দোঁহা

শিশির আজমের কবিতা

 

জবাকুসুম হেয়ার অয়েল

তখন আমি নবম শ্রেণি জ্যঁ পল সার্ত্রের নাম শুনেছি লেখা পড়িনি
সেসময় ভালবেসে ফেললাম জবাকে

ওর গায়ের রং কালো
চুলও কালো আর বাবা ওকে বাজার থেকে কিনে দেয়নি
হীরালালের জবাকুসুম হেয়ার অয়েল
আর ও দশম শ্রেণি
মানে ক্লাসে আমার এক বছরের সিনিয়র

আমি ভাল ছাত্র ছিলাম না
আর জবা ক্লাসের সেরা ছাত্রী

কিন্তু ওকে আমি ভালবাসতে গেলাম কেন
ও-ই বা কেন আমাকে ভালবেসে ফেললো সার্ত্রে না পড়ে

জবাকুসুম হেয়ার অয়েল কখনও মাথায় দেয়নি জবা
তো জবাকে আমি ভালবাসতাম
শ্রদ্ধাও করতাম
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ মুখস্ত না করেই
কেন না স্কুলে ও আমার এক বছরের সিনিয়র
আর কালো
আমার ভিতরের কালোর সাথে
মিল আছে
 

মুরাকামির বাঁদর 

মুরাকামির বাঁদরটাকে যদি কখনো দেখতে পান
আমাকে বলবেন
ওকে আমি খুঁজছি
চেনেন তো মুরাকামির বাঁদরটাকে
দেখতে আর দশটা বাঁদরের মতোই আর কি
তবে ওর চোখদুটোতে যেন এমন কিছু আছে যাতে দ্বিতীয়বার
ওর দিকে তাকাতে কেউ বাধ্য হবে
আর কথা বলে অবিকল মানুষের মতো
ভাবনা
রুচি
দুঃখবোধ
যেসব মানবিক গুণাবলীতে আমরা অভ্যস্ত
সেগুলো অনেকাংশে ও ধারণ করেছে
আর সেগুলো ওকে পৃথক করেছে বানরসমাজ থেকে
অথচ ট্র্যাজেডি হলো মানবসমাজেও ও সমাদরহীন
ও হ্যা
সত্যিই মুরাকামির কোন বাঁদর ছিল কি না আমি কিন্তু জানি না
 

মুঘল প্রাসাদে দুঃখকষ্ট

মুঘল হারেমে ছিলেন আমার মা
ওখানেই কেটেছে আমার শিশুকাল
সে হিসেবে আমি মুঘলদের ভালভাবে চিনি
ভারতবর্ষকে চিনি
আমাকেও চিনি কিছুটা
আমি সুখী
কিছুটা দুঃখীও
কিন্তু মুঘল রাজপুত্রগণ এত দুঃখী কেন
কে জানে
মায়ের হাত ধরে যখন আমি প্রাসাদ ত্যাগ করলাম
সমস্ত প্রাসাদ পুড়ছিল
আমি সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের আর্তচিৎকার
শুনতে পাচ্ছিলাম


চর্কি 

বেশ পাক খাওয়ালি
ভয়ভীতি সন্ধ্যাগীতি
এদিক সেদিক করে
একথা সেকথা বলে
অনেক ঘুরিয়েছিস
পরিবার ধর্ম রীতি
শনিবার সোমবার
এ-হয় না সে-হয় না
অনেক খেলিয়েছিস

আজ কিছু শুনবো না
আজ কিছু শুনবো না
আজ তোর একদিন
কি আমার একদিন


শুয়ে

আমি দাঁড়িয়ে আর মাছেরা শুয়ে আর্কিটেকচারাল হিংস্রতায়
প্রতিবার প্রতিসারিত আলোয় জান্তব নীরবতায়
গুনতে শুরু করি শূন্য থেকে
দুঃসাহসিক ভ্রমণে আমি ক্লান্ত আর ঘুমিয়ে পড়ি
মাছের ক্লান্তি নেই
উৎসাহ আছে
আমার ঘুমের ওপর ওদের শুয়ে পড়ায়
জলের কি মন খারাপ হয়



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন