দোঁহা

ছাতাগিরির সালতামামি

 


দেবব্রত রায় 

অদ্ভুত লোকটাকে মশা-মাছির ভিন্ডুলের মতো ঘিরে ধরে একদঙ্গল ছেলেমেয়ে "অ্যানাকোন্ডা! অ্যানাকোন্ডা!"বলে হাততালি দিয়ে খ্যাপাচ্ছিল। তবুও লোকটার চোখ-মুখে পোয়াটেক হাসি যেন এঁটুলির মতো সেঁটেই আছে।                                  
অদ্ভুত বলতে, লোকটা ওর নিজের কোমরের সঙ্গে শক্ত করে প্যাঁচানো লম্বা একটা দড়ির একেবারে শেষমাথায় ভাঙাচোরা-শিক-ওপড়ানো একটা ছাতা বেঁধে রেখেছে! আর সেটাকে ছ্যাঁচড়াতে-ছ্যাঁচড়াতে নিয়েই সে পথ হাঁটছে। লোকটা বোধহয়, সামান্য দম নেওয়ার জন্যই একটা খোলামেলা জায়গা দেখে একটু দাঁড়াল।                                             
কয়েকটা বুড়ো-আধবুড়ো লোক ছেলেমেয়েগুলোকে চোখের ইশারায় রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ইট, পাথরের টুকরোগুলো দেখিয়ে হা-হা-হি-হি করে মজাকি মারছিল।  
লোকটা খোলা আকাশের দিকে কিছুক্ষণ  তাকিয়ে  থেকে পাখির পালকের মতোই রিনরিনে গলায় বলে উঠল, "আমাকে আপনারা তারকাটা বা, মেন্টাল-পেসেন্ট ভাবছেন কিন্তু, যদি এর ইতিহাস জানতেন! "বলেই, সে ছাতাটাকে দেখাল।তারপর কয়েক-সেকেন্ড সময় নিয়ে আবারও বলতে শুরু করল, "একসময় এই ছাতাটার আমি স্তাবক ছিলাম। এর কথা শুনেই আমি হাঁটতাম, বসতাম, উঠতাম, ঘুমাতাম এমনকী, বউকে ঠ্যাঙাতামও। আর সেই সুযোগে ছাতাটা  আমার ঘাড়ে চেপে বসেছিল। থুড়ি আমার ঘাড়ে পা দিয়ে মাথায় চেপে বসেছিল। ছাতাটা আমার ছোটোবেলা, আমার যৌবনবেলা, আমার ঘর-সংসার, বউ, ছেলে-মেয়ে সবকিছু খেয়ে একেবারে ফতুর করে ছেড়েছে! "লোকটা এসব কথাগুলো বলতে বলতে যেন একটু ঝিমিয়ে পড়েছিল। তারপর আবারও, সে বেশ ঝলমলে স্বরেই বলে উঠল, তবে, এখন আর নিজের মাথার উপর ছাতাগিরি আমি একদম পছন্দ করি না! তাই ছাতাটার এই দশা! এবার বলুন, এ-বিষয়ে আপনাদের মতামত কী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন