দোঁহা

কৌশিক সেনের কবিতা

 


 বীথিরানীর ত্রান

 ১.
অন্ধকারের ভিতর বীথিরানী একটা নৌকা দেখেছিল এক সন্ধ্যায়।

বেশ খানিকটা দূরে। কোলাহল।  ঝাপসা চোখে বোঝেনি পুরোটা।

শুনেছিল এক প্যাকেট আটা আর দু’কিলো চাল দিয়েছিল ওরা।

বহুরাত পর্যন্ত জেগে বসেছিল মাচায়। কেউ আসেনি।

সাতসকালে উঠেই ভেসে যাওয়া ধবলি আর মায়ের ব্রোঞ্জের

বাউটি জোড়ার শোকে হুহু কেঁদে উঠেছিল বীথিরানী।

 ২.
হেলিকপ্টার এসেছিল।  বাঁধ বরাবর ছুটে গিয়েছিল বীথিরানীর

ব্যাটা। সাত বছরের। মায়ের হাতে এক প্যাকেট মুড়ি আর

দুটো ভেলিগুড়ের ড্যালার সাথে এনে দিয়েছিল দুপ্যাকেট

স্যানিটারি প্যাডও।  শুধিয়েছিল, কী করে খেতে হয় মা!

ঠাস করে চড় মেরেছিল ব্যাটার গালে।  খেঁকিয়ে উঠেছিল,

একটু গুড়ো দুধ আনতে পারলিনা হারামজাদা!

 ঋতুরক্তে লাল হয়ে উঠেছিল বানের ঘোলা জল।

 ৩.
এক নেতাও এসেছিল একবার।  পিঠে হাত রেখে শুধিয়েছিল,

বল, কি কষ্ট তোমার!  শাড়ির জীর্ণ আঁচলটা উদোম গায়ে

টেনে নিয়েছিল বীথিরানী।  শূন্য চোখে তাকিয়েছিল সেই

নেতার পানে। ধীরে ধীরে বলেছিল, একখান তেরপল দিতি
পারেন বাবু!

 ৪.
ত্রাণশিবিরে উঠে যাওয়ার পর রোজ খেতে পেত বীথিরানী।

দু’বেলা দু’হাতা করে খিচুড়ি।  একহাতা সরিয়ে রাখত সে।
ব্যাটার জন্য। কাকে ঠুকরে যেত আঢাকা খাবার। চেটে যেত

পেটফোলা শিশুরা।

 পায়খানা করতে গিয়ে ব্যাটাকে সাপে কেটেছিল, একদিন।।

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন