অনিন্দিতা মন্ডল
The conscious act...
down...
us to savour the world...
rush... "
“yutori নামে কোথায় যেন পড়েছিলাম পুরোটা মনে করতে পারছিনা”
টেবিলে থুতনি রেখে ভোলানাথ ভেবেই চলেছে সেই কাকভোর থেকে। দুবার কুকুর, ভুলো টহল দিয়ে গেল। অগোছালো টেবিলে সকালের নরম রোদ ভোলার চোখে পড়ছে; ঘুমিয়েছে কী না ঠিক মনে করতে পারছেনা। গতকালই মা টেবিল গুছিয়েছে অথচ টেবিলে কি নেই— পেন, পেন্সিল, কাগজ, বোতল, কাঁচিও বাদ যায়নি। শম্ভু রক্ষিতের বইটা টেবিলেই রেখেছিল অথচ তা আর পাচ্ছেনা। এই করে কত কী যে ভুলে যায় তার ইয়ত্তা নেই। তার শুধু মনে হয় আগের জন্মে সে লেখক ছিল, কত গল্পের প্লট অর্ধেক লিখে মারা গেছিল, এ জন্মে সেসব শেষ করবে। পরজন্মে সুযোগ পাবে কে বলতে পারে? কিন্তু এ জন্মের সবকিছু সে ভুলে যায়। হারুকাকা তাইতো তাকে বলে “ভুলোর মালিক ভোলা”। ব্রেকফাস্ট করে তার আজ এক জায়গায় যাওয়ার কথা অবশ্য একা নয় সাথে যাবে তার দুই সাকরেদ, রাজু আর ম্যান্ডি। মুশকিল হচ্ছে কোথায় যাবে সেটাই ভুলে গেছে। এই নিয়ে মায়ের সাথে ধুন্ধুমার কান্ড। রাজু ম্যান্ডিও ফিরে গেছে।
সে ভাবে আগের জন্মের ইচ্ছা এ জন্মেও বোধহয় পূরণ হবেনা। রাজুরা বলে— “তুই নাকি লেখক হবি! হাতের মোয়া নাকী! বেঞ্চে, বাসে, দু লাইন লিখে! তাও মনে রাখতে পারলেও হতো”। সত্যি সে বুঝতে পারেনা, কেন মনে রাখতে পারেনা। এক মাস কি দু মাস হবে তিন্নি ছেড়ে গেল একই কারণে অথচ সে তিন্নির জন্মদিন ঠিক মনে রেখেছিল। সেদিন তিন্নির সাথে দেখা করার কথা। ট্রামে কাগজে একটা গল্পের বাকিটা লিখেছিল। সারা দুপুর তিন্নির সাথে, কত গল্প; ওর গোলাপী গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আনন্দ যেন বয়স কমছে। নরম আধোভেজা হাত ভোলার হাতে রেখে যেই ঠোঁট ছুঁতে যাবে তার হঠাৎ মনে পড়ল গল্পটার আসল চরিত্রগুলোর নাম ভুলে গেছে। তিন্নিকে বলতেই রেগে, ধাক্কা মেরে চলে গেল, সেই যে গেল আর ফিরলনা শুধু বলে গেল “থাকো গল্প নিয়েই, এমন আধপাগল এর সাথে আমি থাকবনা”। সেই চরিত্রগুলোকে আজও মনে করতে পারেনি অথচ তিন্নিকে ভোলা হয়নি। এই প্রথম কোনো গল্প একটানা লিখছিল। রাজুদের বড় মুখ করে বলেছে।
বাইরে হইচই সাথে রাজু ম্যান্ডির গলা। বাইরে যেতেই দেখে প্রায় গোটা পাড়া এসে হাজির উঠোনে।
“আবার কি কিছু ভুলে গেলাম!”
ভাবতে ভাবতেই রাজু আর ম্যান্ডি এসে জড়িয়ে ধরল,
“কামাল করে দিয়েছ গুরু।”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, “কি"?
হারুকাকা চেঁচিয়ে উঠল—
“তুই তো বিশাল লেখক। আর তো ভুলোর মালিক ভোলা বলা যাবেনা।”
কিছু বুঝতে পারলনা ভোলা।
বাকিরা ঘাড় নেড়ে উঠল। মায়ের হাতে খবরের কাগজ, চোখে জল। রাজু মায়ের হাত থেকে কাগজ এনে ভোলার হাতে দিলো— “এই দেখ, পকাশক তোকে ডেকেছে”
“গত 5 ই ডিসেম্বর 66 নং রোডের পাশের পার্কে, একটা ডায়রি ও দুটি তা কাগজে লেখা এই গল্পটি, একটি গোলাপ, দুটো পাসপোর্ট ছবি কুড়িয়ে পেয়েছি। কিন্তু গল্পটি অসম্পূর্ণ। তাঁর লেখা বিনামূল্যে আমাদের প্রকাশনী থেকে ছাপব। আপনি এই বিজ্ঞাপন দেখলে আমাদের সাথে শীঘ্রই যোগাযোগ করুন।” ( ডায়রির ছবি— উপরে ভোলানাথ সমাদ্দার লেখা, গোলাপ, আর দুটো পাসপোর্ট ছবি)
ঘর গমগম করছে, রাজুরা মিষ্টি আনতে বাজারে ছুটল, ভুলো কোলে উঠতে চাইছে। এত আনন্দেও ভোলানাথ একা ল্যাম্পপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে। তার গতজন্মে ফেলে আসা জীবন এজন্মে সম্পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু সে মনে করতে পারছেনা কোন গল্প, কবে লিখতে শুরু করেছিল, কি প্লট? অথচ মনে করতে পারছে 5 ই ডিসেম্বর ছিল তিন্নির জন্মদিন, ওই পাসপোর্ট ছবি দুটোর মধ্যে একটা তিন্নির। তাকে কি আজীবন গতজন্মের দায় বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে? এ জন্মে কি আর লেখক হওয়া হবেনা?