দোঁহা

ব্যান্ড সংগীতে ইতিহাস : দক্ষিণ কোরিয়ার বিটিএস

 


 মিঠুন মুখার্জী

বাংলা গানে ব্যান্ড সংগীত বতর্মানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুবক-যুবতীদের মধ্যে ব্যান্ডের গান এমন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে যে তারা এইসব গান শুনলে পাগলের মতো হয়ে যায়। গানের তালে তালে নাচ ও লিপ মেলানো তো চলতেই থাকে। আসলে বতর্মান সময়ের অতিবাস্তব বিষয় এই গানের কথা হিসাবে থাকে। সর্বপ্রথম বাংলা ব্যান্ডের সূত্রপাত হয়েছিল মোহিনের ঘোড়াগুলি' দিয়ে। এরপর দুই বাংলায় একের পর এক জনপ্রিয় ব্যান্ডের আবির্ভাব ঘটে। চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস, ভূমি, ফসিলস, দোহার, লক্ষীছাড়া, উজান, কালপুরুষ, পরশপাথর, কায়া ইত্যাদি ব্যান্ডগুলির সঙ্গীত শিল্পীরা ও তাদের গাওয়া গানগুলো বতর্মানে যুবসমাজের আলোচনার বিষয়। এইরকম সারা পৃথিবীতে এমন অসংখ্য ব্যান্ড রয়েছে যাদের গান বিশ্বের মানুষের মনকে জয় করে নিয়েছে। ব্যান্ডের শিল্পীরা সংগীতপ্রিয় মানুষের আলোচনার বিষয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০১০ সালে  সাতজন যুবক মিলে বিটিএস নামে একটি বয় ব্যান্ডের জন্ম দেয়। এই ব্যান্ডের পুরো নাম বাংটন বয়েজ (Bangtan Boys)। ২০১৩ সালে বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্টের অধীনে আত্মপ্রকাশ করে। যাদের গান এখন সমগ্ৰ বিশ্ববাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয়। এটি একটি হিপহপ গ্ৰুপ, তাদের বাদ্যযন্ত্রশৈলীতে বিস্তৃত জেনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের গান প্রায়শই ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাষ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, মানসিক স্বাস্থ্য, স্কুল বয়সের যুবকদের সমস্যা এবং বয়সের আগমন, ক্ষতি, নিজেকে ভালোবাসার দিকে যাত্রা এবং ব্যক্তিত্ববাদের থিমগুলোতে স্পর্শ করে। তাদের ফ্যানডম.. Army যাদের মানে হল ' Adorable Representative Mc for youth' বিশ্বব্যাপী বেড়েছে,বিটিএস ব্যান্ড বেশ কয়েকটি বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছে। বিশ্বের বৃহত্তম বয়ব্যান্ডের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে 'Bangtan Boys' । বিভিন্ন দেশের যুবক-যুবতীদের কাছে আলোচনার বিষয় তাদের গান ও তারা। ভাষা না বুঝলেও সুরের ও তালের সাথে সাথে তারাও মেতে ওঠেন। এই সাতজন শিল্পীরা হলেন।
                         ১) জিন
                         ২) সুগার
                        ৩) জে হোপ
                        ৪) আর এম
                        ৫) জিমিন
                        ৬) ভি
                        ৭) জং কুক।
১) জিন : জিন হলেন বিটিএস ব্যান্ডের সবচেয়ে প্রাচীন সদস্য। তার পুরো নাম কিম সেওকজিন। তিনি কন্ঠশিল্পীর দায়িত্বে আছেন এবং তাকে ওয়ার্ল্ড  ওয়াইড হ্যান্ডসাম নামে ডাকা হয়।
২) সুগার : বিটিএস ব্যান্ডের দ্বিতীয় প্রচীনতম সদস্য হল সুগার। তার পুরো নাম মিন ইয়ংগি। তিনি এই ব্যান্ডে আংশিকভাবে পিং-এর দায়িত্বে আছেন এবং আগস্ট ডি নামে পরিবর্তনশীল অহংকার রয়েছে।
৩) জে হোপ : বিটিএস ব্যান্ডের শক্তিদাতা হলেন জে হোপ। তার নতুন নামকরণ করা হয়েছে সানসাইন। তার পুরো নাম জং হোসোক। তিনিও আংশিকভাবে rapping-এর দায়িত্বে আছেন।
৪) আর এম :  আর এমকে বিটিএস ব্যান্ডের নেতা বলা যায়। তার পুরো নাম কিম নামজুন। এই ব্যান্ডে আংশিকভাবে rapping-এর দায়িত্বে আছেন তিনি। অগনিত বস্তু তিনি ভাঙার কারনে তাকে ধ্বংসের দেবতার ডাকনাম দেওয়া হয়েছে।
৫) ভি : ভি হলেন বিটিএস ব্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় সদস্য। তার পুরো নাম কিম তাইহিউং‌। তিনি এই দলে কন্ঠশিল্পীর দায়িত্বে আছেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষের তকমা পেয়েছেন।
৬) জিমিন : জিমিন হলেন বিটিএস ব্যান্ডের মাকনা লাইনের প্রাচীনতম সদস্য। তার পুরো নাম পাক জিমিন। লিড ভোকালের দায়িত্বে আছেন এই জিমিন। তিনি এই ব্যান্ডে গানে উচ্চ নোটেশনের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
৭) জাং কুক : জাং কুক হলেন বিটিএস ব্যান্ডের মাকনা ও সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্যদের মধ্যে অন্যতম। তার পুরো নাম জিওন জাংকুক। তিনি প্রধান কন্ঠশিল্পীর দায়িত্বে আছেন। তার বহুমুখী প্রতিভার কারনে তাকে গোল্ডেন মাকনাই বলা হয়।
           ২০১০ সালের পর থেকে বতর্মান সময় পর্যন্ত বিটিএস ব্যান্ডের সদস্যরা যেসমস্ত এ্যালবাম বের করেছেন তার বেশিরভাগই সারা বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের স্টুডিও থেকে এই এ্যালবামগুলো তারা প্রকাশ করেছেন। এই দুটি স্টুডিও থেকে প্রকাশিত এ্যালবামের নাম সালসহ নিম্নে দেওয়া হল -----

                  ।। কোরিয়ান স্টুডিও এ্যালবামসমূহ।।
                          ১) ডার্ক অ্যান্ড ওয়াইল্ড (২০১৪)
                          ২) উইংস (২০১৬)
                          ৩) লাভ ইওরসেল্ফ: টিয়ার (২০১৮)
                          ৪) ম্যাপ অব দ্য সোল: ৭ (২০২০)
                          ৫) বি (২০২০)।
                   ।। জাপানি স্টুডিও এ্যালবামসমূহ ।।
                          ১) ওয়েক আপ (২০১৪)
                          ২) ইউথ (২০১৬)
                          ৩) ফেইস ইওরসেল্ফ (২০১৮)
                          ৪) ম্যাপ অব দ্য সোল: ৭ – দ্য জার্নি
                            (২০২০)        
             দক্ষিণ কোরিয়ার এই ব্যান্ডের সদস্যরা ২০১৪ সাল থেকে গানের জন্য বিভিন্ন ট্যুর করেছেন। যে কনসার্টগুলির বেশিরভাগ সফল ও মানুষের মনে দাগ কেটেছে। ২০১৪ সালের থেকেই এই বিটিএস ব্যান্ড সমগ্ৰ বিশ্বে মানুষের মনে দাগ কাটতে শুরু করে। তাদের সঙ্গীতের ট্যুরগুলির এক একটি নাম দিয়েছেন তারা। তাদের ট্যুরগুলি সালসহ নিম্নে দেওয়া হল ----

১)দ্য রেড বুলেট ট্যুর (২০১৪–২০১৫)
২)ওয়েক আপ: ওপেন ইওর আইস জাপান ট্যুর (২০১৫)
৩)দ্য মোস্ট বিউটিফুল মোমেন্ট ইন লাইফ অন স্টেজ  ট্যুর (২০১৫–২০১৬)
৪)দ্য উইংস ট্যুর (২০১৭)
৫)লাভ ইওরসেল্ফ ওয়ার্ল্ড ট্যুর 

     বিটিএস ব্যান্ডের অসংখ্য গান রয়েছে যেগুলো খুবই জনপ্রিয়। তাদের খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। 'ডাইনামাইট' গান দিয়ে বাজিমাত করেছে সারাবিশ্বের সংগীত অনুরাগীদের মন। জয় করেছে অনেক স্বীকৃতি ও সাফল্য। ২০২০ সালে বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে টপ সোশ্যাল আর্টিস্ট বিভাগে জাস্টিন বিবার ও সেলেনা গোমেজকে হারিয়ে নজর কেড়েছে এই ব্যান্ড। ভারতে এদের ফ্যানবেস বরাবর মাত্রাতিরিক্ত। শুধু তাই নয়, কোরিয়ান গানের দল হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথমবারের মতো গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়ে নতুন ইতিহাসও তৈরি করেছিল তারা। সাত সদস্যের এই ব্যান্ড ২০১৩য় ডেবিউ করে ‘নো মোর ড্রিম’ গানটি দিয়ে। অ্যালবামের নাম ছিল ‘টু কুল ফোর স্কুল’। সদস্যদের সকলেরই বয়স পঁচিশের কাছেপিঠে। জিমিন, ভি, জুংকুকের গানেই বুঁদ এখনকার প্রজন্ম।মিউজিক ব্যান্ড হিসেবে জনসংযোগের জন্য সবচেয়ে বেশি টুইটার ব্যবহার করায় গ্ৰিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও করেছে বিটিএস।
          বিটিএস ব্যান্ড সারা বিশ্বে এত বছরে প্রচুর পুরস্কার অর্জন করেছে। একবার দুবার নয় একই পুরস্কার একাধিকবার পেয়েছেন। বিশ্বের ব্যান্ডের গানের ইতিহাসে এতগুলো পুরস্কার আর কোনো ব্যান্ড পায় নি। বিটিএসের পাওয়া পুরস্কারের নামগুলো নিম্নে দেওয়া হল -----
১)আমেরিকান সঙ্গীত পুরষ্কার
২)অনুগেরাহ বিনতাং জনপ্রিয় বেরিতা হারিয়ান
৩)APAN মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৪)এশিয়া আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডস
৫)এশিয়ান অ্যাওয়ার্ডস
৬)বিবিসি রেডিও 1 টিন অ্যাওয়ার্ডস
৭)বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৮)ব্রাভো মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৯)ব্রাভো অটো পুরস্কার
১০)ব্রিট অ্যাওয়ার্ডস
১১)সার্কেল চার্ট সঙ্গীত পুরস্কার
১২) ই! পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস
১৩)দৈনিক সংস্কৃতি পুরস্কার
১৪)ফ্যাক্ট মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
১৫)গাফা-প্রিসেন
১৬)জিনি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
১৭)গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডস
১৮)গোল্ডেন ডিস্ক পুরস্কার
১৯)গ্র্যামি পুরষ্কার
২০)Hanteo সঙ্গীত পুরস্কার
২১)iF ডিজাইন পুরস্কার
২২)IFPI পুরস্কার
২৩)iHeartRadio MMVAs
২৪)iHeartRadio সঙ্গীত পুরস্কার
২৫)জাপান গোল্ড ডিস্ক পুরস্কার
২৬)জাপান রেকর্ড পুরস্কার
২৭)KOMCA পুরস্কার
২৮)কোরিয়া প্রথম ব্র্যান্ড পুরস্কার
২৯)কোরিয়া জনপ্রিয় সঙ্গীত পুরস্কার
৩০)কোরিয়ান ব্রডকাস্টিং অ্যাওয়ার্ডস
৩১)কোরিয়ান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৩২)কোরিয়ান পিডি পুরষ্কার
৩৩)LOS40 সঙ্গীত পুরস্কার
৩৪)মামা পুরস্কার
৩৫)মেলন মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৩৬)মিউস প্রেমিওস নিক
৩৭)এমটিভি ইউরোপ মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৩৮)এমটিভি মিলেনিয়াল অ্যাওয়ার্ডস
৩৯)এমটিভি মিলেনিয়াল অ্যাওয়ার্ডস ব্রাজিল
৪০)এমটিভি মুভি ও টিভি পুরস্কার
৪১)এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৪২)এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস জাপান
৪৩)মাইক্স মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৪৪)নিকেলোডিয়ন আর্জেন্টিনা কিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস
৪৫)Nickelodeon Colombia Kids' Choice Awards
৪৬)নিকেলোডিয়ন কিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস
৪৭)নিকেলোডিয়ন মেক্সিকো কিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস
৪৮)NME পুরস্কার
৪৯)এনআরজে পুরস্কার
৫০)প্রিমিয়াস ওডেন
৫১)গর্বিত কোরিয়ান পুরস্কার
৫২)রেডিও ডিজনি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৫৩)রকবজর্নেন
৫৪)সিউল সঙ্গীত পুরস্কার
৫৫)সংক্ষিপ্ত পুরস্কার
৫৬)সুম্পি অ্যাওয়ার্ডস
৫৭)সোরিবাদা সেরা কে-মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৫৮)স্পেস শাওয়ার মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৫৯)Spotify পুরস্কার
৬০)সুইস মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
৬১)টিন চয়েস অ্যাওয়ার্ডস
৬২)টেলিহিত পুরস্কার
৬৩)ইউকে মিউজিক ভিডিও অ্যাওয়ার্ডস
৬৪)বৈচিত্র্যের হিটমেকার
৬৫)ভি চার্ট পুরস্কার
৬৬)ভি লাইভ অ্যাওয়ার্ডস
৬৭)ওয়েবি অ্যাওয়ার্ডস
৬৮)WSJ উদ্ভাবক পুরস্কা
     
পরিশেষে বলাযায় বিশ্বের ব্যান্ড সংগীতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিটিএস ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই ব্যান্ডের সাতটি শিল্পী সাতটি রত্ন। তাদের গান যুবক-যুবতীদের প্রানের সম্পদ। তাদের গাওয়া গানগুলো বিশ্বরেকর্ড হোল্ড করেছে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে এই ব্যান্ডের এক সদস্যের গানে বিশ্ববাসী মেতে উঠেছিল। আগামীদিনে এরা আরো নতুন নতুন মনে রাখার মতো গান উপহার দেবেন, যেগুলি বিটিএস ব্যান্ড ও তার শিল্পীদের খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেবে।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন