অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
এমন এক বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি, খানিক রম্যরচনার ঢঙেই শুরু করা যাক বরং। তারও আগে বলে নেওয়া দরকার, নিম্নোক্ত বিবরণের সব চরিত্র কাল্পনিক। স্থান, কাল, উপলক্ষও কেবল উদাহরণের প্রয়োজনে।
কোনও এক শীতের সন্ধ্যে। বালিগঞ্জের কোনও এক আধুনিক ড্রয়িংরুম। কাঁচের গেলাসে পানীয় রঙিন। সদ্য বিলেতফেরত উচ্চশিক্ষিত/উচ্চপ্রতিষ্ঠিত একেকজনের সঙ্গে অন্যদের আলোচনা জমেছে খুব। বাবুরা তখন ব্রেখট নিয়ে পড়েছেন। সেই সূত্রে ক-বাবুর বক্তব্য দিয়েই শুরু করা যাক।
“আপনি আর কি বলছেন মশাই। আমি তো যখন এবারে জেনিভায় গিয়েছিলম, ওই গ্রামটায় গিয়ে থেকে এসেছি। আহা, ওই যে গ্রামটা গো, নামটা পেটে আসছে মুখে আসছে না কিছুতে। ব্রেখট যেখানে ছিলেন। প্রায় মাস তিনেক।” পাশ থেকে খ-বাবুর মন্তব্য, “ওই গ্রামটার কথা বলছেন তো? আহা নামটা আমারও কিছুতে মুখে আসছে না। বড় বিটকেল নাম কিনা। আহা, বুঝেছি বুঝেছি। ওই যেখানে,” বলেই ফিক করে দাঁত বেরিয়ে এল হঠাৎ। ক-বাবুও আশ্বস্ত হয়ে বলে উঠলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম ঠিক ধরেছেন। ওখানেই গিয়েছিলাম বুঝলেন। বাড়িটাও তো দেখেছি মশয়। একেবারে মাঠের ওপারে বুঝলেন কিনা, নির্জন নিরিবিলি জায়গা। পাশেই একটা লেকের মতো কিছু। ওইসব জায়গায় তো, হেঁ হেঁ – বুঝলেন কিনা!” খ-বাবুও মাথা নেড়ে জবাব দেন, “আহা তার উপরে আবার শীতের দেশ। একটু লাল জল আর ওইসব অল্পবিস্তর তো …”
আমি অনেকক্ষণ থ মেরে বসে ক-বাবু আর খ-বাবুর কথা শুনছিলাম। এই সময়ে সাহস করে গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “মানে ওই সময়ে, ওই সব – একটু বুঝিয়ে দেবেন প্লিজ। গ্রামটার নাম আমারও মনে পড়ছে না। আসলে ব্রেখট অনেক জায়গাতেই তো গিয়েছিলেন বোধহয়। তাহলে -” ক-বাবু মুহূর্তমধ্যে আমাকে থামিয়ে দেন, “আহা এ জায়গা মোটেও আর পাঁচটা জায়গার মতো নয়। ব্রেখটের একগাদা পরবর্তীকালে ক্লাসিক হয়ে যাওয়া রচনা এইখানেতে বসেই লেখা হয়েছিল। হ্যাঁ! কিন্তু তার জন্য মনের-শরীরের পুষ্টিরও তো প্রয়োজন পড়ে ভাই। তাই একটু অমন দু’চারটে ঘটনা তো ঘটবেই!” আমি তখনও কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করি আবার, “ঘটনা বলতে -” খ-বাবু এবারে বিরক্ত হন, “দূর মশাই, পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে কি অমন স্ক্যাণ্ডালের কথা বলা উচিত? আপনার একটা বোধবুদ্ধি নেই? কেন মিছিমিছি ন্যাকা সাজছেন বলুন তো। আসলে তো সবই জানেন, খালি নতুন করে শোনার মতলব।” আমি অসহায় মুখে আরও কিছু বলার আগেই ক-বাবু সুললিত কণ্ঠে বলে ওঠেন, (বোধ করি ততক্ষণে নেশাটা তাঁর অল্প অল্প জমে উঠেছিল) “আহ, থামো না বাপু। না জানতেই পারে। সবাই কি আর তোমার মতো কেবল স্ক্যাণ্ডালের কথা পড়েই ঘুমোতে যায় নাকি?” খ-বাবু এই সময়ে “দাঁড়াও আমি তাহলে আরেকটা পেগ নিয়ে আসি বরং”, এই বলে চটেমটে প্রস্থান করলেন। ক-বাবু অম্লানবদনে বলে গেলেন, “তা হল কি ভায়া বলি শোনো তোমায়। ব্রেখট তো মাস তিনেক ওখানে থেকে নাটক-ফাটক লিখলেন। সে সব পরে ছাপাটাপা হল। বিখ্যাত হল। কিন্তু ব্রেখট এদিকে যখন সেই গ্রাম ছেড়ে পাততাড়ি গুটিয়ে স্বদেশে ফিরে গেলেন, দেখা গেল সেই গ্রামের মোড়লের মেয়ে থেকে শুরু করে একগুচ্ছ মেয়ে রাতারাতি পোয়াতি হয়ে বসেছে, খিক খিক” ক-বাবুর হাসিতে চড়া মদের গন্ধ আমার নাকে এসে ঠেকল।
আমি খুব বিনীত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, “তা ব্রেখট ওই সময়ে কি কি নাটক ওখানে বসে লিখেছিলেন, একটু যদি বলেন।” ক-বাবু জবাব দেন, “আহা, নামগুলোও ভুলে গেছো নাকি? সব, মানে প্রায় সবকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজই বলতে গেলে ওখানে,” “তবু, একটার নাম যদি ধরিয়ে দেন,” আমি নাছোড়বান্দা। -“আহ্, জ্বালালে দেখছি, ওই যেমন ধরো না – আহা, মানিকবাবু যে নাটকটা নিয়ে সিনেমা করলেন জনশত্রু না কি যেন নাম,” আমি জবাব দিই এবার, “গণশত্রু? কিন্তু সে তো ইবসেনের, এ্যান এনিমি অব দ্য পিপল। ওটা তো ব্রেখটের লেখা নয়।” ক-বাবু একটু যেন বিষন্ন হলেন। “নয়? সত্যি বলছ? আহা দাঁড়াও না, হ্যাঁ এইবারে মনে পড়েছে। খালি গুলিয়ে দাও, অয়দিপাউস অয়দিপাউস, বুঝলে? অয়দিপাউস, আন্তিগোনে আর কি যেন বলে মেদেয়া – হ্যাঁ মেদেয়া। প্রাচীন গ্রিক নাটকের আঙ্গিকে লেখা এই পুরো ট্রিলজিটাই তো ব্রেখট ওখানে বসে সাজিয়েছিলেন। খালি গুলিয়ে দাও। যাই,” এই বলে ক-বাবুও তখন তাঁর খালি হয়ে যাওয়া গেলাসের পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টায় অন্তর্হিত হলেন। আমি মনে মনে কেবল স্বর্গত সোফোক্লেস, ইউরিপিদিসের আত্মার অক্ষয় শান্তিকামনা করলাম। নেহাত প্লেটের ফিশফ্রাইটুকুই সেদিন একটু ভালো ছিল বোধহয়। নচেৎ দীর্ঘশ্বাসটুকুই বুকে নিয়ে ফিরতে হত।
আজকের যুগে দাঁড়িয়ে মনে হয় সংস্কৃতি সঙ্গে যৌনতার সম্পর্ক অনেকটা এই রকম। সংস্কৃতি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা দিয়ে কেনবার জিনিস। যে মুহূর্তে কাঞ্চনের বিচারে সংস্কৃতির উৎকর্ষ নির্ধারিত হচ্ছে, ঠিক সেসময়েই যৌনতার বিষয়টি ক্রমশ নগ্নতা, কাম, উত্তেজনা তদুপরি কেচ্ছার নিংড়ানো নির্যাসে পরিত্যক্ত হচ্ছে। যৌনতা এবং নগ্নতা যে কখনই একের সঙ্গে এক সম্পর্কযুক্ত বিষয় নয়, যৌনতার অস্তিত্ব যে কখনই স্রেফ সস্তা সাহসিকতার লক্ষণ নয় – বরং তা আদতে এক স্বাভাবিক, জৈবিক প্রকাশ – সেই বিষয়টাকেই আমরা নিঃশেষে ভুলে যেতে পেরেছি। এই নতুন ধরণের সংস্কৃতিকে আমরা বোধহয় ‘গণ-সংস্কৃতি’ বলে ব্যঙ্গার্থে উল্লেখ করতে পারি। সামাজিক মাধ্যমের সর্বগ্রাসী প্রভাবে এর দাপট বেড়েছে। শিল্পীর স্বাধীনতার নামে রগরগে জিনিস বিকনোতেই এখন আগ্রহ অধিক।
কিন্তু অন্যপিঠে আবার, আজকের দিনের মতোই অতীতেও কি কখনও শৈল্পিক যৌনতার উপর বিকৃত পুলিশি-মানসিকতার অত্যাচার নেমে আসেনি? পোপ নবম পায়াসের উল্লেখ এখানে সবার প্রথমে আসবে। মাইকেলএ্যাঞ্জেলো-সহ বিশ্বখ্যাত ইতালিয় শিল্পীদের যে সমস্ত শ্বেতপাথরের ভাস্কর্য ভ্যাটিকান শহরের প্রাসাদ ও গির্জাগুলিতে চতুর্দিক উজ্জ্বল করে বিরাজমান, সবার প্রথমে পায়াসের নজর পড়েছিল সেই সব মূর্তিদের নিম্নাঙ্গে। সটান তিনি হুকুম দিয়েছিলেন, বাইবেল অনুসারে অবিলম্বে শ্বেতপাথরে অথবা প্লাস্টারে তৈরি নকল ডুমুর পাতা দিয়ে সেই সমস্ত পুরুষ মূর্তির উন্মোচিত লিঙ্গের অংশকে ঢেকে দিতে হবে। একথা সত্যি পবিত্র বাইবেলের বুক অব জেনেসিসেই উল্লেখ রয়েছে – আদিপাপের পরবর্তীতে নিজেদের নগ্নতার প্রতি লজ্জাবোধ জাগ্রত হলে পরে, আদম ও ইভ ডুমুরপাতা দিয়েই নিজেদের নগ্নতা নিবারণ করেন। এরই কারণে ভ্যাটিকান জুড়ে সমস্ত পুরুষ মূর্তির ক্ষেত্রে নকল ডুমুরপাতার সাহায্যে লিঙ্গ-গোপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মাইকেলএ্যাঞ্জেলোর অমর সৃষ্টি ‘ডেভিড’এর মূর্তিটিও এই নীতি-পুলিশির হাত থেকে রেহাই পায়নি। অথচ, নারীমূর্তিদের ক্ষেত্রে তাঁদের উন্মোচিত বক্ষস্থল ঢাকতে কি পায়াস একই রকমের কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? ইতিহাসে এখনও তার উল্লেখ মেলেনি। ভেনাস দি মেলো, অথবা আফ্রোদিতের ভাস্কর্যগুলি আজও সেই একই নগ্নতায়, একই সৌন্দর্যে শোভিত হয়ে বিরাজমান। নিষ্পাপ নগ্নতা সুন্দর। সুস্থ যৌনতাও তাই। যে কামকে আমরা রিপু বলে উল্লেখ করি, সেই কাম অনিয়ন্ত্রিত। অপরের সম্মতি-ব্যতীত যে যৌনতা বা কামের প্রকাশ, তাই আদতে অন্যায়। পক্ষান্তরে জৈবিক প্রবৃত্তি হিসেবে যে যৌনতার অস্তিত্ব, সার্বিক ভালোবাসার অঙ্গ হিসেবে যে কামের উদযাপন, তার প্রকাশ স্বাভাবিক, সহজাত, সুন্দর ও একই সঙ্গে তা আদতে এক গভীর ব্যক্তিগত আনন্দের অবসর।
[সুন্দর নগ্নতার যদি উদাহরণ চান, তাহলে বলব ‘নোম্যাডল্যাণ্ড’ – সেই চলচ্চিত্রের এক বিশেষ দৃশ্যে নায়িকা ফার্নের এক শীতল অথচ উচ্ছসিত কুমারী-ঝর্ণার জলে অবগাহনের ছবি দেখা যায়। সেই দৃশ্যে যৌন-উত্তেজনা জাগ্রত হয় না। বরং এক অপার, অশেষ শান্তির অনুভূতিই যেন বা জাগ্রত হয়ে ওঠে। তাই সে সুন্দর।]
আদতে বোধহয় সমাজ ও ধর্মই আমাদের যৌনতাকে বিকৃত বলে ভাবতে শিখিয়েছে, এবং তারই সঙ্গে রয়েছে প্রকট পৌরুষের প্রকাশ। যদি প্রশ্ন করি, বাইবেলেরই বুক অব জেনেসিস থেকে – জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেতে কেনই বা আদিপুরুষ ও আদিনারীকে বারণ করেছিলেন ঈশ্বর? জ্ঞানের প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণ কি তাহলে বাইবেল-বিরোধী? পরবর্তীতে, সেই ফল খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন পুরুষ ও নারীর মনে নিজেদের নগ্নতা সম্পর্কে বোধ জন্মালো, ও তারা লজ্জার অনুভূতি লাভ করল – তখন সেই ‘পাপ’এর শাস্তি হিসেবে ঈশ্বর নারীকে অভিশাপ দিলেন, শিশু-জন্মের সময় এই পাপের কারণেই তোমাকে অসীম যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ জ্ঞানের প্রথম ধাপ নগ্নতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া, এবং সেই সচেতনতা জাগ্রত হওয়া কারণেই গর্ভযন্ত্রণার অভিশাপ! ঈশ্বর কি তাহলে চেয়েছিলেন মানুষ নগ্ন ও জ্ঞানশূন্য হয়েই অবস্থান করুক? শরীর ও যৌনতা প্রসঙ্গে এক অদ্ভুৎ ধর্মীয় দ্বিচারিতার উদাহরণ!
সংস্কৃতিতে যৌনতা নিয়ে ধর্ম ও সমাজের অবাক করা রক্ষণশীলতা যেখানে, বাইবেলের রাজা জেমস সংস্করণ থেকেই বরং উদ্ধৃত করা যাক,
“How beautiful are thy feet with shoes, O prince's daughter!
The joints of thy thighs are like jewels,
The work of the hands of a cunning workman.
Thy navel is like a round goblet,
Which wanteth not liquor: Thy belly is like an heap of wheat Set about with lilies.
Thy two breasts are like two young roes That are twins.”
কে বলে ধর্মশাস্ত্রে যৌনতার উল্লেখ নেই? কে বলে ধর্মশাস্ত্রে নারী-সম্ভোগের কথা আসেনি? অথচ এই বর্ণনায় কিন্তু আমি কোনও আপত্তি দেখছি না।
প্রকৃতির যে প্রাকৃতিক-জৈবিক সত্যগুলি রয়েছে তাকে প্রকাশ করতে চাওয়াটা আমি অন্যায় বলে মনে করি না। কিন্তু আপত্তি আসে তার ব্যাখ্যাতেই। গির্জার বড়কর্তারা “ধমক দিয়ে বলেন, এ প্রেম রূপক-রূপে নিতে হবে, এ প্রেমের সঙ্গে মানব-মানবীর প্রেমের কোনও সম্পর্ক নেই – এ প্রেম নাকি ‘দি মিউচেল লাভ অব ক্রাইস্ট আন্ড হিজ চার্চ’ বর্ণনা করেছে। চার্চের বড়কর্তা স্বয়ং পোপ। এখানে আমি পোপের স্বার্থান্বেষী করাঙ্গুলি-সংকেত দেখতে পাই।” [উদ্ধৃতি সৌজন্যঃ ‘অবিশ্বাস্য’, সৈয়দ মুজতবা আলী, ১৯৪৩]
যা কিছু স্বাভাবিক, তাকে হুমকির মাধ্যমে অস্বাভাবিক করে রাখা হয় বলেই তা ‘বিতর্কিত’ হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে নারীকে পুরুষের সম্ভোগের বস্তুমাত্র হিসেবে বর্ণনা করে আসা হয়েছে। তাই সেই একতরফা যৌন-শোষণই বিকৃত যৌনতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌনতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগের উপকরণ, এমনকি বিবাদের ক্ষেত্রে শাস্তির মাধ্যম অবধি। দেবদাসী প্রথাকে সমর্থন জানিয়ে সেই বিষয়ক গৌরবান্বিত চিত্রাঙ্কন অথবা রাজবংশ-সম্ভূত পুরুষের একতরফা রতিক্রীড়া উদযাপনের বিবরণ, তাই যদি শিল্পের একমাত্র উপকরণ হয়ে দাঁড়ায়, তখনই আমি তাকে বিকৃত বলে চিহ্নিত করব। অথবা আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে একেকজন স্বনামখ্যাত বিরাট ব্যক্তিত্বের জীবনকে নিয়ে মিথ্যে কেচ্ছার বেসাতি খুলে বসা কোনও কোনও লেখকের একতরফা, পৌনঃপুনিক সাহিত্যসৃষ্টিকেও অপ্রয়োজনীয়, দূষণীয় বলে উল্লেখ করব। কিন্তু যে জৈবিক আচার সত্য, তাকে যদি সেই নির্দিষ্ট সম্মানের সঙ্গে চিত্রিত অথবা লিপিবদ্ধ করা হয়, তাহলে সেই প্রকাশের ক্ষেত্রেও কখনও কোনও অপরাধ দেখব না। শিল্প বা সংস্কৃতির প্রয়োজনেই যৌনতা। নিছক যৌনতা থেকে কখনও শিল্পের জন্ম হয় না। সৃষ্টির সময়ে শরীর ও মন দুয়েরই উদযাপন প্রয়োজন, এবং হয়তো বা মানবিক অংশটুকুই, শারীরিক অংশের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি গুরুত্বপূর্ণও বটে। আমি অন্তত সকল সময়ে এই সারসত্যকে বিশ্বাস করে এসেছি।
[সবশেষে ফুটনোটে বলতে চাইব, ভালো লাগা অথবা ভালোবাসার ক্ষেত্রেও যে প্ল্যাটোনিক অথবা শরীর-বর্জিত প্রেমের অস্তিত্ব সম্ভব, সেই অনুভূতি লাভের জন্যও দস্তয়েভস্কি অবধি যেতে হয়নি আমায়। ব্যক্তিগত পরিসরেই দেখেছি, এক মুহূর্তের আলিঙ্গনের সুখ সারা পৃথিবীর সমস্ত আনন্দের চেয়েও সময়ে সময়ে সত্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সত্যেও কখনও কোনও খাদের অস্তিত্ব দেখিনি। কাজেই স্বাভাবিক সমস্ত কিছুকেই সহজ ভাবে বরণ করে নিতে পারলে, তাই হয়ে ওঠে সার্থক শিল্পের সর্বাঙ্গসুন্দর উদযাপন। এটুকুই বিশ্বাস রেখে গেলাম।]