আগন্তুক
বিষ্ণুপুর পথে। বিকেল ৩:২৪। ২ আগস্ট
পথের বামদিকে পড়ে আছে নদী হারা বালি।অগুনতি সকালের পরিশ্রম হয়ে আছড়েছে পিছু ফিরে ডাকা কথারা। যে কথারা কমণ্ডুলের কষে গেবে উঠেছে তামা রঙে, তাদের শরীরে অ্যাব্রিন ছুটছে। আস্তে আস্তে জমাট বাঁধছে ঘা। শুকনো আগুনের ঢলে যাকে আর্তনাদ ভাবি, কেনো তাকে নেশার অজুহাত নাম দাও। ওগুলো আসলে মনের কোণে জমে ওঠা নষ্ফল আত্মাহূতি। এখনো শিমুল ফুটবে ভুলের নিয়তি জুড়ে, এখনো পলাশ ফুটবে কুণ্ঠিত কান্নার বিনিদ্রতায়। তবু অভিজিৎ আর ফুটবে না কুঁকড়ে ওঠা আকাশের আর্তনাদে…
সুহাসিনী
বাড়িতে। চা হাতে। সকাল ৭:২৭। ৩ আগস্ট
যে পথটির ভালো থাকা নিয়ে ছটফট করতে গিয়ে নিজেকে বর্ষায় ভাসালে নদী, সে পথের সোঁদায় নির্লিপ্ত চোখ পাথরের চাটান। ফাঁক দিয়ে বয়ে চলে আগুনের ধারা। কমন্ডলুতে অনাবশ্যক তামাটে কষ জমিয়ে বসে উচাটন মন। কীভাবে লুকাবে নদী সুহাসিনী শরীরের শ্রম। পিছনে তাকানোর পর দেখো কালিন্দী বাঁধের জলে চিৎকারের কুলুকুল স্বর। পাথর, ঠোঁটের আর্তনাদে ঋতু এসে পরিশ্রান্ত দাঁড়িয়ে, এখন শুধু রক্তাক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা।
কত পথ মসৃণ নিদ্রার ভিতর সিঁধকাটা শুশ্রূষা চায়। নদী বলে, তোমার কবিতার অক্ষরে লিপিবদ্ধ হবো আমিই, আমাকে যেন অন্য কোনো অক্ষর না লেখে । তাই হোক মানবী কাব্যময়তা। মানুষ ছিন্ন করে যোগাযোগ। তবুও আমার কলমেই শব্দ হয়ে নির্ঝর লেখা থাকবে তোমার তপস্যি শ্রাবণের গন্ধকলা…
মন তো আমার ভেঙেছে
বিকাল ৫:৩৮। ন্যাশানাল মাঠ। ৪ আগস্ট
পাথর কখনো কষ্ট পায়নি। আস্বাসের ভেতর স্থবির থাকে বিশ্বাস। ওহে, নদী তুমি দুঃখের অছিলায় বহমান ছিলে। কখনো পাহাড়ের কাছে এসে ধির হও। জিরিয়ে নাও ক্লান্তি। আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে মনে হয় এবার আমার যাবার পালা। আঁচল তুলে নদী বলে, আমি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করতে চাইছি। আহা এই অবেলায়! বেলা শেষ হলেও, অনেক কষ্ট হাসির মহিমায় ভুলে থাকা যায়। পাহাড় তুমি কি ছেলেখেলায় মত্ত। নাকি হে পাঠক; ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভালোবাসাকে দুঃখ দিয়েছে প্রেমিকাই। যদিও নদী তুমি প্রেমিকা ছিলে না, আগল খোলা দুয়ার হয়েই, নাম দিয়েছ সহ্য। হে তপস্যা, তুমি মন ভাঙার আওয়াজ, সন্তর্পনে নিয়ে যাও ফল্গুধারার নীচে…
তিনটি কবিতা নাকি চিঠি বলি এই গদ্য গুচ্ছকে ! যে নামকরণ করি না কেন তিনটিই অসাধারণ। কেন জানিনা লেখাগুলো পড়ে ভীষণ রকম কষ্ট আঁকড়ে ধরছে ! হয়ত এখানেই কবির কলমের স্বার্থকতা।
উত্তরমুছুনসুহাসিনী কবিতাটি আমার ভীষণ পছন্দের ...নদী যখন বলে 'আমাকে যেন অন্য কোনো অক্ষর না লেখে তোমার কবিতার অক্ষরেই লিপিবদ্ধ হতে যেন পারি ' আর সেই ইচ্ছা তার পূরণ আজীবন যদিও যোগাযোগ ছিন্ন তবু তার নির্ঝর গন্ধকলা কলমের আঁচড়ে বহমান অবিরত !! ... কি অপূর্ব কবিতার ঈশ্বরীর প্রতি কবির একনিষ্ঠতা !! অভিভূত হলাম লেখতি পড়ে ।
আর শেষ কবিতায় -
"ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভালোবাসাকে দুঃখ দিয়েছে প্রেমিকাই" ... কি নির্মেদ উচ্চারণ কবির !