দোঁহা

অর্ণব সামন্তের গুচ্ছ কবিতা

 


গীতবিতান

গীতবিতানের মতো চোখ রেখে আমি ফিরছি 
দখিনের ব্যালকনি খুলে রাখো 
দু'হাতে বিনুনি বাঁধো সামনে উথলে ওঠা ঢেউ, সমুদ্র 
নোনা গন্ধে ভেসে যাচ্ছে সোঁদামাটির আগুন 
তবু বৃষ্টিপাতের পরে চাষ হয় 
বীজ বোনে, ফসলে ফসলে একাকার 

ঠোঁটের আকুলতা হৃদয় আরশিতে 
দ্যাখে হৃদয়, এ সম্পদ হারাবার নয় 
কালের শেলফে তুলে রাখে সেই অপঠিত বই
পাতায় পাতায় যার রহস্য, আবিষ্কার 

চাঁদের কাজলে যদি সূর্যের তেজ পড়ে 
পরিবারের জন্ম হয় সৌর বা চান্দ্রিক 
স্বরবিতানের কোমল গান্ধারে বসে কেউ 
কেউ বা ঋষভে বসে টইটম্বুর রাশভারী 

ফসলের গান ছুটে যাচ্ছে ফল্গুস্রোতের মতো...


ওগো পাখি

ওগো পাখি খুব খুশি খুব ভোরে বকুল সুবাস নিয়ে উড়তে 
দুপুরে দু'দন্ড ছায়ায় জিরোনো নিকোনো উঠোনে‌ 
ডানা ভাঙত কেউ রাতে খুব ডানা জোরে জোরে 
ডানাকাটা পরী বসত দু'চোখে নিত্যনতুন স্বপ্ন নিয়ে 

ঝড় উঠত যখন তখন ভূমিকম্পও সেইসঙ্গে 
তখন একটি চাঁদ ঢলতো ভাবপ্রবণ অন্য চাঁদের গায় 
জ্যোৎস্না গড়াত খাদে, শিখরে শুধুই রোমাঞ্চ 
অকালবোধনে পদ্মগুলি ফুটে উঠত শরতের ডাঁটাতে 

পূর্ণ চাঁদ ঘুমোত তৃপ্তিতে দশটার তেজী সূর্য না ডাকা পর্যন্ত 
পাথর নবনী হত আদরে সোহাগে নম্রনত হয়ে 
ফুল ফুটত নয়নে নয়নে নক্ষত্রে ছায়াপথে গ্রহাণুপুঞ্জে 
দিবারাত্রি সাগরে টানতো সর্বনাশে হ্যামলিন বাঁশিওয়ালা 

ওগো পাখি ভালোই আছিস ভাঙা ঘরে গ্যালন গ্যালন জ্যোৎস্না নিয়ে 
ডাল সবজি দ্বিপদের সংসারে দ্বিপদ যাতে আত্মনির্ভর হয় 
চোখে রেখে রামধনু চাষবাস নিজ নীচু জমিতে 
ফসলের বন্যা এনে নদী যায় আপন সাগরে 

                                                                          
এই শরতের গল্পগাথা

শিশিরে সিক্ত পদ্ম যেমন বোহেমিয়ান 
ইনহিবিশন খুলে রাখে একে একে নির্বিকার 
শিউলি কখন ঝরে পড়ে উতল হাওয়ায় 
রোমাঞ্চ লাগে সেই নদীটির সুমোহনায় 

কাঁপতে কাঁপতে শীতের পরশ খুইয়ে দিয়ে 
উষ্ণ রচনা লেখে ঠোঁটে ঠোঁটে আদর ওমে 
ভাসতে ভাসতে বারদরিয়ায় সমর্পণে 
সুখের মধ্যে সুখ ডুবে যায় যেমন করে 

এই কুয়াশায় জীবন আভাস মৃত্যুহিম 
সমূহ পেরিয়ে আগুনে সেঁকার পদ্ধতিতে 
তুমিই শেখাও গাইতে অমল গানের সুর 
ছায়ার মতন পিছু নিয়ে আলো জ্বালাও আলো 

শরৎ কখন আসর জমায় সেই সুযোগে 
অকাল বোধন তীরন্দাজের পদ্মচোখে 
ফসল জোয়ার বইতে থাকার আকর্ষণে 
শেষ শিখরের সমান্তরালে নামতে থাকে 

এই তো আমার ভুবন, জীবন, এই বিদ্যা 
শরৎ নামায় উঠোনে আমার চিরকালীন 
পদ্মপাতায় জল সুস্থির জাদুর চোখে 
শিউলি ঝরানো সেই সকালের দ্রাঘিমাংশে 





                                                                           


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন