অভিমানী
আগুন-পাখীর মেঘ-সায়রে স্নান,
উঠোন-ভরা বৃষ্টির জল-ছড়া।
না জানি কার কিসের অভিমান!
মেঘ-কালো মুখ, নীরব অশ্রু-ধারা।
কাক-ভেজা আজ প্রেমের অলিগলি,
মন কেমনের ঝড় উঠেছে বুকে।
বাঁধবে কি কেউ বাউল গানের কলি?
ঝড় থামাতে গাইবে চাতক-চোখে।
মান-ভাঙানির পসরা মিলন-মেলায়,
সুজন মাঝি উজান স্রোতে ভাসি-
আনবে কিনে, মেঘ-বৃষ্টির খেলায়-
রোদ উঠিয়ে বলবে ভালবাসি।
বৃষ্টি নামে
আকাশের হাঁসকল খুলে-
ঐ বুঝি কেউ গ্যাছে ভুলে!
মেঘেদের গড়া পইঠায়-
বৃষ্টিরা মাঠে নেমে যায়।
একদল ছোটদের ডেকে-
হড়কায় জলকাদা মেখে।
হাপুশুটি ভিজে চলে খেলা,
সারাদিন ধরে সারাবেলা।
রয়ে-সয়ে বৃষ্টির ফাঁকে,
মেঘ বাবাজীর নাক ডাকে-
একঘেয়ে একটানা ঠায়,
ভর-দুপুরের তন্দ্রায়।
ডহরের পাশে জাগা চরে-
পরিযায়ী পাখি ভিড় করে।
পাঁক থেকে কেঁচো তুলে ঠোঁটে-
একদল জলপিপি জোটে।
কে দিয়েছে খালে-বিলে চাক,
জমা জলে কাঁকড়ার ঝাঁক।
টোকা মাথে চলে তার খোঁজ, ঝোলে-ঝালে আজ মহাভোজ!
মনমরা আলো আরো কমে,
চরাচরে কালো-ছায়া নামে।
চুপিসাড়ে আঁধারের গায়'-
বৃষ্টিরা নামে শোনা যায়।
অনুভব
ঈশান কোণে মেঘের আনাগোনা,
আকাশের বুকে অশনির জাল বোনা।
ডমরু নিনাদে তান্ডব তব রাজে,
চমকে দমকে দামামা যে তারি বাজে।
কত অনায়াসে বিনাশে উঠিছ মাতি!
নিভায়ে দিতে কি আমার সাঁঝের বাতি?
জানি শত কাজ হয়নি এখনো সারা,
সাঁঝের তুফানে আজ বড়ো দিশেহারা।
বারিধারা ঝরে বাহিরে ও অন্তরে,
উদাসী এ মন ধূসরিত প্রান্তরে।
হঠাৎ শিহরি চোখ মেলি আমি চাই-
শান্ত ধরণী মাতন যে আর নাই।
আপন খেয়ালে ফিরে চলে গিরিরাজ,
অনুভবে হেরি আদি বাউলের নাচ!
সে নাচের তালে, জটার ঘূর্ণী-জালে-
ভীরুমন আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
যাবার বেলায় আভাস দিয়ে গেলে-
প্রলয়ে মাতিবে আবার খেলার ছলে।
বয়ে যায় বেলা আর দিও নাকো ফাঁকি,
সমাপণ করো যা আছে আধেক বাকি।
জানি একদিন মহাপ্রলয়ের শেষে
নিয়ে যাবে তুমি তোমার আলোর দেশে।
অভিমান
কে যেন তার কষ্টটাকে-
লুকিয়ে রাখে মেঘের ফাঁকে,
একলা রাতে বালিশ ভেজা মন কেমনের পরে–
বেদন-ভরা বাদল দিন আজ গুমরে কেঁদে মরে।
হয়তো বা কেউ আকাশটাকে-
আঁকড়ে ধরে বিষাদ-বুকে,
স্মৃতির ঝড়ে আগল ভাঙে মন খারাপের ঘরে–
বহ্নি-শিখার নকশি-জালে আকাশ ভেঙে পড়ে।
ঐ বুঝি কেউ মান ভাঙাতে-
বর্ষা ঝরায় নিশুত রাতে,
সোঁদা-মাটির সুবাস ছড়ায় তপ্ত ধরার 'পরে–
সোহাগ-মাখা গল্প নিয়ে বৃষ্টিরা ভিড় করে।