দোঁহা

স্বপন দা ও তেলেভাজা

 


আরাত্রিক ভদ্র 

স্বপন দা মানুষ টি খারাপ ছিলেন না। লেখক মানুষ, বামপন্থী বলে মনে করতেন নিজেকে। জ্যোতি বাবুর ভক্ত। শুধু কালীর উপাসনা করতেন, মাঝে মাঝে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা- ও তার সাথে বোধহয় মঙ্গলচণ্ডী, ভবতারিণী- ওই যা যা আছে আর কি। তিনি মনে প্রাণে ধনতন্ত্রেও যথেষ্ট বিশ্বাস করতেন, কাজেই বামপন্থী যে ঠিক কোন উপায়ে, তা নিয়ে তার আশেপাশের মানুষের মধ্যেও ঢের প্রশ্ন ছিল।
যাই হোক, এই গল্পটি একেবারেই তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে লেখা নয়। স্বপন দার এক প্রেমিকা ছিল- নাম ছিল মালা ভট্টাচার্য। (আসলে নাম ছিল মালা নস্কর, নিজের গল্পে ওই নস্কর পদবী টা ঠিক যাবেনা বলে, ওটা একটু চক্রবর্তী- ভট্টাচার্য করে নেবেন বলে ঠিক করেছেন স্বপন দা)। এই মালার সাথে মালা বদল করার সখ ছিল তার, কিন্তু বিয়ের কথা বলতেই মালা দিল চম্পট!
এই বিরহে বিলীন হয়ে স্বপন দা লেখা শুরু করবেন বলে ঠিক করলেন। অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি একে একে রবীন্দ্রনাথ, শঙ্খ ঘোষ, মাইকেল, শেক্সপিয়ার হয়ে বঙ্কিমে গিয়েও যখন খুশী হতে পারলেন না- তখন তিনি ঠিক করলেন পাড়ার এক পুরনো পাঠাগারে গিয়ে প্রেম- বিরহের ওপর লেখা পড়বেন। সেখানেও তিনি ঠিক খুশী হতে পারছেন না- ভারী মুশকিল!
এত তাবড় তাবড় লেখকের লেখা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না দেখে স্বয়ং ব্যাস দেব আর ব্রহ্মা দেব মুখ ঘুড়িয়ে বসলেন- প্রলয় প্রায় আসতে চায় সেই কারণে; এমন সময় হঠাৎ সেই কাণ্ড ঘটল!
সৃষ্টি রক্ষা করে খিদে পেল স্বপন দার। তেলেভাজা খেয়ে হাত মুছতে যাবেন ঠোঙায়; হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটি লেখা- সেই ঠোঙাতেই। ছাপার অক্ষরে, তেলে মাখানো সেই লেখা পড়ে তো তিনি মুগ্ধ! তার গল্পই যেন কেউ লিখে দিয়েছে- কি দারুন অনুপ্রেরণা!
এত সুন্দর লেখকও আছে পৃথিবীতে? বিশ্বাস করতে মন চায়না।
ওমা! মনে পড়ল স্বপন দার- এ তো তারই লেখা। তার প্রথম প্রেমিকা ছায়া যখন একই ভাবে তাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন সে একটা গল্প লেখে বটে- বিশেষ বিক্রি হয়নি; কয়েকটা মাত্র এডিশন। নিজের জমানো সব টাকাই চলে যায়।
এখন স্বপন দা “কনফিউজড”, তার অনুপ্রেরণা সঞ্চয়ে সে খুশী হবে, না তার লেখার এই অবস্থা দেখে হবে হতাশ।
ততক্ষণে তার লেখা ভালো ভাবেই তেলে- মারা পড়েছে। অগত্যা তিনি আরেকটা তেলেভাজার অর্ডার দিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন