পাখিরা উদ্বাস্তু হয়
(১)
চারিদিকে ধু ধু মাঠ
মধ্যিখানে দুটো গাছ, বট আর পাকুড়
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যুগ যুগ ধরে
লোকালয় থেকে বহুদূরে।
মাঝে মাঝে উৎসবে মেলা বসে
গাছের ছায়া জুড়ে।
দুটি গাছের ছায়াতে পুরো মেলা যায় এঁটে
চারিদিক থেকে দলে দলে মানুষ জন
আসে পায়ে হেঁটে।
গাছ দেখতেই উৎসাহ তাদের
মেলাটা উপরি পাওনা বটে।
ফসল তোলা শেষ
শূন্য মাঠে তখন হয় মেলার আয়োজন।
হাজার হাজার পাখির বসবাস দুটি গাছে
সকাল সন্ধ্যা তাদের কলতানে মুখরিত আপাতঃ নির্জন স্থান।
ঝড় ঝাপটা ও কম যায় না এদের ওপর দিয়ে
তবু, এক ডাল ভাঙলে অন্য ডালে
নিশ্চিন্তে আবার বাসা বানায় পাখি।
এ গাছের পাখি, ও গাছে ,
ও গাছের পাখি এ গাছে বাসা বদলায়।
মুক্ত আকাশের তলে
বড় সুন্দর পাখিদের এই দলবদ্ধতা
মাটির নিচে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত
এ বন্ধনের শেকড়
মানুষের চোখের সীমানায় যা অধরা।
(২)
একদিন কি জানি কি হলো
প্রচন্ড ভূমিকম্পে উলোট-পালোট হলো পৃথিবী
শেকড় উপ্রে উঠে এল পাকুড় গাছ
শূন্য মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো তার শাখা-প্রশাখা।
ও গাছে বসবাসকারী পাখিদের আর্তনাদে বিদীর্ণ হলো
এ গাছের পাখিদের হৃদয়
এরা আশ্রয় দিলো ওদের।
কেউবা উড়ে গেল পরিযায়ী হয়ে
এভাবেই কেটে গেল অ...নে...ক সময়।
নবাগতারা জানল না পূর্ব কাহিনী
কেউ কেউ জানলেও,
হৃদয়ের সেই একাত্মতা আর অনুভব করল না।
তারা শুধু দেখলো, দলে দলে পাখি
তাদের বাসস্থান, তাদের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে
তারা বিদ্রোহ করল।
পাখিদের মনে তৈরি হয়ে গেল বিভেদ প্রাচীর
আস্তে আস্তে সে প্রাচীর বাড়তে থাকল দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে।
বুড়ো পাখিরা অসহায় চোখে দেখতে থাকল
সে প্রাচীরের কঠোরতা।
সেদিন গাছের শেকড়ের সাথে সাথে
বিবেক, মনুষ্যত্বও হয়তো উপ্রে পড়েছিল কিছুটা।
এখন আর মেলা বসে না
পাখিদের আস্তানায় দূর থেকে ছুটে আসে না মানুষ শুধু বিভেদকামী কিছু হায়নার
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়
দিন-রাতের আকাশ
নিজ ভূমিতে পাখিরা উদ্বাস্তু হয়!