নেই সে জলসা
রাত্রির গভীর থেকে সুরের মূর্ছনা
আলোকিত করে দেয় অন্ধকার রাত
তবলায় বেজেছে বোল, হারমোনিয়াম
সেতার সারেঙ্গি বাজে অদ্ভুত দ্যোতনা
কণ্ঠশিল্পী এসে গেছে জলসা আসর
মৌতাতে মৌতাতে রাত কেটে যাবে ভোর
অলৌকিক জাদুস্পর্শ কৈশোরের ঘোর
বিচিত্রানুষ্ঠানে মত্ত আমাদের দিন—
হেমন্ত মান্না দে আর শ্যামল মানবেন্দ্র
সন্ধ্যার আরতি দেখি কিশোর ম্যাজিক
হারানো দিনের দিকে চেয়ে থাকি স্থির
সেই সব আলোমাখা সংগীতের রাত
স্বপ্ন ঝরে, সুর ঝরে, রাগের বন্দিশ—
বুকের গভীরে থেকে বিরহের ব্যথা
আজ শুধু স্মৃতি পড়ে, নেই সে জলসা!
হারানো উদ্বিগ্ন
আমার ভয়ের কাছে অঞ্জলি ছিল না
তবু প্রেম ধীরে পায়ে এসেছিল কাছে।
আমি তো বুঝিনি কিছু রহস্য ঠিকানা
উদাসীন হাবভাব তুমুল তাতাচ্ছে!
মাঝরাতে উঠে বসি স্বপ্ন থেকে দূরে
সাঁকো ভাঙা মানচিত্র জোড়ের হাওয়া
পেতেছে আসন তার হিমায়িত পুরে
ছোঁয়া থেকে স্পর্শ লাগে অদ্ভুত পাওয়া।
গল্পের চরিত্র যারা সরে সরে যায়
দেশ ভিন্ন ভাষা ভিন্ন তবু কথা হয়
গোপনে সম্পর্ক হয় মেলে অভিপ্রায়
নান্দনিক কামসূত্রে প্রেম তৃপ্ত নয়।
কিছু কী চেয়েছে প্রেম আক্ষরিক চিহ্ন!
হৃদয়ের জন্মদাগ করুণ আকুতি
প্রবল উৎসাহে ভাসে হারানো উদ্বিগ্ন
প্রেমবহ্নি খোঁজে শুধু আপন আহুতি!
৩
বিমূর্ত প্রভেদ
রবীন বসু
সম্প্রসারিত বিকেল খুলে দিল গিঁট
হাওয়ার মশারি থেকে উড়ে যায় ঘুম
বদ্ধ ঢাকনা খুললেই গন্ধের চিৎকার
ক্লেদাক্ত ভূমিকা থেকে মানুষের দল
সরে আসে, বাহ্যজ্ঞান তিরোহিত হয়
আরও এক পঙ্কিল আবর্তে সেঁদিয়ে
ধুন্ধুমার বেধে যায়, এইবার তর্পণ
সাদা কাক উড়ে যায় শস্যহীন দিন
বালির উৎসবে মাতে স্মৃতি পরম্পরা
আমাদের গিলে খায় পোড়াদগ্ধ কাঠ
তবু সম্প্রসারিত যে বিকেল তির্যক
চাহনি নিয়ে হাঁটছে, তার গায়ে দেখি
সম্ভ্রমহীন পোশাক আর চক্রাবক্রা
উল্লসিত প্রাচুর্যের পরত প্রলেপ
টেরাকোটা সেজে ওঠে বিমূর্ত প্রভেদ
বানানো গল্পের দিকে চেয়ে আছি আমরা।