দোঁহা

সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

 


শূণ্যতা

সবচেয়ে আপনার সবথেকে দূর,
জীবনের স্বর-লিপি বিষাদের সুর।

অহেতুক অভিনয় দিন-গুজরান,
নীরবতা আনে একরাশ অভিমান।

রাখা-না-রাখায় কথা কিবা আসে যায়!
আঁকি-বুকি নিরাশার রোজ-নামচায়।

সুখ খোঁজে কান্নার পড়ন্ত বেলা,
চুপিসাড়ে মনে চলে নিদারুণ খেলা।

আছো-আছি কানামাছি এই ভাবে বেশ,
হৃদয়ের উষ্ণীষে বোনা বিদ্বেষ।

চিন্তনে শূণ্যতা তবু
জেগে রয়-
ভালবাসা নাম তার নিঠুর বোধহয়।



শীতের সাত-কাহন


আয়েস-কাঁথায় পানসে বিষন্নতা,
খড়ির আখর সময়-শাখের গা'য়।
আঁকশি-টানা স্মৃতির ঝরা-পাতা,
আগাম শীতের আভাস দিতে চায়।

নিশি-প্রাতের ঝিম-ধরা হিম-ভোরে,
স্বপ্ন-মাখা কুহেলিকার চর।
পশলা দু'এক পানসি ফুলের 'পরে,
হিম-শীতলী আসমানী নির্ঝর।

শিশির-স্নাত শালী-ধানের শীষ,
কিরণ-মালার হিরন-জরি চুল।  
ছৌ-মুখোশের বর্ণালী মিল-মিশ,
চিতই-ক্ষেতে রাই সরিষার ফুল।

কাপাস লেপে ভাপা-পিঠের ওম,
খেজুর-রসে মখমলী মৌতাত।
মেঠো-পথে মায়াবী বিভ্রম,
নীহারিকায় উধাও অকস্মাৎ।

শালতি-ভরা জিরেন রসে জ্বাল,
পারদ-নামা সাত-সকালের দোরে।
মাটির ঝিকে আগুন কাঠের শাল,
দামাল হাওয়ায় ধূমল ধ্বজা ওড়ে।

কনক-চূড়ে নলেন গুড়ের ছোঁয়া,
পান্তা-শীতে তাত-রসের বল।
পীঠে-পুলি, পায়েস, মুড়কি-মোয়া
দল-বেঁধে সব বন-ভোজনে চল।

আমার শীত এক উদাসী সন্ন্যাসী,
ধূসর-বরণ উত্তরীয় গা'য়।
স্ফটিক-মালায় সোহম-তত্ত্বমসি।
ভোরের দোরে এক-মুঠো রোদ চায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন