একটি দীর্ঘশ্বাস, চ্যাপলিনের
(বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে)
গ্যাসচেম্বারে ঢোকার আগে কেউ কার্টুন আঁকছেন,
আর চ্যাপলিন, ওই আঁকা মানুষটার মতো দাঁড়িয়ে—
এক পা এগিয়ে,
এক পা পেছনে,
মধ্যবর্তী শোক
গোঁফের নিচে ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছে সব না বলা প্রশ্ন।
সে বলে না কিছু,
কারণ যুদ্ধের ভাষা যারা বোঝে, তাদের কাছে কবিতার মূল্য নেই।
সে হাসায়,
কারণ কান্না এখন রাষ্ট্রদ্রোহ।
সে হেঁটে যায়, পিছন পানে তাকিয়ে—
যেন টুপি খুলে বিদায় জানায়
একটি সভ্যতার শেষ দৃশ্যকে।
তার ছায়া পড়ে স্টালিনের দেহতলে,
হিটলারের দৃষ্টিতে,
রুজভেল্টের চেয়ারে—
কিন্তু সে কারো নয়,
সে কেবল একা।
চ্যাপলিন জানত—
গণহত্যার থেকেও বেশি ভয়ের,
একটা নীরব দর্শকশালা।
চ্যাপলিনের নির্জনতা
হাসছিল সে—
যখন শহর ভস্ম হয়ে যাচ্ছিল
বোমার নিচে।
তার টুপি উড়ে যেত গ্যাসচেম্বারের ধারে,
আর সে কুড়িয়ে নিত—
যেন সেটাই তার শেষ সংলাপ।
লোকে হাসত,কারণ তার শরীর বাঁকা ছিল,
আর ইতিহাস সোজা হয়ে গিলছিল মানুষ।
সে একা হেঁটে যেত কুয়াশায়,
কাঁধে কোনো রাষ্ট্র ছিল না,
তবু প্রতিটি পায়ে যেন পিষে দিত একটা যুদ্ধের মানচিত্র।
চ্যাপলিন,
আপনি নীরব ছিলেন—
কারণ আপনি জানতেন...আওয়াজ করে কাঁদলে
পৃথিবী তা শুনত না।
চ্যাপলিনের জুতো
সে হাঁটত—
যেন প্রতিটি পা ফেলত অশ্রুর ওপর,
আর হেসে ফেলত—
ঠিক সেইখানে,
যেখানে কাঁদার কথা ছিল।
সে একা ছিল,কিন্তু শহরটা ছিল ঠিক তার পেছনে,
একটা ছেঁড়া টুপি আর অদ্ভুত লাঠির ছায়ায়, সে বয়ে নিয়ে যেত মানুষের সমস্ত হেরে যাওয়া ।
তার হাসির মধ্যে লুকিয়ে থাকত—
একটা কাটা রেশন কার্ড,
একটা প্রিয় মানুষের মুখ,
আর পৃথিবীর সমস্ত না বলা দুঃখ।
চ্যাপলিন,
আপনি আসলে কবি—
আপনার ভাষা ছিল নীরবতা,
আপনার ছন্দ ছিল হোঁচট খাওয়া।
আমরা আজও হাসি আপনার দিকে চেয়ে,
কারণ আমাদের কান্নাও আপনার সম্মানে হেসে ফেলে।