়। আগের দিন গেছে সবে বরাত। সারা রাত মৌলবি সাহেব সবার ভাগ্য (বরাত) ব্যাখ্যা করেছে। শওকৎ সারা রাত জেগে, সকালে কাজে এসেছে। বুড়িমা বলে, "চক্ষুডা তো জবা ফুলের লাহান লাল করছোস। কাইল মৌলবি তর বরাতে কি আছে কইলো?"
মানী গুণী হগলের নসিব কইতে কইতে আলো ফুইট্যা গেছে মাঠাইন। তহন মৌলবি কইলো "বাকি হগ্গলের লইগ্যা সাবেক হুকুম বহাল।"
সমাজের প্রান্তিক জন। কেন্দ্র থেকে পরিধি দূরত্ব অনতিক্রম্য। তারা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। শোলোক এক গভীর দর্শনের ধারক। অপবর্গের শোলোক। সেন্টার পেরিফেরি তত্ত্ব জানেনা, বোঝেওনা। কিন্তু সত্যটা জানে।
 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন