দোঁহা

কুহেলি করের গুচ্ছ কবিতা

 


মেঘ-বাড়ি

১.
অবাক আমি-চেয়ে দেখে মেঘপুঞ্জে মানব ক্ষত;
অবাক আমি, ওই যে দেখে-
কেশ উড়িয়ে চলে যাচ্ছে নৈঋতে;
গ্রামের কোনও বালিকা বধু।
অবাক, আমি সংগোপনে;
রেলের ধারে শুতে দেখে-
একের পর এক নিথর শীশু।

২.
অবাক আমি, মেঘে-মেঘে;
সংবিঘ্ন পাখিকুল ও তাঁর ভাষা জেনে-
অবাক, আমি চেয়ে থাকি মেঘলা দিনের;
খামখেয়ালে।

৩.
অবাক আমি, খাঙ্গুরা শুনে-
মেঘ করেছিলো কি খুব সেদিন?
না বলে ক'য়ে চলে যাওয়ার;
অনেক আগে?

৪.
অবাক আমি, কাঁচের স্বর্গে-
তালিম নিচ্ছি মেঘের কাছে,
মাদকতা ও আসক্তি ক্রমশ
প্রকাশ্য;তা সত্ত্বেও জেনে-বুঝে।

৫.
অবাক আমি, সরল মনে;
এই যে আমার বহুস্বর-
নিতান্তই, ঘুরে চলে অজানার ধুলায়;
কোনও অরণ্যে বা তেপান্তরে।

৬.
এই যে মুক্তি, এই যে প্রেম-
বিধাতাও কি আগলাচ্ছেন?
সে সব আমার মতোই ভেসে ভেসে-একা একা হেরে-জিতে;
অকারণে সাপলুডো খেলে?


ঈশানকোণ 

অমন করে চলে যেওনা সুচেতনা। তুমি নিশ্চুপে ভালোবাসার মানুষ। অকাল বর্ষণে ছেড়ে যেওনা।

তুমি নিশুতির আলো, বর্ষার ঘ্রাণ, শীতের ঘুম, গরমের দিনে বটের ছায়া। আমায় অন্ধ করে নির্জনতম নিঃসূর্য দ্বীপে রেখে আসো। তবু তুমি থেকো। মৃত্যুর বৌউনি নিয়ে কিচিরমিচিরে আর পারছিনা। জানো, ছোটানাগপুরের মালভুমি অঞ্চলে আর শান্তি নেই‌। ঘর-বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করি, ঘর মুছি। রং করতে বসলে দেখি জল নেই, তুলি নেই। মন খারাপে খাঙ্গুরা কে বাছি‌, তবুও বলো উনিও তো বৃষ্টি দিনে মেঘপুঞ্জে মানবক্ষত, তোমার কাছে এসেছিলেন? তুমি কখনও এখানের এলোপাথারি ঝড়ের রাত, কখনও ধোঁয়ার কোলকাতা। আমার শহর। আবার ও বলি, কথা না শুনে যেওনা। চেতনা। যদিও বলতে শুধু এটাই চাই, আমার কিছু বলার নেই, আমি আর তোমাকে কিছু বলবোনা।



শ্রাবণ

১.
রাত্রি আমাকে বরাবরই আবেদন জানায়, বিশৃঙ্খল হওয়ার জন্যে।

বৃষ্টি আমাকে ততোধিক চেষ্টা করে মনক্যামনিয়া গুলোকে শ্রদ্ধা করে বিদায় জানাতে।

বৃষ্টির ছলাৎছল শব্দ:ধেয়ে আসে; ষোড়শীর পিচ্ছিল মনের দিকে।

২.
তবুও আমাদের একটাই ছাতা-দুজনারই এক বর্ষাতি;
বজ্রাঘাতে আমার ভয় করে,
প্রহরীর মতোন তখন কেবল সেই শান্ত, শুভ্র উত্তর কোলকাতাকে অবিরাম চুম্বনের দ্বারা বেঁধে বেঁধে রাখি,
শিরা, মৃত উপশিরায় ক্ষেত-খামার চষি।

৩.
সেই যে তিলোত্তমা ঘুমিয়ে ছিলো এঁটো ঠোঁটে-
ঠোঁট রেখে বলে যাচ্ছিলো; অনবরত আমরা কেমন, আমাদের কতটুকু আপন, পাশাপাশি চলা যায় কি?
কিন্তু আমি তো পাশে নয়, সঙ্গে থাকবো-
সেটাই বা আর কতক্ষণ?

৪.
গাঁ এর লোক;
প্রথম দিন থেকেই এক অসুখে দু'জন অন্ধ।
গোধূলি লগ্নে আমাদের রোজ মিলন হয়,
বৃষ্টির জল বেয়ে নামে শিরদাঁড়া- সঙ্গমকালে লুকোচুরি খেলতে হয়,
ভুলে যাই তখন সব। 

৫.
পাখিরা নীড়ে ফেরে,
আমরা আকাশ-ছেঁচা জলের কোলে বসি।
কাঁধে মাথা রেখে ভালোবাসার শহর দেখি,
পরিযায়ী এক জোনাকি নিওন আলোয়-
সেও স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ তখন।

৬.
ক্রমশ সন্ধ্যা নামে সিঁড়ি ধরে,
পা দু'টির জলছাপ, টলমল-
অনেকটা রাত হলে;
জোনাকিরা ব্যারিকেড গড়ে।

মাঝে আমরা এক আত্মা দুই প্রাণ,
চিলেকোঠার নোনা ব্যথা ও চুম্বন আরও গাঢ় করি,
বৃষ্টিদিনে,
অতলে-অন্তরীণে।


স্মৃতি-বিবৃতি ও শান্তিনিকেতন

১.
চলে যেতে হয় বলে;
পৌঁছে গেলাম-
তিলোত্তমা বেশিদিন আগলায়নি;
লাল কাঁকুড়ের পথ ও শালুকের
পৌরুষ কাছে ডেকেছে-
বারংবার;
নাহলে কি আসতাম বলো!
এই অসময়ে, তাও একাকী?

২.
বর্ষাতি হলো ক্রমে নবপ্রেম;
বীরভূম! বীরভূম!
এই মাটিতে পা রেখেই-
পৌষের আঙিনায়;
কিছু এপিটাফ ও মানভূম।

৩.
যতটুকু দিলাম;
ঠিক ততক্ষানি ফিরিয়ে দিলো-
ভালোবাসা, প্রেম;
চিরঋণ-
শুধু তোমাকে ফেরানো হলোনা,
বলেছি কি? বলেছিলাম?
অন্তত, অনুরোধ?

৪.
আজকাল বড়ো ভুলো মন;
মুখখানিও আবছা-
তবে কি সত্যিই ভুলে যাচ্ছি?
ভুলে গেছি, ভেসে যাচ্ছি;
যেমন করে ভুলে যেতে হয়,
কটু কথা, যুক্তি, তক্কো আরো
কত্তো কী!



বৃষ্টি-বিকেল

১.
রোজনামচায় জমছে কথা,
বাহারী খাতা হলুদ পত্রে।
কর্সিকাতে বৃষ্টি, বিকেল;
ব্যালকনিতে হোঁচট খাচ্ছে
তোমার, আমার-
এক সকাল, বিকেল।

২.
যদি বা কেউ প্রশ্ন করে;
ন"তোমরা,
কেমন বড়ো হলে?"
চিন্তা সব লাটে উঠছে।
যদিও তা ঠিক নয়-
সত্যটি এবার জানুক সবাই।


হুড়মুড়িয়ে ইতিহাসের ছেলে
ঘুরে চলেছে-
অবাক মোহে।

৩.
মনে পাগল, মেধায় পাগল
বাউন্ডুলে আর লাগামছাড়া-
তাল হারিয়ে, লয় খুইয়ে;
নুইয়ে পড়েছে বাধ্যবাধকতা! 

৪.
ভাঙছে মানুষ, ভাঙছে আকাশ
ভাঙলো না মেঘ, বর্ষা, বাতাস।

তবে সে হাল ছাড়েনি,
দেখতে কেবল বড়ো হয়েছে!

৫.
ওঁর কথা?
না বল্লেও পারতাম;
খামোখা,
নতুন করে আবার যেন কোথায় একটা পড়ে গিয়ে,
কিছুটা পথ পিছিয়ে ইউটার্ন দিয়ে বেরিয়ে,
বেশ অনকটাই এগিয়ে গেলাম।


তিলোত্তমা ও ভিগিসি

১.
সারা শরীরে বর্ষা বেয়ে ওঠে;
আষ্টেপৃষ্ঠে জলকণা;
এঁঠো।
তর্জনী, মধম্যা পেরিয়ে, শিড়দাঁড়ায় বসা-
বিন্দু বিন্দু।

২.
প্রত্যেকের নাম আলাদা;
এক আমি ঐ জলে ভাসি,
আরেক আমি উওপ্ত,ভীরু প্রেমিক;
বিন্দু বিন্দুর সিন্ধায়।

৩.
এমন সময় ডুব সাঁতার-
অন্য সময়;
মধ্যবিত্ত পরিবারের বসন্ত।
কে আমার আপন জন /কে আমার পরকীয়া/
গুলিয়ে যায়-
সারা শরীর আঠা-আঠা;
রোদ-বৃষ্টির জলছাপ,
খামোখা;
মাখা-মাখা।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন