আদিত্য প্রত্যূষ
ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়...
সমাজের অলিন্দে যখন ঘুণপোকার উপদ্রব তখন খোলস চকচকে লাগলেও ভেতর ভেতর সব কলকব্জা অসার হয়ে পড়ে। বাইরের সংবেদনে শরীর তেমন ঠিক প্রতিক্রিয়া করে না। এই পক্ষাঘাতের সময় কিছু মানুষ ব্যতিক্রমি ধারণা দিয়ে সমাজকে জাগিয়ে তুলতে সচেতন হন। যে চিহ্নগুলোকে গড়পড়তা জনগণ সঠিক মূল্যায়ন করতে কিংবা সঠিক মূল্যায়নের অবসর দিতে পারেন না।
ত্বকের কোনো অংশ অসার হয়ে পড়লে সূক্ষ্ম সুচের ডগা ফুটিয়ে দেখা হয় সংবেদন আছে কিনা, ঠিক তেমনই কোনো সাড়াশব্দহীন অর্থাৎ সংবেদনহীন সমাজে স্লাং শব্দ সুচের মতো ব্যবহার করে হয়তো উপলব্ধির চেষ্টা করা হয়েছে যে সমাজের সংবেদনশীলতা কতখানি। কিংবা বিবেকের মোমবাতি কতক্ষানি অবশিষ্ট আছে। এই প্রক্রিয়াগুলোকে সবাই হয়তো যেমন সাপোর্ট করতে পারেন না আবার তেমনই একেবারে গরম তেলে বেগুন হয়ে বুড়বুড়ি কাটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। রাজা যা করতে পারেন সেটাকে আমরা হয়তো অধিকাংশ সময় মানতে বাধ্য হই আবার আমাদের ভেতর কেউ কেউ সেটাকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মাধ্যমে অস্বীকার করি। গ্রহণ বর্জন প্রতিনিয়ত চলছে।
গাছে ফুল ফোটে সবার সম্মুখে, কেউ খেয়াল রাখে আবার কারও অলক্ষ্যেই হয়তো এটা ঘটে যায়। আমার সামনে যেটা ঘটছে হয়তো সেটার প্রতি আমার আগ্রহ আছে আবার এমনও হতে পারে যে ঘটনা আমার প্রত্যাশিত ছিল না সেটাও আমার সামনে ঘটমান। আমরা মানুষ অনেককিছুই গোপন রাখাকে স্বাভাবিক সুন্দর বলে মনে করি এর বিপরীতে আমাদের ধারণাকে কখনোই প্রতিস্থাপিত করতে পারি না। শুধুমাত্র দেখাকে বদলে নিলেই ব্যপারটা অন্যরকম ভাবে ফুটে উঠতো। কিছু কার্যকলাপ হয়তো উন্মোচিত হলে ফুলের মতোই সুদৃশ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা জন্মাতো। আবার সুন্দর ও অসুন্দরের ধারণা সবার মনে এক নয়। তাহলে কেন এই খনন! হয়তো সেই সংখ্যাগুরুরই ফিতে দিয়ে মাপতে চাইছি জগৎ। না এটা কখনই নয়, সংখ্যার ভেতর থেকে একের উপস্থিতিকে দৃশ্যমান করাই এর উদ্দেশ্য।
অন্ধকারে আমরা সচরাচর আলো খুঁজি। অন্ধকারে অপেক্ষাকৃত আরো গাঢ় অন্ধকার কখনই খুঁজি না, খুঁজলে সামনের অন্ধকার হালকা মনে হতো। এই বিপরীতমুখী চেতনার সহজ রাস্তায় সম্ভাবনাগুলো একত্রে হয়তো সিংহদরজার প্রতিরূপ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতেই পারতো। এই সম্ভাবনাময় গাছগুলোয় জল দিলে হয়তো ফুল ফুটতেও পারতো আর সেই সঙ্গে প্রজাপতির দেখাও হয়তো মিলতো। এবং সম্ভাবনার জানালাগুলো বহুরৈখিক হয়ে উঠতো।
তবে কখনোই কাঁটাকে অবজ্ঞা নয়, কাঁটার প্রতি স্বচেতন হতে হবে। কাঁটাদের উপেক্ষা করে ফুলের কাছাকাছি হাত বাড়ানো যাবে না, বাড়ালে কাঁটাগুলো নিজের অস্তিত্বের পরখ জানাবে। সুতরাং কোনোকিছুর প্রতিই অনুরাগ রাখলে কোনোকিছু আমার অনুরাগী হয়ে উঠতেই পারে। ভাবলেশহীন বৃষ্টির ভেতর আরো গভীর বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় নিজেকে দাঁড় করানো যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখার প্রয়োজন।
কবিতা সাহিত্য সংস্কৃতিতে যেমন বহুরৈখিকতা এসেছে সেই সঙ্গে সঙ্গে জনগণের অবচেতন মনে সমাজের অবচেতনে রাজনীতির অলিন্দে প্রবেশ করেছে এর শিকড়। নীতি-নৈতিকতা স্তরে স্তরে সরে গেছে অন্য পরিসরে।
গাছেরা যেমন বহুরৈখিক ভাবে মেলে দেয় ডালপালা সেই আদিম অনাদিকাল থেকেই ঠিক তেমনই রাজনীতি সমাজনীতি ধর্মনীতি সব খানেই ঢুকে গেছে মৌলবাদীদের বহুবৈকল্পিক গভীর শিকড়। এই অবস্থা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে সময় এবং সময়ই এর অবসান ঘটাবে।
যখন আমার হাতের কড়া আরও মজবুত না করে পায়ের বেরিও খুলে দেওয়া হলো তখন আমি পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় আমার আর কিছুই করার রইলো না। নির্বাক দর্শক আমি, আমার বোধ আমার চাওয়া-পাওয়া সবই আমি কেন্দ্রীক। আমার বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সব দরজাই তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সময় ও চলমানতায় তবুও আলো আছে দৃষ্টি ক্ষীণ হলেও যা দেখতে পাওয়া যায়।