দোঁহা

অমর্ত্য দত্তের গুচ্ছ কবিতা

 


সেতার

নিষেধ ক‌রি জীবন, সেতারে আর দিও না হাত।
ল‌লিত শুধু ল‌লিত বাজাও সকাল থেকে রাত।

সেই শোচনা কবেকার। তু‌মি এ'ছাড়া কি পারো?
বাহার পারো? শ্যামকল্যাণ বা বৃন্দাবনী সারং?

বাজাও তবে শু‌নি। ধরো আলাপ নতুন সুরে।
‌সে রাগ যেন অবার্ণতায় কেঁদে কেঁদে না মরে।

‌সে রাগ হো'ক সবুজ। আমাকে নি‌বিড় করে রা‌খুক,
‌চাই না সে রাগ আমৃত্যু কারো অপেক্ষাতে থা‌কুক।

বাজাও তবে শু‌নি। ‌তোমার ‌সেতার কেমন বাজে।
সকাল বেলা ঘর ছাড়া লোক ফিরে আসে‌নি সাঁঝে।

‌তাকে বলো না সে সব কথা। ‌দে‌খিও না দু্স্মৃ‌তি।
‌যে যাওয়ার সে চলেই যাবে। চলে যাওয়াই রী‌তি।

‌কি কোমল তোমার আলাপ! জোড় হবে খুব গভীর।
এই তো তু‌মি পারছো জীবন। এই তো সৌরভী-

ছ‌ড়িয়ে যাচ্ছে আমার ভিতর-নিষাদে, গান্ধারে...
কেমন ডুব দি‌চ্ছি গমকে আর ভেসে উঠ‌ছি মীড়ে।

এত রোমাঞ্চময় ঝালা! দাও আরও, দাও আরও...
বাহার হ‌'‌লো জীবন, এ'বার শ্যামকল্যাণ ধরো


সহজ

স্বচ্ছ তোমাকে দেখতে পা‌চ্ছি অথচ অতলেই
রয়েছো তু‌মি সু‌স্থায়ী অথচ বিসা‌রিত।
‌বেশ তো ছিলে কোমল গা-এ ‌কেন শুদ্ধ নি-‌তে উঠলে?
বলো, কি ভাবে দেবো সঙ্গত্?
আমার এস্রাজে সেই সুর নেই।

যে সুর তোমার ‌নিত্য। যে সুর অনব‌ধি।
‌যে সুর তোমার ‌দিগ্ধ। যে সুর অ‌ভিগামী।
‌শি‌খিয়ে দাও। শি‌খিয়ে দাও।
আমি ‌সেই সুরে তার বাঁ‌ধি।

মগ্ন হবে বিলকুল আর সহজ হবে এস্রাজ।
তখন আমি দক্ষ এবং গূঢ়চা‌রী।
তীব্র থেকে আস্তে আস্তে ‌কোমল ছুঁতে নাম‌ছি...
তোমার সারা শরীর যেন বিলাসখা‌নি তো‌ড়ি ।


সুরপ‌ল্লির মেয়ে

তার অবরোহে ঠোঁট রাখতেই গভীর থেকে লহর ছলকায়।
সুরপ‌ল্লির মেয়ে। তিলককামোদ শরীর।
আমার গান শুনতে চায়।

আ‌মি কি আর গান গাইতে পা‌রি?
কোনটা কোমল। কোনটা ক‌ড়ি।
কেমন ক‌'রে মুখরা ‌গিয়ে অন্তরাতে মেশে।
সুরপল্লির মেয়ে। তিলককামোদ শরীর।
এমন গমক তুলে খিল‌খি‌লিয়ে হাসে।

আমার মু‌খের ভিতর ষড়জ চেপে ধরে। ষড়জ এত গূঢ়!
উদারা মুদারা দু‌লিয়ে খেলা করে। দো‌লনে এত সুখ!
ধ্রুপদাঙ্গ মেলে বলে; কিছুই জানো না তো 
'রস শৃঙ্গার কলা বিন্যাস সুর সুরতি তুক'।   

আ‌মি কি আর গান গাইতে পা‌রি?  
সুরপ‌ল্লির মেয়ে। তিলককামোদ আজ।
কাল‌ গাবতী। পরশু মঞ্জরী।



1 মন্তব্যসমূহ

  1. আমার প্রিয় কবি অমর্ত্যের কবিতা মানে কতো কিছুই শিখিয়ে যায় । অসাধারণ তিনটি কবিতা

    উত্তরমুছুন
নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন