দোঁহা

সন্মাত্রানন্দের কবিতা



 মাদ্রাজ শহরের সেই বিশ্রান্ত  দুপুর... 

গ্রীষ্মদাবদাহময় সমস্ত বছর
আগেতে মাদ্রাজ ছিল,এখন চেন্নাই।
প্রাচীন নগরীগাত্রে হালের মস্করা:
রজনীক্লান্তের ছবি বিশাল হোর্ডিঙে,
গোপুরম, জয়াম্মাল, স্যান্থোম চার্চ --
তারই ফাঁকে ছায়াছায়া কারুদেবালয়।

কাজ সেরে ভ্রান্তিহীন ম্লান করণিক
দেখেছি বৈশিষ্ট্যরিক্ত এক মধ্যদিনে।
হিসাব সমাধা করে স্কুল বারান্দায়
ছায়ায় আনত বসে মধ্যাহ্নভোজন,
ভাজা লঙ্কা দিয়ে খায় তৈরসাদম্‌ ,
নরম বাঙালি যাকে ‘দইভাত’ বলে।
সেই খাদ্য, সঙ্গে এক জলের বোতলে
কটু অম্ল স্বাদযুক্ত ঘোলের সরবৎ।
আহার সমাধা হলে কাপড় বিছায়ে
এক পলে ডুবে যায় গাঢ় নিদ্রাবেশে।

বারান্দার ছায়ামধ্যে দ-আকারে শুয়ে
ঘুমায় কেরাণী দেখি ভাবলেশহীন,
কোথায় বাড়ি যে তার? সেই মাদুরাই?
অথবা চেঙ্গালপেট্টু শহরের কাছে?
ঘরে তার অপেক্ষায় ঘরণী কি আছে?
রূপা নাকছাবি পরা, পলিতকেশিনী,
জড়ায় খোঁপাতে নীল বেলিফুলমালা?
আর কে কে? আছে তার ছেলেমেয়ে ক’টি?
সেখানে জীবন আছে অভাবসুহৃদ?
মাসশ্রম শেষে সেই জীবনের লোভে
ঘরে যায় কেরাণীটি কত দিন পর?
এ মুহূর্তে এইসব জানা তো যাবে না,
সে এখন চিন্তাহীন নিদ্রায় নির্ভার।

যানবাহনের শব্দ, মাদ্রাজ শহর --
রৌদ্রদগ্ধ নগরীর সারসক্রেঙ্কার,
তবু এরই মাঝে শুয়ে বারান্দাছায়ায়
জীবনপ্রেমিক,আহা, কেরাণী ঘুমায় !
 

ফেজ টু

বাড়ি ও বাগান-বাড়িও।
ফেজ টু লাঞ্চড।
এইসব আজেবাজে প্রতিশ্রুতি
সামনের হোর্ডিং-এ। ফ্ল্যাটের বিজ্ঞাপন।
প্রথম বাক্যটি ব্যাকরণগতভাবে ভুল।
দু'বার 'ও' হয় না।
দু'বার ও জিনিস হয় না।
জীবন একটাই।
ফ্ল্যাট কেনার টাকা মধ্যবিত্ত
জমাতে পারে একবারই।
একবার ঠকলে
সারা জীবনের জন্য প্রতারিত।
বহুবার বহু ফ্ল্যাট কিনতে হলে
বহুবার বহু নারীসঙ্গ করতে হলে
বহুবার প্রতারিত হতে চাইলে
ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হতে হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন