দোঁহা

কুহেলি করের গুচ্ছ কবিতা

 


 লাল-নীল সংসার 

১.
শহরতলির এক ফালি আকাশ,
বিতৃষ্ণা জন্মে থাকে-
তবুও শোবার ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে ঈদের চাঁদ:ঘরময় আলো।

২.
চোখে লাগায় চিকমিক,
কপালে আলতো চুম্বন।
কোরান পড়ার জাপানিজ জানালাটা আজ কোথায়?
কবেই তো দত্ত বাবু বলে গিয়েছেন,
জানালা দিয়েই পৃথিবীর কক্ষপথে আমরা ঘুরে চলেছি,
এই প্রাপ্তি ও পরম আনন্দের; মাঝে মাঝে কিঞ্চিত দেখা হয়ে যায় এঁর-ওঁর সাথে-
ভুলতে বসি গোলক ধাঁধায় সকলেই পাক খাচ্ছি:ফলতঃ হঠাৎ হঠাৎ আচমকা দেখা মিলন, আলিঙ্গন।

৩.
পাছে ভাবতে ভুল হয়, কতোটুকু পরিমিতি, কতোখানি বিশ্বাসযোগ্য বড়ো এই পৃথিবী?
নাকি শুধুই ছোট হতে হতে, আমরা বড়ো না হয়ে বুড়িয়ে চলেছি?

৪.
মেক্সিকো, বেহালা, ইসলামাবাদ, বেনিয়া পুকুর, পশ্চিমবাংলা
মনে মনে চলে গিয়েছি সহস্র বার,
গতবারের বর্ষার রাত্রে তোমার চুল গুলো ভিজে উস্কোখুস্কো, 
ন্যাবা কে ভোলে বলোতো?
উপেক্ষা করে সমস্ত শহরসীমা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান;
ধুলোবালিছাই থেকে হাবাদের মতোন দু'জনে গিলে, গুলে খেয়েছি অঞ্জনের গান।

৪.
গানের জানলা গোটা পৃথিবীর,
মনের কুঠুরি হয়ে উঠুক কবিতার পৃথিবী।



অঞ্জন

১.
ভিজে গিয়েছে সারা গা, জমিন, মৃত নদী;
ষোড়শী বয়েসের কথা ফেলে-
গর্তে আবর্জনা, ক্ষত।

২.
এই মধ্যাহ্নে আর বৃষ্টি হয়না।
তবুও হলো,
বয়স এখনও বারো তাই-
সহজ করেই গিট পাকাই;
জীবনের কাছে,
বেঁচে থাকার মতো।

৩.
তুমি না আসলে জানতেই পারতাম না-
পাহাড়ি ঝর্ণায় গান আছে, গাছেদের পাতা ঝড়ায় গমগমে গান আছে;
নদীর দু'কুল আছে-
আছে একলসেঁড়ে
স্বাশরোধী মিলনের কথা।


গান যেন মোর কর্মে লাগে

১.
কটুক্তি তো পরের কথা 
আপন বোঝে গোপন ব্যথা:
যদিও সবাই ঠিক বলেনা,
মুখের কথা সহজ যদি;
অকারণে 
আর কেউ ভুল বোঝেনা।

২.
কখন কোন গানে কেন যে আর মীর লাগেনা,
কোন তালে আর ভালোলাগে না;
সেসব নিয়ে ভাবার সময়
ভাবতেও আর মন লাগেনা,
তবুও কানে খটকা লাগে:
সবকিছুরই মূল্য আছে।

আসলে তো দন্দ্ব নিজের সাথেই,
আপন-পর দু'জন হাঁটে শীত-বসন্ত রাস্তাতেই,
বৃষ্টিও ভেজে একইসঙ্গে:
সুখ দুঃখের দাঁড়িপাল্লায়
কথার ওজন বাড়ে, লেখার মাঝে, তানপুরার সুরে।


মুক্তাঞ্চল

১.
ওঁর কৈশোরের ডানায়, যৌবনের ডালে,
ঘর পেতেছে মৌমাছি।

২.
প্রেসলি, ডেনভার, বেলাফন্টে ওঁর আতুর গাছ;
অথচ আমার অ্যালবামে ওঁর শৈশবের কোনও প্রতিকৃতি নেই।

৩.
তবুও আমরা অনেক দিন এক দ্রোহের সংসার পেতেছি,
মৌমাছি-
গল্প-গানে চিনেছি।

আমি তাকে এখন শুধু দু'চোখে হারাই,
জানা শোনা কথার থেকেও বেশী গানে ও সুরে,
যা দিয়ে রূপকথা বানাই।


মহারাজ

১.
আপনি কতো নির্মম এই ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে যায়:
বেপাড়ার পুরুষ, অন্য পাড়ায় 
আসেননি তেমন কখনও:কারণ সেটাই স্বাভাবিক।
২.
আপনাকে ক্ষমা করেছেন শুধু আমি, আপনি এবং কেবলমাত্র মাধুকরী করা বেসামাল সময়।

৩.
একেবারেই শহুরে: তবে উত্তর কোলকাতার এবং ফরিদপুর তো, তাই-
নখ কামড়াতে কামড়াতে,
হৃদি-বন্যায় রূপোলি মাছের আনাগোনা,
অনুভব করি।

৪.
কিচ্ছু নেই চারপাশে;
দূর থেকে সুদূর তম দিকে,
এক সুবাস ভেসে, ফিরে আসে,
সুগন্ধিযুক্ত সাবান হঠাৎই বাথরুমে ঢুকে পড়ে:
অনেকক্ষণ সাবান মেখে স্নান করলে- গুনগুন করতে করতে:স্নিগ্ধ মাদকতায়, মানুষটার মফস্বলের এঁটেল মাটির গন্ধ।

ওঁরা কি আজও পাট ভেঙে ভেঙে আপনার মফস্বলের মতোই নিত্যনতুন মানববন্ধনের কথা ভাবছে? ছেঁড়া তার নিয়ে কী করছেন?
দালানে কি শীতলতম পাটি পেতৈ শুয়ে পড়েছে একাই এই অবেলায়?

৫.
কৈশোরের নিজস্ব তানপুরার সুর লাগানোর হিরিক,
অপরদিকে খোলা মাটির দালান, জাম বন:
জানি সে ভোলার নয় তবে-
নয় নয় করে মেলা বেলা বাড়লো, স্রোতের বিরুদ্বে অজস্র তুফান বয়ে গেলো।

৬.
ভেবে জানাবেন তো: তবে ঠিক কী আপনি?
বেজায় আনকোরা নাকি দস্তুর, পোক্ত ফেরারী?


গান

১.
অসঙ্গতের গান ও বহুরূপীর নৃত্যের মতো এসে নিশ্চুপে,
নিঃস্বার্থে দাঁড়ালে;
চমকে উঠলাম:এও সম্ভব?
নিঃশঙ্কোচে চোখের তারা জ্বালিয়ে,
অন্ধকারে মুখ খানি দেখলে।

২.
তাঁকে খুব কাছে যেই চাই;
তাঁর সুখের জন্য-অসাধারণ সাধনা:
বিস্মিত, কোমল অভর্থ্যনা এবং সর্বোপরি বাউন্ডেলের প্রশ্রয়।

৩.
ওষ্ঠাকোণে উপচে পড়া রোদ-
স্মৃতির ডালায় পূর্ণাঙ্গ যৌবনের হৃদ;
নেই কূল, নেই পরিমিতি-
আছো তুমি, মুক্তি ও সর্বকালের বিশ্বজোড়া পাঠশালা;
গায়কীর অনুশোচনা এবং স্মৃতি- 
বিবৃতি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন